খুলনায় মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ নগরবাসী

প্রকাশিত: ৭:৪২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৯

শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা প্রতিনিধি: দিনে মশা, রাতেও মশা।মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। কোথাও এক মিনিটও নিরাপদে বসা যাচ্ছে না। আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন খুলনা মহানগরের মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা মাসুদুল আলম।

তিনি বলেন, মশার উৎপাত এতোটাই বেশি যে, দরজা-জানালা খুলে রাখার উপায় নেই। মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের তৎপরতায় খুশি নন তিনি।

তার অভিযোগ, মশা যেভাবে বাড়ছে, সেই অনুপাতে সিটি করপোরেশনের কোনো তৎপরতা নেই।

বসুপাড়া বাঁশতলার বি কে ক্রস রোডের বাসিন্দা কলেজশিক্ষার্থী শেখ শিহাবুল আলম বলেন, মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। দীর্ঘদিন সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম এলাকায় না থাকায় দিন দিন মশা এতোটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে যে, ঘরোয়াভাবে তাদের দমানোর কোনো ফর্মুলাই কাজে আসছে না। নগরবাসী অসহায়ের মতো মশাদের খাবারে পরিণত হচ্ছে।

ইসলামপুর রোডের ব্যবসায়ী শামীম জানান, এতো মশা নগরে আগে কখনও দেখেননি। অ্যারোসল, ইলেকট্রিক ব্যাট, কয়েলে এখন আর কাজ হচ্ছে না। মশা নিধনে এখন দরকার সিটি কর্পোরেশনের ফগার মেশিনের ধোঁয়া।

তিনি বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতে এতো মশা যে, দুপুরের পর থেকে ঘরে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। তাতেও ঠিকমতো মশা যায় না। আগে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ধোঁয়া ও মশার ওষুধ ছড়ানো হতো। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তা বন্ধ আছে।

ইকবাল নগর মসজিদ রোডের মেসের বাসিন্দা সুমন দাস বলেন, আমরা নিচতলায় মেসে থাকি। দিনে কিংবা রাত মশার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি না।

মৌলভীপাড়া, রায়পাড়ার মেসের ছাত্রদেরও একই অভিযোগ।

রায় পাড়ার মেসের রফিকউদ্দিন বলেন, সিটি করপোরেশন এখন ফুটপাত উদ্ধারে ব্যস্ত। মশা নিধনের কথা হয়তো ভুলে গেছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরাও মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ। ক্যাম্পাসের হলরুমসহ সর্বত্রই মশার উপদ্রব।

বিভিন্ন হলের আশপাশের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার ফলে সেখানে মশা জন্মাচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নালা, ডোবাগুলো নোংরা পানি দ্বারা ভর্তি থাকায় এবং সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে সেখানে মশা জন্ম নিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

খুবি শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, মশার উৎপাত ক্যাম্পাসে নতুন নয়। তবে এ বছরের ঘটনা, হার মানিয়েছে আগের সব উদাহরণকে। দিনে-দুপুরেও মশা তাড়াতে হলগুলোতে কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। অসহায়ের মতো মশাদের খাবারে পরিণত হচ্ছি আমরা।

বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের খুলনা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি মো. হেলাল হোসেন বলেন, মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী, এখন দিনের বেলাতেও মশার কামড় সহ্য করতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা বেশি কষ্টে আছে। শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় পড়তে বসলে মশার যন্ত্রনায় পড়তে পারছে না। মশার কয়েল জ্বালিয়ে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ কয়েল জ্বালিয়ে রাখলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন আন্দোলনের মহাসচিব জিএম সজীব মোল্লা বলেন, সিটি করপোরেশনের কাছে নগরবাসীর দাবি, অতি দ্রুত মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার। প্রতিটি ওয়ার্ডে ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধন করা এবং ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা।

খুলনা সিটি করপোরেশনের কনজারভেন্সী অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, এখন সিজন চেঞ্জ হচ্ছে বলে একটু মশা বাড়ছে। তবে আমরা মশা নিধনের জন্য লারবি সাইড, এডালটি সাইড আর লাইট ডিজেল অয়েল বা কালো তেল এই তিনটা এখন দেবো। একটি সিডিউল তৈরি করছি। আমরা ত্রিমুখীভাবে মশা নিধনের জন্য এগুলো দেবো। আমরা এক সপ্তাহে লারবি দেবো। পরের সপ্তাহে ফগার এভাবে ত্রিমুখী দেবো। আমরাও আমলে নিয়েছি মশা এখন বাড়ছে, আমাদের ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে। এটা আগামী সপ্তাহে আশা করি শুরু করবো।
বিআইজে/

Comments