যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সেফটিএক্সোন, ওমিপ্রাজল ইনজেকশন যাচ্ছে কোথায়!

প্রকাশিত: ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সরকারের বিনামূল্যে সরবরাহকৃত সেফটিএক্সোন ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশন রোগীরা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকারা রোগীর স্বজনদের হাতে কাগজ লিখে দিচ্ছেন বাইরে থেকে এসব দামি ইনজেকশন কিনে আনার জন্য। প্রশ্ন উঠেছে, বিনামূল্যের এইসব দামি ইনজেকশন তাহলে যাচ্ছে কোথায়।

অনেক সময় রোগীর লোকজন জানতে চাইলে তাদের বলা হয় এই ইনজেকশন সাপ্লাই নেই। হাসপাতালের স্টোর কিপার জানিয়েছেন, রোগীর চিকিৎসায় সরকারিভাবে সেফটিএক্সোন ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশন পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ রয়েছে।

জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীর জন্য স্বজনরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনেন। হাসপাতালে সরকারিভাবে সরবরাহ বিনামূল্যের ওষুধও দেয়া হচ্ছেনা। বিশেষ করে ভর্তি হওয়া প্রতিটি রোগীর জন্য কিনে আনতে হচ্ছে সেফটিএক্সোন ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশন। ওয়ার্ড ইনচার্জ সেবিকা ও দায়িত্বরত সেবিকাদের কারসাজিতে মানুষ সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেবিকারা রোগীর স্বজনদের বলছেন এই ইনজেকশন সাপ্লাই নেই তাই ওষুধ দেয়া হচ্ছে না।

যে কারণে সেফটিএক্সোন প্রতিটি ইনজেকশন ১ গ্রাম ১৯০ টাকা, ২ গ্রাম ২৯০ থেকে ৩শ টাকা ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশন ৮০ টাকা দরে তারা বাইরে থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। মূল্যবান এসব, ইনজেকশন কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর স্বজনেরা। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চললেও কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই।

চুড়ামনকাটি গ্রামের লালিয়া খাতুন জানান, ২৫ জানুয়ারি রাতে তার মা ফাতেমা খাতুনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোগীর চিকিৎসার জন্য সেফটিএক্সোন ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়েছে।

রোগীর স্বজন আতিয়ার রহমান, আশানুর রহমান, ইকবাল আহমেদ, তুষার খান, বেবি খাতুন, ময়না বেগমসহ আরো অনেকেই জানান, রোগীর চিকিৎসার জন্য তারা সেফটিএক্সোন ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশন কিনে এনেছেন। হাসপাতাল থেকে তেমন কোন ওষুধ ও ইনজেকশন দেয়া হয়নি।

তারা আরো বলেছেন, শুনেছি হাসপাতালে সরকারের বিনামূল্যে সরবরাহকৃত অনেক ওষুধ রয়েছে। কিন্তু বিতরণ করা হয় কম। আর দামি ট্যাবলেট, ইনজেকশন ও স্যালাইনতো রোগীদের দেয়া হয় না বললেই চলে। জিজ্ঞাসা করলেই সেবিকারা বলেন, সঙ্কট চলছে নতুবা শেষ হয়ে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি এ হাসপাতালে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত রোগীরাই ভর্তি হয়। আর্থিক সঙ্কটের কারণে তারা বেসরকারি হাসপাতালে যান না। তাদের ভরসা স্বল্প খরচে সরকারি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা পাবেন। ওই সব রোগিরা হাসপাতালে ভর্তির পর পড়েন বেকায়দায়। মূল্যবান ওষুধ কিনতে গিয়ে রোগীর স্বজনেরা হাফিয়ে উঠছেন। তবে প্রভাবশালী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির কোন রোগী ভর্তি হলে রয়েছে ভিন্নতা। চিকিৎসার জন্য প্রায় ওষুধ দেয়া হয় হাসপাতাল থেকে। অথচ গরিব রোগীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্রশ্ন উঠেছে, সেফটিএক্সোন ও ওমেপ্রাজল ইনজেকশন তারা কি করেন? এ প্রসঙ্গে কথা হয় দুইজন ওয়ার্ড ইনচার্জ সেবিকার সাথে। তারা জানিয়েছেন, সব রোগীর জন্য সেফটিএক্সোন ও ওমেপ্রাজল ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনতে হয়না। তারাও কিছু রোগীকে দেন। তবে সেটা পরিমাণে কম। এজন্য মনে হয় রোগীরা সরকারের ওষুধ পাচ্ছেনা।

তারা আরো বলেন তাদের সংগ্রহে কিছু ওষুধ রেখে দিতে হয়। গরিব অথবা অজ্ঞাত পরিচয়ের কোন রোগী আসলে তাদেরকে দেয়ার জন্য। তবে বাস্তবে এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। নানা অজুহাতে তারা দামি ইনজেকশন আত্মসাত করছে বলে অভিযোগ।

হাসপাতালের স্টোর কিপার শরিফুল ইসলাম জানান, সেফটিএক্সোন ১ গ্রাম ও ২ গ্রাম এবং ওমিপ্রাজল ইনজেকশন পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ রয়েছে। চাহিদাপত্র দেয়ার সাথেই ওয়ার্ড ইনচার্জদের সব ওষুধ ইনজেকশন বুঝিয়ে দেয়া হয়।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানিয়েছেন, হাসপাতালে সেফটিএক্সোন ও ওমিপ্রাজল ইনজেকশনের সংকট নেই। রোগীরা কেনো পাচ্ছে না তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।

/আইকে

Comments