এক নজরে তফসিল ও নির্বাচন; ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ১০:১৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০১৮

শাহনূর শাহীন :

নানান জল্পনা কল্পনা মধ্য দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল।

বৃহস্পতিবার সন্ধা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রথা অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদ।

তফসিল কী?
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা মানে শুধুমাত্র ভোটের তারিখ ঘোষণাই নয়। বরং নির্বাচনের সাথে জড়িত বিভিন্ন বিষয়ে ‍সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা উপস্থাপন ও নির্বাচনের একটা আনুষ্ঠানিক আইনি ঘোষণা।

তফসিলে কবে, কখন,  কীভাবে নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে সেই বিষয়ে পূর্ণ বিবরণ আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র হলো নির্বাচনী তফসিল।

তফসিলে যা রয়েছে:
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে হবে ১৯ নভেম্বর।

প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২২ নভেম্বর। অন্যদিকে প্রার্থীরা তাদের নিজের মনোনয়ন প্রত্যার করতে পারবেন ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত।

বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি নাকচ করে দিয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী রাখার কথা বলা হয়েছে তফসিলে।

সিইসি কে এম নুরুল হুদা

সিইসি বলেছেন, সেনাবাহিনী শুধুমাত্র বেসামরিক বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য নিয়োজিত থাকবে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৫০ হাজার সেনা সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত ছিলো।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য সারাদেশে ইতোমধ্যে ৭ লক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচনের সময় প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে।

নির্বাচনে শহর কেন্দ্রীক আসনগুলোতে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে বেছে নেয়া অল্প কিছু কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে।

সিইসি বলেছেন, জেলা এবং অঞ্চল পর্যায়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইভিএমের উপকারিতা সম্পর্কে ভোটারগণকে অবহিত করা হয়েছে।

নূরুল হুদা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করা গেলে নির্বাচনের গুণগতমান উন্নত হবে এবং সময়, অর্থ ও শ্রমের সাশ্রয় হবে।

তফসিল পেছানো যাবে কিনা?
নির্বাচন কমিশন চাইলে বিশেষ প্রয়োজনে তফসিল ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করতে পারে।

প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়েরও তারিখ পরিবর্তন করতে পারবে একই সময়ের মধ্যে।

২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলো।

পরে বিএনপির দাবির প্রেক্ষিতে আলোচনার সাপেক্ষে তারিখ পরিবর্তন করে ২৯ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ করা হয়।

উল্লেখ্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করে তফসিল পেছানোর আহ্বান জানিয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপেও তারা তফসিল পেছানোর দাবি জানায়।

নির্বাচন অনুষ্ঠানে সময়ের বাধ্যকতা:
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্য-বাধ্যকতা রয়েছে।

এই ৯০ দিনের মধ্যেই তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচনের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ অনুযায়ী আগামী ২৮ জানুয়ারীর মধ্যে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে হবে।

এর আগে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিয়ম ছিলো। তখন নির্বাচনকালীন ওই সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করতো।

পরে ক্ষমতাসীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানর সংশোধন করে তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রথা বিলুপ্ত করে দেয়।

নতুন নিয়মে সংসেদের মেয়াদ থাকাকালীন শেষ ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হয়।

এক্ষেত্রে সরকার ও মন্ত্রীসভা রুটিনকাজের বাইরে আইন প্রনয়ণ সহ সংসদীয় অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রতিক্রিয়া:
তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি।

বিএনপি ছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এছাড়াও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।

আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।

অাওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশা ছিলো তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা কেটে গেছে।

আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এক তরফা নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

ফখরুল বলেন, তফসিলে জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতেম নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তফসিল অবশ্যই পেছাতে হবে। নতুবা নির্বাচনে যাবে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

তফসিল সংশোধনী:
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি ও অন্যান্য দলের দাবির প্রেক্ষিতে ১৩ নভেম্বর (সোমবার) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা একাদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল সংশোধনীর সিদ্ধান্ত জানান।

সোমবার তিনি জানান, নির্বাচন পিছিয়ে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর হবে। তবে ওইদিন তিনি মনোনয়ন দাখিল, প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবর্তনের কথা জানাননি।

পরেরদিন ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার কমিশনের পক্ষ থেকে পুনঃতফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই ২ ডিসেম্বর এবং প্রত্যাহারের দিন ৯ ডিসেম্বর বলে জানানো হয়।

/আরএ

Comments