যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল

রোগীর অস্ত্রোপাচারে সুইপার, রেফার্ড করেছেন ইন্টার্নি চিকিৎসক!

প্রকাশিত: ১০:১৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে রোগীর জটিল অস্ত্রোপচারও করছেন সুইপার ও এম এল এস এস।

মঙ্গলবার এমন একটি ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ওই সুইপার ও এম এল এস এস ব্যাপক সমালোচিত হন। এদিকে, আবার রোগীর আশংকাজনক অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের দেখা মিলছে না। ফলে দায় এড়াতে ইন্টার্নরা রোগীকে রেফার্ড করে দিচ্ছেন।

দীর্ঘদিন ধরে এখানে রোগীর চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারে এই ধরণের নানা অনিয়ম চলে আসলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিরব রয়েছেন। তারা জেনেও অজ্ঞাত কারণে না জানার ভান করেন এমনটিই মনে করছে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে মাথায় প্রচন্ড আঘাত অবস্থায় স্বজনরা শিশু পাপনকে (৬) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনেন। সেখানে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার আহমেদ তারেক শামস তাকে ভর্তি করে ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন।

রোগীর স্বজনরা জানান, ফ্যানের পাখার আঘাতে তার মাথায় জখম হয়েছে। গভীর ক্ষত হওয়ায় মাথা দিয়ে অনগল রক্ত ঝরছিলো। পাপন যশোর শহরের পোস্ট অফিস পাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী ওই রোগীকে ওয়ার্ডে নেয়ার পর তার চিকিৎসাসেবা প্রদান করবেন শিশু সার্জারী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক। প্রয়োজন হলেই তারাই অস্ত্রোপচার করবেন। এর বাইরে কেউ চিকিৎসাসেবা ও রোগীর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

তবে বাস্তব চিত্র ছিলো ভিন্ন। ওই শিশুকে ওয়ার্ডে আনার পর জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারের ব্যবস্থাপত্র কেটে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক নতুন করে ওষুধ লিখে দেন। শিশু সার্জারীতে দায়িত্বরত ডা.মাসফিকুর রহমান স্বপন রোগীকে দেখতে আসেননি। ক্ষত স্থানে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় পরে তাকে নেয়া হয় অস্ত্রোপচার কক্ষে।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে ওই শিশু রোগীর মাথায় অস্ত্রোপচার করেন সুইপার কৃষ্ণ ও এম এল এস এস মনির হোসেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই দুই কর্মচারী ব্যাপক সমালোচিত হন।

প্রশ্ন উঠছে, চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে অস্ত্রোপচার করায় ওই শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ওই সুইপার ও এম এল এস এস কিভাবে জবাবদিহিতা করতেন।

অস্ত্রোপচার কক্ষে দায়িত্বরত একজন কর্মচারি জানান, সামান্য অর্থের জন্য কৃষ্ণ ও মনিরের মতো অস্ত্রোপচার কক্ষে দায়িত্বরত অনেকেই চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে রোগীর অস্ত্রোপচার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদিন শিশু সার্জারী বিভাগে দায়িত্বরত ডা. মাসফিকুর রহমান স্বপন ১টা ৪৫ মিনিটে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। যে কারণে তার অনুপস্থিতিতে রোগীর অস্ত্রোপচার করেছেন স্ইুপার ও চিকিৎসা দিয়েছেন ইন্টার্ন।

এদিকে, গত ১৪ মার্চ প্রতিপক্ষের হামলায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার স্বপন চৌধুরীর ছেলে নয়ন চৌধুরী সাজু (২৫)। ওয়ার্ডে তার অবস্থার অবনতি হলেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসেননি। পরে মোহাম্মদ রহমান নামে একজন চিকিৎসক রোগী সাজুকে ঢাকায় রেফার্ড করে। এর কিছু সময় পর সন্ধ্যায় সাজুর মৃত্যু হয়।

রোগীর চিকিৎসায় কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে না পেয়ে ওই রোগীর স্বজনরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সময় তারা ওয়ার্ডে হট্টগোলও করেন।

এই বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, সুইপার ও এল এল এস এস মিলে রোগীর অস্ত্রোপচার করার বিষয়টি দুঃখজনক।

বুধবার অফিস টাইমে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা দেয়া আছে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য। তাদের অনুপস্থিতিতে ইন্টার্ন রোগীকে অন্যত্র রেফার্ড করার কোন নিয়ম নেই। এই ধরণের অনিয়ম বন্ধে পয়োজনে তিনি কঠোর হবেন।

/আরএ

Comments