চোখের জলে বিদায়, থেমে গেলো মেঘলার স্বপ্ন

প্রকাশিত: ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯

যশোর প্রতিনিধি: তোমার মেঘলাকে সবাই শেষ ঠিকানায় রেখে আসলো। সারা জীবনের জন্য ঘুমিয়ে আছে। আর কখনো জাগবেনা। তোমার কাছে বাহানা ধরে বলবেনা আব্বু তিন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে। বেশি বেশি টাকা পাঠাবেন। এখন ফোন করে প্রথমে কার সাথে কথা বলতে চাইবে। তুমিতো ফোন করেই বলতে আগে আমার মেঘলার কাছে দাও। তারপর তোমাদের সাথে কথা বলছি। আমার সোনা আর নেই। সোনার জন্য আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। অন্তরটা জ্বলে যাচ্ছে। তুমি কিছু বলো… আমি সহ্য করতে পারছিনা।

খুলনার চুকনগরে পিকনিকের বাস উল্টে নিহত যশোর সদর উপজেলার উপজেলার চুড়ামনকাটির শ্যামনগর বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির ছাত্রী সানজিদা আক্তার মেঘলার মঙ্গলবার সকালে দাফন সম্পন্নের পর প্রবাসী স্বামীর সাথে কাঁদতে কাঁদতে মুঠোফোনে কথাগুলো বলছিলেন সন্তানহারা ববিতা খাতুন।

তিনি আরো বলছিলেন, পিকনিকে উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে নিজে তাকে গোসল করিয়ে দিয়েছি। নতুন জামা পরিয়ে সাজিয়ে দিয়েছি। খুশি মনে হাসতে হাসতে বের হয়ে আমার মেঘলা জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলোনা।

মেঘলার স্বপ্ন ছিলো ব্যাংক কর্মকর্তা হবে। এজন্য বানিজ্যিক বিভাগ নিয়ে লেখাপড়া করছে। কিন্তু তোমার মেয়ের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলোনা। আমাদেরকে রেখে চলে গেলো চিরদিনের জন্য। এসময় যেন বাকরুদ্ধ ছিলেন মেঘলার পিতা সদর আলী ওরফে সদো। মুঠোফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে শুধু শোনা যাচ্ছিলো কাঁন্নার আওয়াজ। এসময় সেখানে উপস্থিত আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসী চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। কাঁদতে থাকে মেঘলার সহপাঠিরাও।

সোমবার রাত ১০ টার দিকে স্কুল ছাত্রী মেঘলার মরদেহ যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির বেলতলা গ্রামস্থ বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পরই কয়েক গ্রামের নারী পুরুষ ভিড় জমাতে থাকে ওই বাড়িতে। অনেকে রাত জেগে থেকেছে মেঘলার মরদেহের পাশে।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় বেলেরমাঠ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজার নামায শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানাযায় উপস্থিত ছিলেন জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল মুজিদ, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন, চুড়ামনকাটি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি দাউদ হোসেনসহ এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ এলাকার গন্যমান্যরা। মেঘলার মরদেহ কবর স্থানে গিয়ে যাওয়ার সময় আত্মীয় স্বজনের পাশাপাশি ও সহপাঠিরা একে অপরকে জড়িয়ে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

সদাহাস্যজ্জল মেঘলার মৃত্যু তারা অনেক কষ্ট পাচ্ছে। সহপাঠিরা বলেছে, চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই এই দূর্ঘটনাটি ঘটেছে। নিহতের মা ববিতা খাতুন জানান, তার তিনটি মেয়ে। মেঘলা ছিলো সবার বড়। ছেলে সন্তান না থাকায় ওই মেয়েকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিলো। বোন হারানোর শোকে কাতর হয়ে পড়েছে বৃষ্টি (১০) ও সালিমা (৫)। এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, মেঘলা অত্যন্ত ভদ্র মেয়ে ছিলো। সবার সাথেই হেসে কথা বলতো । তার মৃত্যুতে এলাকাবাসী শোকাহত।

উল্লেখ্য, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের শ্যামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফরের একটি বাস সোমবার খুলনার চুকনগরের চাকুন্দিয়া মাদ্রাসার সামনে উল্টে গিয়ে পুকুরে পড়লে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা আক্তার মেঘলা ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ ঘটনায় এবং তার ২৫ জন আহত হয়। খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

/আইকে

Comments