হাসির যাত্রায় কাঁন্না

প্রকাশিত: ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি: অন্তঃসত্ত্বা ফারজানা খাতুন (৩২)। রোববার সন্ধ্যায় তার সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। তাই দুপুরে ওই গৃহবধূ স্বামী স্কুল শিক্ষক তরিকুল ইসলাম শিপন (৩৬) ও একমাত্র ছেলে রাফিকে (৬) সাথে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন।

পরিবারের লোকজনও ফারজানাকে বিদায় জানালেন হাসিমুখে। কেননা ফারজানার গর্ভে কন্যা সন্তান থাকাই অনেক খুশি ছিলেন সবাই। কিন্তু সন্তান ভুমিষ্ঠের আগেই ফারজানা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ প্রদীপ। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তার স্বামী ও সন্তান গুরুতর আহত হয়েছেন।

নিহত ফারজানার শ্বশুর যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন সাতমাইল বাজার থেকে হিউম্যানহলার রিজার্ভ করে তরিকুল স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে আসছিলেন একতা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

এদিন সন্ধ্যায় ফারজানার সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করবেন ডা. ইলা মন্ডল। যশোর শহরের বাবলাতলা ব্রিজের একটু আগে বটতলার কাছে পৌঁছালে তাদের বহনকৃত গাড়িটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সড়কের উপর উল্টে যায়।

স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দুপুর তিনটায় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আনেন। জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডা.কাজল মল্লিক তাদের ভর্তি করে ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসার জন্য।

মহিলা সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ৪টার দিকে মারা যান ফারজানা। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক তানজিলা জানান, দুর্ঘটনায় ওই গৃহবধূর বুকে ও পেটে প্রচন্ড চাপ লেগেছে। যে কারণে মারা গেছেন অন্তঃসত্ত্বা ফারজানা।

ভর্তির শুরু থেকেই তার অবস্থা খারাপ ছিলো। নিহতের স্বামী স্কুল শিক্ষক তরিকুল ইসলাম জানান, অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা তার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিলো। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সুখের সংসার সাজানো হলোনা। সবাইকে কাঁদিয়ে ফারজানা চলে গেলো।

তিনি জানান, ঝিরঝির বৃষ্টির সময় একটি ট্রাক হঠাৎ করে তাদের গাড়ির সামনে চলে আসে। এসময় চালক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে গাড়িটি উল্টে গেলে চাপা পড়ে ফারজানা। তার শিশু সন্তান রাস্তার উপর ছিটকে পড়ে। আর তিনি গাড়ির মধ্যেই ছিলেন।

প্রতিবেশী লুৎফর রহমান জানান, হাসপাতালে আসার সময় ফারজানা তাকে বলে ভাই গেলাম দোয়া করবেন। কখনো ভাবতে পারেনি এভাবে তিনি সারাজীবনের জন্য চলে যাবেন।

স্বজনরা জানান, মৃত্যুর আগে ফারজানা ওয়ার্ডে চিৎকার করে বলছিলেন আমাকে বাঁচান। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি মরতে চাইনা। আবেগময় কথা শুনে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

হাসপাতালের মর্গে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য রুহুল আমিন জানান, মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোন অভিযোগ নেই। ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাত ৮টার দিকে ফারজানার মৃতদেহ নিয়ে গেছে স্বজনরা।

Comments