কালনাঘাটের তিনটি ফেরির দুটিই বিকল; পারাপারে চরম ভোগান্তি! নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৫:৫২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০১৯ উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দুরর্ভোগের আরেক নাম নড়াইলের কালনাঘাট। ঘটের তিনটি ফেরির মধ্যে দুটি ফেরিই বিকল। মধুমতী নদীর কালনা ফেরিঘাটের পশ্চিমপারে নড়াইলের লোহাগড়া ও পূর্বে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ ফেরিঘাটে চলাচলকারী তিনটি ফেরির মধ্যে বর্তমানে দুটিই বিকল। এছাড়া যে একটি ফেরি চলাচল করে, সেটাও অনেক ছোট, অবস্থাও বেহাল। তাতে মাত্র সাত থেকে আটটি গাড়ি একবারে নদী পার হতে পারে। এজন্য নদীর দুই পারে সবসময় লেগে থাকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। জানা গেছে, কালনা ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন ঢাকার সঙ্গে বেনাপোল, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ নওয়াপাড়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ যাতায়াত করে। সড়কপথে নড়াইল-কালনা হয়ে ঢাকার দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার কম। এজন্য খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, যশোর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘাটে একসময় তিনটি ফেরি চলাচল করতো। একটি ইউটিলিটি টাইপ-১-এর ১৬ নম্বর ফেরি। এটি আকারে ছোট, এতে সাত থেকে আটটি গাড়ি একবারে পার করা যায়। অন্যটি ইউটিলিটি টাইপ-১-এর ৪ নম্বর ফেরি। এটি বড়, একবারে ১৬ থেকে ১৭টি গাড়ি পারাপার করা যায়। এ ফেরিটি ১৫ দিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। আরেকটি ইউটিলিটি টাইপ-১-এর ৫ নম্বর ফেরি। সেটি এক বছর আগে মেরামতের জন্য ঢাকায় নেয়া হয়েছিলো। যেটি এখনো ফেরেনি। সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে কালনা ফেরিঘাটে ১৬ নম্বর ফেরিটি সচল রয়েছে। সেটার অবস্থাও জরাজীর্ণ। ফেরির তলদেশে অসংখ্য ছিদ্র। এসব ছিদ্র দিয়ে পানি ওঠে। এ ফেরিতে সাত থেকে আটটি গাড়ি ধরে। তাই অসংখ্য যাত্রীবাহী গাড়ি, পণ্যবোঝাই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও অন্যান্য যানবাহন উভয় পাড়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে। ৪ নম্বর ফেরিটি ঝালাই করে মেরামতের কাজ চলছে ঘাটেই। এটির পাটাতন পুরোটাই জোড়াতালি দেয়া। এসব ফেরিতে পারাপারের সময়ে আতঙ্কে থাকেন যাত্রী ও চালকরা। ২০১৪ সালের ১৮ জুন গভীর রাতে এ ধরনের জরাজীর্ণ একটি ফেরি কয়েকটি গাড়ি নিয়ে পানিতে ডুবে যায়। ওই সময় ফেরিতে যাত্রীবাহী বাস ও যাত্রী ছিল না। যাত্রী থাকলে প্রাণহানি ঘটতে পারতো। নড়াইল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ খান জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ঢাকা থেকে ঘরে ফিরতে দুর্ভোগের আরেক নাম নড়াইলের কালনাঘাট। এ সড়ক দিয়ে কম সময়ে ঢাকায় যাওয়া যায়। এজন্য সবসময় গাড়ির চাপ থাকে। অথচ এ ঘাটেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। ট্রাকচালক আব্দুল্লাহ জানান, যশোর থেকে গোপালগঞ্জ যাবেন তিনি। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে ঘাটে আটকে আছেন। এ ঘাটে আরো দুটি ফেরি চলাচল করলে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগে পড়তে হতো না বলে মনে করেন তিনি। ফেরির ইজারাদার মঞ্জুরুল হাসান জানান, ১৯৮৬ সালে নির্মাণ করা এসব ফেরির পাটাতন সেকালের। পুরো পাটাতন ফেটে গেছে। যেখানে ফাটে, সেখানে জোড়াতালি দেয়া হয়। এভাবে এখন পুরো ফেরির পাটাতন জোড়াতালি দেয়া। তাই বৃষ্টি হলেই পাটাতন দিয়ে পানি ঢোকে। তিনি বলেন, পুরনো হওয়ায় ফেরিগুলোর তলদেশে অসংখ্য ছিদ্র হয়েছে। এসব ছিদ্র দিয়ে পানি ঢোকে। ১০ টনের বেশি ওজনের ট্রাক এ পাটাতন সইতে পারে না। বর্তমানে অধিকাংশ ট্রাক ৩০-৪০ টনের ওপরে। এছাড়া বড় বড় কাভার্ড ভ্যান চলে নিয়মিত। তিনি বলেন, এ ঘাটে নতুন তিনটি ফেরি দরকার। ফেরির জন্য অনেকবার কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সওজ ফরিদপুর অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ফেরি) মাসুদ হাসান চলতি সপ্তাহে ঘাটের দুর্ভোগের এ চিত্র পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। এ সময় তিনি বলেছিলেন, এ ঘাটে যাত্রী ও চালকদের খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নতুন ফেরির জন্য লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। /আরএ Comments SHARES সারাদেশ বিষয়: