বঙ্গবন্ধু টানেল: চোখের জলে বাপ-দাদার ভিটে ছাড়ছে ওরা!

প্রকাশিত: ১১:০৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেক কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের সংযোগ সড়কের অধিগ্রহণ নিয়ে দুই দিন ধরে আনোয়ারার বৈরাগ গ্রামে চলছে বাড়ি-ঘর হারানোর হাহাকার। ভূমি বা বাড়ি-ঘরের অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ না পেয়ে অনেকে শূন্য হাতে ছেড়ে গেছেন বাপ-দাদার ভিটে।

এদিকে গতকাল খলিফা পাড়ায় বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদের আগে মালামাল সরাতে গিয়ে ঘরের চালা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে মোহাম্মদ তানভির নামে এক শিশু। শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় বাবার সাথে ঘরের ছালার টিন খুলতে উঠেছিলো শিশুটি। অসাবধানবশত সেখান থেকে পড়ে তার হাত ভেঙ্গে যায় বলে জানা গেছে।

গতকাল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মাত্র ১১টি চেক বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার বিকাল থেকে উচ্ছেদ কাজ শুরু করা হয়। গতকাল দিনভর জেলা প্রশাসন ও টানেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ কাজ চালায়। বাড়িঘর ছেড়ে যেতে স্থানীয় অনেকে বিলাপ করে কেঁদেছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অধিগ্রহণকৃত জমি দখলে নেয়ার সময় গতকাল রোববারও উচ্ছেদকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয়দের বাকবিতন্ডা হয়। প্রতিবাদের মধ্যে আইন শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে বন্দর জেলে পাড়া থেকে বৈরাগ খলিফাপাড়া পর্যন্ত বসতঘর, গাছপালা ও স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে টানেল সড়কের অধিগ্রহণ কাজ চলতে থাকে।

এ সময় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বলেন, ক্ষতিপূরণের চেক রোববার থেকে বিতরণ করা হচ্ছে। যাদের মামলা রয়েছে তাদের স্থাপনার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবিষয়ে চিন্তার কারণ নেই। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে। কাউকে হয়রানি করা হবে না। হয়রানির অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন ভিন্ন কথা। স্থানীয় বৈরাগের বাসিন্দা গোলাম রহমান জানান, জেলা প্রশাসনের লোকের কথার সাথে কাজের কোন মিল নেই। বড় কর্মকর্তারা মিটিংয়ে এসে অনেক সুন্দর করে কথা বলেন। তাদের কথা শুনলে মনে হয়- আমাদের কোন সমস্যায় পড়তে হবে না। তারা সব সমাধান করে ফেলেছেন। পরবর্তীতে অফিসে গেলে আমাদের হয়রানির শেষ থাকে না। দালাল ছাড়া কোন কাজ হচ্ছে না। ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা পাইনি। বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের বসতভিটা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছি।

হাছিনা আক্তার (৭০) জানান, আমাদের পক্ষে কথা বলার জন্য দেশে কোনো লোক নেই। আমাদের ইজ্জতের কোনো দাম নেই। যুবতী বউ, মেয়ে, নাতি-নাতনি, অসুস্থ ও ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে কোথায় যাবো আমরা দেখার কেউ নেই!

বন্দর এলাকার ছিদ্দিক আহমদ চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা নুর জাহান, নুর আয়েশা, হাছিনা আক্তার, আনোয়ারা বেগম, আলমাছ খাতুনসহ অনেক মহিলাকে বাড়ির উঠানে আহাজারি করতে দেখা যায়। তাঁরা আক্ষেপ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো সবার কল্যাণে কাজ করছেন। এভাবে ক্ষতিপূরণ ছাড়া আমাদের তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, আমাদের কান্নার খবর কি তাঁর কাছে যায় না ? সরকার যদি রোহিঙ্গাদের জন্য এত কিছু করতে পারে, আমরা এ দেশের নাগরিক হয়ে কি তাদের চেয়ে খারাপ হয়ে গেলাম?’।

/আরএ

Comments