ভোলায় জেলেদের ভিজিএফ চাউল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০১৯ স্টাফ রির্পোটার: ভোলায় জাটকা সংরক্ষন প্রকল্পের জেলেদের ভিজিএফ চাল বিতরনে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠছে। দুই মাসে জনপ্রতি ৮০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ১৫ কেজি করে কম দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে জেলেদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। জেলেদের দাবি প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ব্যবসায়ী ও কৃষকসহ নানা পেশার মানুষকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারী কর্তারা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে এর দায় চাপাচ্ছেন একে অপরের উপর। জানা যায়, মার্চ ও এপ্রিল দুইমাস মেঘনা এবং তেতুলিয়া নদীর ১৯০কিলোমিটার এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম এলাকা ঘোষনা করে এই এলাকায় সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে মৎস্য অধিদপ্তর। অথচ প্রতিদিন শত শত নৌকা আর ট্রলার নিয়ে জেলেরা প্রকাশ্যে মাছ ধরেই যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এসব জেলেরা জাল হাতে নেমে পড়ছে নদীতে। এর কারন হিসেবে খোঁজ নিতে গিয়ে বেড়িয়ে আসছে জেলেদর নানান সমস্যার কথা। খেতে না পাড়া আর একাধিক এনজিও গুলো থেকে লোন নেয়ার বিষয়তো রয়েছেই। আটক হয়ে জেলেদের জেল-জরিমানা হলেও থেমে নেই মাছ ধরা থেকে। যদিও সরকার মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসের জন্য প্রতি মাসে ৪০কেজি করে দুই মাস জেলেদের মোট ৮০কেজি চাউল দেয়ার কথা রয়েছে। অথচ ১২থেকে ১৫কেজি করে চাউল পাচ্ছে এসব জেলেরা। জানতে চাইলে উত্তরে বলছেন যা যেভাবে আসছে সেইভাবেই দিচ্ছি, এসব নিয়ে আমরা খাই না। আবার কেউ কেউ জেলে কার্ড এর জন্য টাকা দিলেও তা বছরের পর বছর পেড়িয়ে আশ্বাস ছাড়া পাচ্ছেন না িকছুই। তাদের সকল অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান, মেম্বার আর মৎস্য কর্মকর্তাদের উপর। যা পাচ্ছে তা নিয়েই সন্তষ্টু থাকতে হচ্ছে এসব জেলেদের। ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ৪নং ওয়ার্ড এর জেলে মোঃ জাকির হোসেন নদীতে মাছ ধরারত অবস্থায় বলেন, ৪০ কেজি না ২০ কেজি করে চাউল দেয়ার কথা বলে নিয়ে চাউল দিয়েছে। ঐ চাউল বাড়ি নিয়ে মেপে দেখি ১৫ কেজি। এটা আমারই না- সবার একই অবস্থা। কেউ ১২ আবার কেউ ১৫ কেজি করে পায়। একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড এর মোঃ কামরুল বলেন একই কথা। তিনি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান তাকে বলেছেন, যেমন আইছে তেমনি পাবা। এটা আমরা খাই না। আর পাবকিনা তার আশা নেই বলে জানালেন এই জেলে। একই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর জেলে মোস্তফা বলেন, চাউলতো পাওয়ার কথা এক মণ করে। তবে ১০ কেজি, ১৫ কেজি আবার কখনো ১৮ কেজি করেও চাউল পাই। যা পাই তাতে চলে না। সমিতি আছে যা চালাতে হয়। তাই নদীতে মাছ ধরতে আই। একমাস ৪/৫দিন মাছ না ধরে বসে ছিলাম। এখন দেখছি আমার খাওয়ার মতো কিছু নাই। সমিতি আছে যা চালাতে হয়। দেনা করে আর খেতে পারছি না। যে কারনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই জাল নিয়ে নদীতে নামছি। সরকার চাউল দেয় ঠিকই তবে ঐ চাউল ভালো ভালো লোকে নিয়ে খায় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা মোঃ ইব্রাহিম। সরকারে চাউল দ্যায় তো কিছুই পাই না। চেয়ারম্যান আর মেম্বারেরা মিলে খাইয়া ফালায় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রাজাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর মোঃ কবির। একই ধরনের অভিযোগ করলেন মোঃ হেলাল রাজাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডেও বাসিন্দা। অপরদিকে চরফ্যাশনের হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের এক জেলে নাম প্রকাশ না করার স্বর্তে বলেন, মেম্বার জেলে কার্ড দেয়ার কথা বলে ৫শ টাকা নিয়েছে। এখন কার্ডও দেয় না আর চাউলও পাই না। এওয়াজপুর ইউনিয়নের জেলে মোঃ বাবুল বলেন, অফিসে দেয়ার কথা বলে মেম্বার টাকা নিয়েছে। এখন কার্ড ও চাউল কিছুই দেয় না। দের বছর হয়েছে, বলে শুধু দিব দিব দেয় না। ধরলে বলেন, আপনার সামনেই অফিসে টাকা দিলাম কার্ড আসলেই পাইবনে। চরফ্যাশন নিয়ে ঘুরিয়ে আনে, তবে কার্ড চাউল কিছুই দেয় না বলে জানালেন চরফ্যাশন হাজারিগঞ্জ ৭নাং ওয়ার্ড এর একজন বাসিন্দা। যিনি ছোট বেলা থেকেই মাছ ধরছেন। প্রকৃত জেলেরা কিছুই পায় না বলে জানালেন সামরাজ ঘাটে বসে কথা হওয়া বেশ কয়েকজন জেলে। তারা চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের রোশানল থেকে বাচাঁর জন তাদের নাম গোপন রাখার অনুরোধ করেন। এদিকে এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে রয়েছে নানামূখী বক্তব্য। কোনো দপ্তরই এর দায় ভার নিতে চাচ্ছে না বলেই একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছেন তারা। যদিও এর আগে বহুবার সরকারী গুদাম থেকে সরকারী এ চাউল ট্রাক অথবা ট্রলারে করে জেলার বাহিরে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দেখা গেছে এসব গুদাম থেকে সরকারী চাউল প্রকাশ্যেই দিনের বেলাতে ট্রলারে করে দেশের বিভিন্নস্থানে নেয়ার ঘটনা। প্রশাসন থেকে এসব দেখার কথা থাকলেও কোন কোন সময় তারা এসব অভিযোগ এরিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে আবার একাধিকবার পুলিশ ও জেলা প্রশাসক কর্তৃক ট্রাকসহ চাউল আটক করা এবং মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। শুধু তাই নয়, জেলেদের জন্য সরকার এর দেয়া ভিজিএফ চাউল বিক্রির জন্য কালোবাজারী ব্যাবসায়ীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে চাউলের দাম বাজারে কম থাকায় দর নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে দেনদরবার চলছে। যদিও জেলেরা তাদের ন্যায়্য দাবী চাউলের সুষ্ঠু বন্টনের দাবীতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধ করেছে। ভোলা জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেন বলেন, ভিজিএফ মৎস্য কর্মসূচীর আওতায় প্রতিমাসে ৪০ কেজি চাউল বিতরন করার কথা রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন একসাথে দুই মাসের চাউল বিতরন করেন। অথচ ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসের চাউল এপ্রিলের শেষ সময় হলেও বুঝে নেয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা। গুদাম থেকে চাউল বিক্রি হয়ে যাওয়ার প্রশ্রঙ্গে তিনি বলেন, গুদাম থেকে চাউল বিক্রি অথবা বের হয়ে যাওয়ার পর খাদ্য বিভাগের এর সাথে আর কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে না। চাউল বের হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় জন প্রতিনিধিগন যদি চাউল বিক্রি করে দিয়ে থাকেন বা জেলেদের ঠকিয়ে থাকেন এটা তাদের বিষয়। এধাধিক উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা এসব কালো বাজারে চাউল বিক্রির সাথে জড়িত থাকার কথা জানালেন তিনি বলেন, এসব বিষয় আমার জানা নেই। তবে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তখন গুদামে চাউল না এনেই বিক্রি করে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হলে তিনি স্বপক্ষে কোনো উত্তর না দিয়ে জেলা মৎস্য কার্যালয় ভালো বলতে পারবেন বলে তাদের উপর দায়ভার চাপিয়ে দেন। অপরদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস,এম আজহারুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর চালের ডিউ প্রদান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবার ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর চালের বরাদ্ধ পুনরায় প্রদান করেন। সকলের উপস্থিতিতে এই চাউল প্রদান করে থাকেন। কোনো অনিয়ম হলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে বলেও তিনিও দ্বায়িত্ব এড়িয়ে যান। এবিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, সরকার কর্তৃক যে ৪০ কেজি করে চাউল পায় জেলেরা তা ইতিমধ্যেই আমরা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ডিউ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছি। দুই মাস পর পর যে চাউল দেয় তা দেয়ার জন্য আমাদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে (চেয়ারম্যানরা)। তবে কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পেলেই সংঙ্গে সংঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে হুশিয়ার করে দেন। /আরএ Comments SHARES সারাদেশ বিষয়: