আনলিমিটেড ইন্টারনেট সেবা ও টেলিবাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিতের দাবি মুঠোফোনে গ্রাহক এসোসিয়েশনের

প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪

মোবাইল ইন্টারনেটের মেয়াদ আনলিমিটেড করা, কলরেট পুনর্বিবেচনা, মোবাইল ব্যাংকিং চার্জ কমানো ও গ্রাহক সুরক্ষায় টেলিযোগাযোগ সেবায় বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা না থাকায় টেলিসেবা কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো গ্রাহকের স্বার্থ পরিপন্থী ব্যবসা পরিচালনা করছে। বক্তারা এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করেন।

শনিবার বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক গণশুনানিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষায় আয়োজিত এই গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিইআরসির সাবেক সদস্য মুকুল ই-ইলাহী চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা সংস্কারে গ্রাহকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে গণশুনানির আয়োজন করা।

মানসম্পন্ন ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করে তিনি বলেন, সেটা হতে পারে ১৫ দিন, এক মাস কিংবা দুই মাস।

এসময় সংগঠনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালিদ আবু নাসের বলেন, টেলিযোগাযোগ সেবার ইকোসিস্টেমের প্রতিটি ধাপে ধাপে যে লুণ্ঠন হয় সেটি কমাতে পারলে এখনই প্রতিটি সেবার ১০ থেকে ১২ শতাংশ মূল্য কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার কথা বলা হলেও এ সেবায় বাজারে বাস্তবে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। নিয়ন্ত্রণ কমিশন এবং বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে গ্রাহকরা প্রত্যাশা করে।

এসময় সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত দেড় মাসে ইন্টারনেট ডাটা ও ভয়েস কলের মূল্য হঠাৎ কেন বৃদ্ধি পেল এর ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে চাই। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (বিকাশ) মেসেজের চার্জ হঠাৎ ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি কেন পেল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জবাব চাই।

মুঠোফোনে গ্রাহক এসোসিয়েশন সভাপতি আরও বলেন, দেশের শতভাগ গ্রাহকের দাবি আনলিমিটেড মেয়াদহীন ইন্টারনেট ডাটা। সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা, বিটিআরসি এবং অপারেটরগুলো এ বিষয়ে সম্মান প্রদর্শন না করলে আগামী দিনে ইন্টারনেট ডাটা বয়কটের মতো কঠিন কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করব।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্য নির্ধারণের জন্য কমিশনকে গণশুনানি করতে হবে।যেভাবে আমরা আজ উন্মুক্ত বিতর্কের আয়োজন করেছি, সেভাবে গ্রাহকদের মতামত নিয়ে টেলিযোগাযোগ সেবার সংস্কার করতে হবে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, বিগত সরকারের সময় মন্ত্রণালয় যেমন ছিলো এখনো তাই আছে। পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না।

গণশুনানিতে অংশ নিয়ে জলধার রক্ষা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ ইবনে রানা বলেন, ইন্টারনেট আর পানির মধ্যে এখন খুব একটা পার্থক্য নাই। পানি ছাড়া যেমন জীবন চলে না ইন্টারনেট ছাড়াও তেমন আর জীবনে চলে না। তাই ন্যায্য মূল্যে ইন্টারনেট প্রাপ্তির জন্য সকল উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

এসময় দৈনিক ঢাকা টাইমস পত্রিকার সিনিয়র সহসম্পাদক সাংবাদিক শাহনূর শাহীন বলেন, গত বছরের নভেম্বরে “মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কেন লাগামহীন” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন করেছিলাম। সেসময় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে না দেখা গেছে, সরকারি টেলি কোম্পানি টেলিটকের কলরেট এবং ইন্টারনেট সেবার বিপরীতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর চার্জ ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সেবা নেই বললেই চলে। কোথাও উপযুক্ত নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।

বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলালিংকের টাওয়ার সংখ্যা সবচেয়ে কম ৫০ হাজার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর বিপরীতে টেলিটকের সারাদেশে মাত্র ৫ হাজার টাওয়ার।

টেলিটকের নেটওয়ার্ক সেবা বৃদ্ধি না করার পেছনে কারণ কী এমন প্রশ্ন তুলে শাহনূর শাহীন বলেন, যেন বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা উচ্চ মূল্যের বেসরকারি কোম্পানির সেবা গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, টেলিটকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করলে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য তা চ্যালেঞ্জ হবে। বাজারে সুষম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। এবং এতে গ্রাহক টানতে তারা মূল্য কমাতে বাধ্য হবে।

এসময় বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে অনৈতিক সুবিধা দিতেই সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিটকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয় না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

টেলটকের একাধিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই সাংবাদিক বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সেবা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠালেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন হয় না। বর্তমান সরকার জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত হয়েছে। সুতরাং এই সরকারকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।

গণশুনানিতে বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার আরও অনেকেই নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। গ্রাহকরা কল ড্রপ, মিউট কল, ইন্টারনেটে ধীরগতি, টাকা কেটে রাখা, হঠাৎ করে টাকা উধাও হয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ গেলেই নেটওয়ার্ক না থাকা, মোবাইল ব্যাংকিং এর উচ্চ সার্ভিস চার্জসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন।

একাধিক বক্তা অপারেটরদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা ও সুবিধা কত তা প্রকাশের দাবি জানান।

এসময় আরওনবক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট অ্যাডডভোকেট মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির), ডাক্তার আমিনুল ইসলাম, শেখ ফরিদ প্রমুখ।

Comments