খুলনায় হঠাৎ করেই বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম

প্রকাশিত: ৭:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০১৯

খুলনা প্রতিনিধি: খুলনার বাজারে হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম। আকাশ ছোঁয়া দামে অস্থিরতা বেড়েছে মাছ, মাংস ও সবজির বাজারে। সপ্তাহ ধরে নিত্যপণ্যের দামে ভোক্তার অস্থিরতা কমছে না।

দেশি পেঁয়াজ, ব্রয়লার ও দেশি মুরগি, ডিম, গরু ও খাশির মাংস, মাছ, সবজিসহ বেশির ভাগ পণ্যের দামই বেড়েছে। খুলনা মহানগরীর বড় বাজার, নতুন বাজার, ময়লাপোতার সন্ধ্যা বাজার, গল্লামারী বাজার, নিউ মার্কেটের কাঁচা বাজার, খালিশপুরের চিত্রালি বাজার ও দৌলতপুরের বাজার ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ পন্যের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।

এক সপ্তাহ আগে পেয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে কেজি বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দামে বেড়ে ৩০ টাকায় উঠেছে। যদিও এখন দেশি পেঁয়াজের মৌসুম চলছে।

মাসখানেক ধরে অস্থিরতা মুরগির বাজারে। ব্রয়লার মুরগি তিন ধাপে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে। অথচ এই মুরগি এ বছরের শুরুতেও ছিল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি। মাসখানেক আগে অবশ্য বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি দরে। পাকিস্তানি কক হিসেবে পরিচিত ছোট আকারের মুরগি এক মাস আগে ২০০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন এই মুরগি কিনতে কমপক্ষে ২৫০ টাকা লাগছে। লেয়ার মুরগীর দাম বেড়ে ২০০ টাকা, দেশী মুরগির দাম বেড়ে ৪২০ টাকা ও সোনালী মুরগির দাম বেড়ে ২৪০ টাকায় দাড়িয়েছে। অথচ ১৫ দিন আগে লেয়ার মুরগী ১৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৯০ টাকা ও সোনালী মুরগি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

গরুর মাংস কিনতে গেলেও করতে হবে বাড়তি খরচ। প্রতি কেজি গরুর মাংস এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে। যদিও বছরের শুরুর দিকে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

মুরগির বদলে কেউ যদি মাছ খাওয়ার চিন্তা করেন তবে সেখানেও তাকে বাড়তি খরচ করতে হবে। বেশির ভাগ মাছের দামই এখন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। অথচ বাজারে মাছের সরবরাহে কোনো ঘাটতি রয়েছে বলে জানা যায়নি। খোদ বিক্রেতারাও বলছে না যে বাজারে মাছের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে।

ময়লা পোতার মাছ বিক্রেতা শুকুর হোসেন বলেন, ‘মাছের সরবরাহে সমস্যা নেই। তবে পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যে কারণে আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করি।’

ছোট ও মাঝারি আকারের প্রতি কেজি টেংরা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫৫০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এক কেজি বা তারও একটু বেশি ওজনের রুই মাছ ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বছরের শুরুতে। তবে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে। মলা, পুঁটি মাছের কেজিও বাজারভেদে এখন ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া তেলাপিয়া ১২০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা, কাতলা ২০০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ টাকা, ভেটকি ৬০০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫০ টাকা, কৈ ২৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ২০০ টাকা, সিলভার কাপ ১৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ১১৫ টাকা, কাইন মাগুর ৮০০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০০ টাকা, রেখা মাছ ১৮০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা ও টেংরা ৭০০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাড়তি দামের কথা চিন্তা করে কেউ যদি শুধু ডিম কিনতে যান সেখানেও একেবারে সস্তায় পাওয়ার সুযোগ নেই। ব্রয়লার মুরগির ডিম হালিপ্রতি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়, যা এ বছরের শুরুতে ছিল ৩০ বা ৩২ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের এ সময়ে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ২৪ থেকে ২৬ টাকা দরে। যদিও সেটা উৎপাদন খরচের চেয়েও কম বলে দাবি উৎপাদকদের। ডিম ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। এ কারণে দাম বাড়তি।

এখানেই শেষ নয়! কেউ যখন মাছ, মাংস বা ডিম কিনে প্রয়োজনীয় সবজি কিনতে যাবে তখন আরেক দফা মন খারাপ হবেই হবে। কারণ সবজি মানেই এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। মৌসুম সবজি সজিনা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা যদিও কিছুদিন আগে দাম ছিল ৬০ টাকা। এছাড়াও বরবটি ১০০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫ টাকা, লালশাক ৩০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ২০ টাকা, শশা ৪০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা, লাউ ৪৫ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা (খুশি) ৬০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা, পটল ৮০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা, করলা ১০০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ টাকা, টমেটো ২৪ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫ টাকা, সাদাশাক ৮০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা, ডাটাশাক ৩০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা, শিম ৬০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৩০০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ২০০ বা ২০৫ টাকা, গাজর ২০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়িদের সাথে কথা বলে জানা গেল, বসন্তের শেষে সবজি বাজারে দাম কিছুটা বেশি থাকে। শীত কালিন সবজির শেষাংশ দিয়ে এখনও বাজার চলছে। কিছু দিন পরে বাজারে গ্রীস্মকালিন নতুন ফসল আসবে তখন বাজার ভোক্তাদের স্বস্তি দেবে।

গল্লামারীর সবজি ব্যবসায়ী দোলওয়ার হোসেন বলেন, আমি গ্রাম থেকে কাঁচামাল এনে বাজারে বিক্রি করি। এখন গ্রামে তেমন কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না তাই পাইকারি বাজার থেকে মাল আনছি। এতে খরচ কিছুটা বেশি হচ্ছে। তাই মালামাল একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

নতুন বাজারের এক ক্রেতা বলেন, বাজার দাম নিয়ে তিনি অতিষ্ট। সল্প বেতন চাকরিজীবী হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার নিয়ে তিনি বিপদে রয়েছেন।

তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা, তারা বলছেন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাজারে পন্যের অগুন দাম লেগেছে। নির্বাচনী হওয়া কেটে গেলে বাজার আবার নিয়ন্ত্রনে আসবে।

/আরএ

Comments