জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২:১৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০২৩

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় বড় তহবিল পাচ্ছে বাংলাদেশ।

সবার অর্থায়নে গড়ে উঠবে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম’ (বিসিডিপি) নামের এই তহবিলের আকার হবে প্রায় ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। যার অর্থ খরচ হবে সহযোগিতামূলক পদ্ধতিতে।

দেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ এর উদ্যোগে গঠিত তহবিল জোগানে অংশ নিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), বহুপক্ষীয় বিনিয়োগ নিশ্চয়তা এজেন্সি (এমআইজিএ), এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), এজেন্সি ফ্র্যান্সাইস দ্য ডেভেলপমেন্ট (এএফডি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি), গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ), কোরিয়া সরকার এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

আইএমএফ এর পক্ষ থেকে গত রবিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ এখন একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাই বিসিডিপি বাস্তবায়নে আইএমএফের সহযোগিতা ও পরামর্শ থাকবে সব সময়। আর অর্থ ব্যয় হবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়, অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব জনগোষ্ঠীর জীবনমান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাদের জন্য।

৮ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিলে সর্বোচ্চ বরাদ্ধ দিবে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক- এডিবি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বর্তমানে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০২৩ সালের জন্য এডিবির বরাদ্দ হওয়া ১৯০ কোটি ডলারের যার ৫৩ শতাংশই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয় করার কথা জানিয়েছে আইএমএফ। এছাড়া ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে এডিবি ৫৫০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০ শতাংশই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

এর বাইরে ৮০০ কোটি ডলারের মধ্যে আইএমএফের অংশ হচ্ছে ১৪০ কোটি ডলার। গত জানুয়ারিতে আইএমএফ যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, তার মধ্যেই এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এছাড়া বিশ্বব্যাংকের ১০০ কোটি, এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক- এআইআইবির ৪০ কোটি এবং দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের অনুদান থাকছে ৪ কোটি ডলার। অন্য সংস্থাগুলোরও কমবেশি অর্থায়ন থাকবে এই তহবিলে।

বিবৃতিতে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘জলবায়ু সহনশীলতা, অভিযোজন, প্রস্তুতি ও সংরক্ষণকে আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা জলবায়ু কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বৈশ্বিক সম্মিলিত উদ্যোগের প্রচারে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করি।’

এ নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গাও। তিনি বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি বৃদ্ধির ঘটনা বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করছে। তবে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও অভিযোজনের ক্ষেত্রে দেশটি ভালো করছে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি আবারও প্রকাশিত হলো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য পারস্পরিক জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অর্থায়নের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এডিবি প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ ও শক্তিশালী অংশীদারত্ব প্রয়োজন। যথাযথ নেতৃত্ব ও প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে জলবায়ু কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্য সব উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে মিলে এডিবিও বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।

Comments