ইইউ পার্লামেন্ট

ইইউ পার্লামেন্টের প্রস্তাবে নাখোশ ঢাকা

প্রকাশিত: ১১:১৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
  • ‘অধিকার’ মোটেও নিরপেক্ষ বা স্বাধীন সংস্থা নয় বলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল বিবৃতি…

‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে’ ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত একটি প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বাংলাদেশ সরকার ‘চরম হতাশা’ প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিচারাধীন বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে যৌথ প্রস্তাব উত্থাপন এবং ঢাকায় আজ দুই ‘অধিকার’ কর্মকর্তার বিষয়ে আদালতের রায় নিয়ে যে কথা বলা হয়েছে তা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের সামিল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও ন্যায়সঙ্গতভাবে পরিচালিত হয় এবং সব পক্ষের অধিকার সম্মানের সহিত সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করে চলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, বাংলাদেশ সরকার ‘অধিকার’- বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেজুলেশন সম্পুর্ন পক্ষপাতিত্বমূলক।

যেসব বিষয় উঠে এসছে ইইউ পার্লামেন্ট প্রস্তাবে

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা সবার জানা যে, ‘অধিকার’-সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে বিএনপি-জামায়াত সরকার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত করেছিলেন এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর সেই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অতএব, নিরপেক্ষতার শত দাবী করলেও ‘অধিকার’ মোটেও একটি নিরপেক্ষ বা স্বাধীন সংস্থা নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টসহ সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৫০ বছরের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির ভিত্তিতে অর্থবহ সম্পৃক্ততার মাধ্যমে এটি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করে।

  • ইইউ প্রস্তাব আমলে নেওয়ার কিছু নেই মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইইউ পার্লামেন্টের প্রস্তাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিবৃতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কড়া প্রতিক্রিয়ায় আমলে নেওয়ার কথা বলা হলেও বিষয়টি আমলে না নেওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা যে আলোচনা করেছেন, সেটার নির্দেশনা দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই, তা মানার কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। ওনারা (ইউ পার্লামেন্টের সদস্য) ৭৫৩ জন সদস্য রয়েছেন, তাঁরা অনেকে অনেক বক্তব্য দিতে পারেন। এটা তাঁদের বিষয়। তবে এটা দুঃখজনক। তাঁরা অনেক সময় কারও কারও প্ররোচনায় বক্তব্য দেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

সাংবাদিক গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিদেশিরা) কথা বললে আপনারা (দেশের গণমাধ্যম) বড় মজা পান। আপনারা যদি তাদের প্রত্যাখ্যান করতেন তারা বক্তব্য দিত না। অন্য দেশে প্রত্যাখ্যান করে। ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বললে, প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু আপনারা এটাকে খুব গুরুত্ব দেন। বিদেশি কেউ বললে, আপনারা লাফিয়ে ওঠেন। আগামী দিনে আপনারা দেশের দিকে মনোযোগ দেবেন, বিদেশের দিকে মনোযোগ কম দেবেন।’

  • ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের বিষয়ে আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলার সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি যৌথ প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক এবং ভোটাভুটিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করে সরকার। একে সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও চক্রান্ত হিসেবে দেখছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিউইয়র্ক সফর উপলক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল এদিন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। একই মামলায় অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকেও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, আটজন বক্তব্য দিয়েছেন। তার মধ্যে দুজনের কথা পরিষ্কারভাবে এসেছিল যে তাঁরা এটার পক্ষে নয়। একজন এ রকমও বলেছেন, এ ধরনের আচরণ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নতুন করে ঔপনিবেশবাদ উসকে দিতে পারে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর এ রকম আচরণ ঠিক নয়। আরেকজন বক্তা বলেছেন, এ ধরনের উদ্যোগ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে নিলে এটা হিতে বিপরীত হতে পারে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে বাংলাদেশের বাণিজ্যে কতটা চাপ পড়বে

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ওনাদের একাধিক বক্তা যে লাইনে বলেছেন, আশা করি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অন্য এমপিরা সামনে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হবেন না। আমরা যেটা মনে করি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আমাদের একটা পরিপক্ব সম্পর্ক রয়েছে। সেই পরিপক্ব সম্পর্কের জায়গা থেকে আশা করি, আমাদের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে, সেটাও আবার আদালতে বিচারাধীন; এই ধরনের কার্যক্রমে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট হস্তক্ষেপ করবে না। এটা হস্তক্ষেপ।’

সরকার এটিকে (প্রস্তাব) আমলে নেবে কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একদিক থেকে এটাকে আমলে নেবো, কারণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। এ রকম কোনো কার্যক্রম হলে আমরা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকতে পারি না। সেই আগ্রহটুকু থেকে, সেই হস্তক্ষেপ থেকে; আমলে অবশ্যই নেব। প্রস্তাবের ওপর যে ভোটাভুটি হবে, তাতে সরকারের নজর থাকবে।’

/এসএস/একুশনিউজ/

Comments