২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

বগুড়া আরডিএ’র সাবেক ডিজি মতিনসহ ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রকাশিত: ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০১৯

বগুড়া প্রতিনিধি: সরকারি প্রকল্পের ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এম এ মতিন সহ ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুদক বগুড়া জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ২ এপ্রিল মঙ্গলবার শেরপুর থানায় মামলা দায়ের করেছে।

এ মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর পল্লী জনপদ প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মাহমুদ হোসেন খান, ওই প্রকল্পের পরিচালক নজরুল ইসলাম, উপ-প্রকল্প পরিচালক আবিদ হোসেন মৃধা, দুই সহকারি প্রকল্প পরিচালক শেখ শাহরিয়ার ও আরিফ হোসেন জুয়েল এবং হিসাব রক্ষক রুনিয়া ইয়াসমিন।

মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে ‘পল্লী জনপদ’ নামে সমবায় ভিত্তিক সরকারি আবাসন প্রকল্পের জমি প্রকৃত দরের চেয়ে বেশি দামে কেনা দেখিয়ে সরকারের ২ কোটি ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামীদের তালিকায় এক নম্বরে থাকা এম এ মতিন কিছুদিন আগে পিআরএল-এ চলে গেছেন এবং দ্বিতীয় আসামী মাহমুদ হোসেন খান নির্ধারিত সময়ের আগেই চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন। অন্যরা এখনও কর্মরত।

বগুড়ার শেরপুর থানার ওসি হুমায়ূন কবির জানিয়েছেন, দুদকের করা মামলাটি দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী দুদক কর্মকর্তারাই মামলাটি তদন্ত করবেন।

আরডিএ’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ডিজি এম এ মতিনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনেরও অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এম এ মতিনকে তার সম্পদের বিবরণী দুদকে দাখিল করতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি তা করেন নি।

বসত-বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে যাতে ফসলি জমি নষ্ট না হয় সেজন্য গ্রাম পর্যায়ে সরকারিভাবে স্বল্প খরচে ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে ২০১৪ সালের ১ জুলাই ‘পল্লী জনপদ’ নামে একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়। দেশের ৭টি বিভাগের অধীন সাত জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বগুড়ায় অবস্থিত সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরডিএ-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

রাজশাহী বিভাগের জন্য বগুড়ায় আরডিএ কার্যালয়ের অদূরে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের জামালপুর মৌজায় ৩ দশমিক ৭৫ একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ওই প্রকল্পের জন্য জমি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়।

নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি প্রকল্পের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভুমি অধিগ্রহণ শাখার মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ অর্থাৎ কেনার কথা থাকলেও প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা মানেননি। বরং স্থানীয় কিছু মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৩০ জুন সম্পাদিত দলিলে প্রকৃত মূল্যের চাইতে দ্বিগুণের বেশি দাম দেখানো হয়। এভাবে আরডিএ’র মহাপরিচালকের (ডিজি) নামে জমি কিনতে গিয়ে সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

মামলার বাদী দুদকের বগুড়া কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি ওই প্রকল্পের জন্য বিধি অনুযায়ী জমি কেনার কথা থাকলেও আসামীরা তা মানেননি। নির্ধারিত দামের প্রায় দ্বিগুণ বেশি দামে তারা জমি কিনেছেন। এক্ষেত্রে তারা অবৈধভাবে জমির শ্রেণিও পরিবর্তন করেছেন। এমনকি ৩ দশমিক ৭৫ একর জায়গা কেনার কথা থাকলেও তারা ৫ দশমিক ৬৭ একর জমি কিনেছেন।

তিনি আরও জানান, অনুসন্ধানকালে জমি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কাছ থেকে প্রতি শতক জমি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দরে কেনা হলেও দলিলে তার দাম ১ লাখ ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বগুড়া জেলা প্রশাসককে ওই পরিমাণ জমির সরকারি অধিগ্রহণ মূল্য নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিলের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এরপর গত বছরের ৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয় তাতে পল্লী জনপদ প্রকল্পের জন্য কেনা ৫ দশমিক ৬৭ একর জমির অধিগ্রহণ মূল্য ৫ কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৩৯ টাকা ৫৩ পয়সা উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া বিধি মোতাবেক ২ শতাংশ আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত করলে মোট মূল্য দাঁড়ায় ৫ কোটি ৩৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৮ টাকা ৪২ পয়সা। অথচ আসামীরা তা কিনেছেন ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকায়। এর ফলে তারা সরকারের ২ কোটি ৫ লাখ ৬ হাজার ৯২২ টাকা আর্থিক ক্ষতি সাধন করে তা নিজেরাই আত্মসাৎ করেছেন।

/আরএ

Comments