যশোর আড়াইশ বেড হাসপাতালে ময়নাতদন্তের অনিয়ম ও অবহেলা নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১১:১১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০১৯ বিল্লাল হোসেন: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে ময়নাদন্তের প্রতি চিকিৎসকদের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের কাগজপত্র সকালে জমা দিলেও চিকিৎসক ঠিকমতো আসেন না। স্বজনরা ময়নাতদন্তের লাশ নিতে এসে বসে থাকেন ঘন্টার পর ঘন্টা। প্রতিদিন এভাবেই তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছেন এলাকাবাসী। গত মঙ্গলবার দুপুরে ভোগান্তির শিকার মানুষ মর্গের সামনে বিক্ষোভ করে। ভুক্তভোগীদের ক্ষিপ্ততায় এ সময়পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হাসপাতাল প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত লাশের ময়না তদন্তের নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য ময়নাতদন্তের কাজে মর্গে দায়িত্ব ভাগ করা আছে মোট ৬ জন চিকিৎসকের। তারা হলেন, ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা.বাবলু কিশোর, ডা. সালেহীন কবির, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রশিদ, ডা. কাজল মল্লিক, ডা. শফিউল্লাহ সবুজ ও তারেক শামস। সরেজমিনে দেখা গেছে, নিয়ম না মেনে দুপুর ২টা পর মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন চিকিৎসক। বিকেল ৪টার পর কোন লাশের ময়নাতদন্ত করা হয় না। সোমবার সন্ধ্যায় ধর্মতলা থেকে উদ্ধার শিশু স্কুল ছাত্রী তৃষার মরদেহ। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। কিন্তু পরের দিন মঙ্গলবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত লাশের ময়নাতদন্তের জন্য কোনো চিকিৎসক আসেননি। ঘটনাটি আলোচিত হওয়ায় এদিন পর সকাল থেকে মর্গের সামনে লাশের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন শত শত নারী পুরুষ। এতে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করে। পরে আড়াইটার দিকে লাশের ময়নাতদন্ত হয়। গত ৬ মার্চ বিকেল বিকেল ৪ টার দিকে যশোর সদর উপজেলার দাইতলা এলাকায় প্রাইভেটকারের সাথে ইট ভাঙ্গা গাড়ির সংঘর্ষে ঢালাই শ্রমিক হাফিজুর রহমান (৩৩) নিহত হন। বিকেলে ৫টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের লাশ উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরের দিন সকাল ১০টার দিকে পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে সুরতহাল প্রতিবেদন জমা দিলেও দুপুর ২টার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। লাশ নিতে আসা লোকজন চিকিৎসকের এই অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার (টেলিফোন অপারেটর) আসলাম হোসেন বাড়ি চলে যান দুপুর আড়াইটার পর। এ সময় লাশের কাগজপত্র জমা দেয়ার জন্য পুলিশ আসলামকে খুঁজে পান না। সময় থাকা সত্ত্বেও ওই লাশের ময়নাতদন্ত হয় পরের দিন। অথচ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আসলাম তার অফিস কক্ষে বসে লাশের কাগজপত্র জমা নেবেন। ৫টার মধ্যে শেষ হবে লাশের ময়নাতদন্ত কাজ। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম লিটু জানান, লাশের ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি অবগত হয়েছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকেরা শুধু ময়নাতদন্তের কাজ করে না। তাদের একাডেমিক দায়িত্ব পালন ও ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিতে হয়। মেডিকেল কলেজ থেকে হাসপাতাল মর্গ অনেকটা দুর হওয়ায় তারা অফিস শেষ করে এসে তার পর লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তাছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসকরা সব সময় জরুরি বিভাগে ব্যস্ত থাকেন। তাই অন্য শিফটের চিকিৎসক না আসা পর্যন্ত তারা সময়মতো লাশের ময়নাতদন্তে যেতে পারেননা। তিনি বলেন, তারপরেও পুলিশ লাশের সুরতহাল ( বর্তমান অবস্থা) রিপোর্ট দিতে কিছুটা অবহেলা করে। চিকিৎসকদের বাড়তি দায়িত্ব আর পুলিশের অবহেলায় ময়নাতদন্তের লাশের অপেক্ষায় পরিবারের সদস্যদের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। তবে আলোচিত কারো লাশ আসলে সেটি তাৎক্ষণিক দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ময়নাতদন্তের এই অবহেলা দূর করতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান । এফএফ Comments SHARES সারাদেশ বিষয়: