ঝিনাইদহে প্রকাশ্যে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাউৎসব!

প্রকাশিত: ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯
ভ্যাকু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন নদী থেকে ভেকু ও ড্রেজার ম্যাশিনের মাধ্যমে বালু ও মাটি প্রকাশ্যে অবৈধভাবে উত্তোলনের মহা উৎসব লেগেছে। এতে ফসলি জমি ও বসতবাড়ী হুমকির মুখে পড়েছে।

টানা বৃষ্টিতে ও নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে আশপাশ এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা বাগান ছড়া ও নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না।

এছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু এ নির্দেশনাগুলোর কোনো তোয়াক্কা না করেই দিনের পর দিন উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, শেখপাড়া, লাঙ্গলবাধ, আবাইপুর, মাজদিয়া, সুবিদ্দা গোবিন্দপুর এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে ভেকু ও ড্রেজার ম্যাশিনের মাধ্যমে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।

প্রতিদিন সব মিলিয়ে প্রায় কয়েক শত বালু ও মাটিবাহী ট্রাক শৈলকুপার রাস্তা দিয়ে চলাচল করায় একদিকে যেমন রাস্তা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ধুলাবালিতে অতিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও বাজারের দোকানিরা। রাস্তায় চলাচলে চরম ঝুকিতে রয়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাও।

ট্রাকে ভরে বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জালাল উদ্দিন ও তার ভাই ইউপি সদস্য আলাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে নিশ্চিন্তপুর নদী থেকে অবৈধভাবে শ্রমিক ও ভেকু এবং ড্রেজার লাগিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করছে। সুবিদ্দা গোবিন্দপুর গড়াই নদীর চর থেকে ইউপি সদস্য খেলাফত, প্রতিদিন শত ট্রাক বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করছে।

মাঝদিয়া গড়াই নদীর চর থেকে মিলন হোসেন মসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে ড্রেজার, ভেকু মেশিন ও শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করছে। বোয়ালিয়া ও শেখপাড়া এলাকায় ভেকু মেশিন ও শ্রমিক দিয়ে নদীর বুক থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে মুকুল নামে এক ব্যক্তি।

এছাড়াও উপজেলার লাঙ্গলবাধ ও আবাইপুরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর বুক থেকে প্রতিনিয়তই বালু উত্তোলন করছে।

বালিমহল ব্যবহারকারীরা সরকারি দলের প্রভাবশালী হওয়ার কারনে স্থানীয় জনসাধারণ ভয়ে কিছু বলতে পারেনা। নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ভূমিধ্বস, পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নদীর এ বালিমহল দখলকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামাও কম ঘটেনি। দিনশেষে হাজার হাজার টাকার বালি বিক্রির টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়েও রয়েছে নানা হামলা, মামলা সংঘর্ষের ঘটনা।

এলাকাবাসীর দাবি, সত্বর অবৈধ বালিমহল বন্ধ করে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভূমিকা রাখবে। একই সাথে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষাসহ বাজারের পরিবেশ দূষণ থেকে এলাকাবাসীর মুক্তি মিলবে।

অনেক জমির মালিক জানান, জমির চারিদিক থেকে ভূমি খেকোরা মাটি কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর আমাদের নিজ নিজ জমি নদীতে বিলিন হয়ে যায়, যেকারনে নিজেদের সংসার চালানোর তাগিদেই মাটির ব্যবসা করি। চরে কর্মরত অপর এক শ্রমিক জানান, প্রতিটি বড় ট্রাক ৫শ টাকা, ট্রাক্টর চালিত ইঞ্জিন গাড়ী ৪শ টাকা, নাটা হাম্বার ৩৫০ টাকা ও অন্যান্য সকল পরিবহন ২২০ টাকা হারে নিয়মিত বালি বিক্রয় করা হয়।

প্রতিবছর বালি ও মাটি কাটার ফলে গড়াই নদীসহ অন্যান্য নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নি:স্ব হয় মানুষ, নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের ফসলী জমি। ভূক্তভোগীরা জানান, নদী পাড়ের ফসলি জমি ও শত শত বসতবাড়ী নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আগেই অবৈধ বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধে এখনই প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা ও গাড়ী এবং ড্রেজার মেশিন পোড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আইনের আওতায় এনে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

/আরএ

Comments