চট্টগ্রামে বিশ্বমানের চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত ইমপেরিয়াল হসপিটাল; অপেক্ষা উদ্বোধনের

প্রকাশিত: ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০১৯

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: অবশেষে শেষ হতে যাচ্ছে সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর। আর মাত্র কয়েকটা দিন। টাকা খরচ করে আর বিদেশ যেতে হবে না। বিদেশের উন্নতমানের চিকিৎসা মিলবে এখন চট্টগ্রামের ইমপেরিয়াল হসপিটালে।

জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য বিদেশ না গিয়ে তুলনামূলক সাশ্রয়ী খরচে দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পেতে ২০১০ সালে এ হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ট্রাস্ট্র। পাহাড়তলী চক্ষুু হাসপাতালের পাশে ৭ একর জমির উপর পাঁচটি ভবন নিয়ে দৃষ্টিনন্দন ও নান্দনিক এ হাসপাতালটি গড়ে উঠেছে।

দেশের চিকিৎসা সেবায় নতুন পালক যুক্ত করা এ হাসপাতালটি সাড়ে তিনশ’ শয্যাবিশিষ্ট। আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে চালু হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির উদ্বোধন করতে পারেন বলে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মককর্তারা জানিয়েছেন।

দক্ষ চিকিৎসক, সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত সেবা-এ তিন কারণে ইমপেরিয়াল হসপিটালের চিকিৎসাসেবার মান বিশ্বমানের হবে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন।

গতকাল (৮ এপ্রিল) গণমাধ্যম কর্মীদের হাসপাতালটি ঘুরে দেখান অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যায়। এতে রোগীর পরিবারকে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক চাপের মুখে পড়তে হয়।

তাদেরকে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা হাসপাতালটি গড়ে তুলেছি। রোগীদের এখন আর বিদেশ যেতে হবে না। ঘরের দুয়ারে গড়ে উঠা এ হাসপাতালে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বমানের চিকিৎসা মিলবে।

রোগীদের জন্য অত্যাধুনিক বেড

হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে, এখানে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, রোগীদের নিরাপত্তা এবং হাসপাতালের কর্মীদের নিরাপত্তার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। পুরো হাসপাতালের ফ্লোর করা হয়েছে এন্টি ফাংগাল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধমূলক। রোগী কিংবা স্বজনরা যাতে অন্য কোনো রোগে সংক্রমণ না হয় সেজন্য এ ব্যবস্থা বলে জানান ডা. রবিউল হোসেন।

হাসপাতালটিতে রোগীদের শয্যাগুলোতে রয়েছে সর্বাধুনিক তথ্য প্রযুক্তি। রোগীরা বেডে থেকেই সুইচ বাটনের মাধ্যমে নার্সকে নক করতে পারবেন। আধুনিক গুণগত মানসম্পন্ন ৬৪টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেডও রাখা হয়েছে। নবজাতকদের জন্য রয়েছে বিশেষায়িত ৪৪ শয্যাবিশিষ্ট নিওনেটাল ইউনিট এবং ৮টি পেডিয়াট্টিক আইসিইউ।

এ হাসপাতালে রোগীরা পাবেন উন্নতমানের সার্বক্ষণিক ইমার্জেন্সি সেবা। রয়েছে কার্ডিয়াক, নিউরো সার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারি ও গাইনি অবস্ সম্বলিত ১৪টি অপারেশন থিয়েটার। আছে ৬২টি কনসালটেন্ট রুম ও ১৬টি নার্স স্টেশন।

এ হাসপাতালের বিশেষায়িত কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগটি পরিচালনা করবে ভারতের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠীর প্রতিষ্ঠিত ‘নারায়ণা হেলথ’। এখানে হার্টের এনজিওগ্রাম, রিং লাগানো থেকে শুরু করে ওপেন হার্ট সার্জারিও করা হবে।

হাসপাতালের নির্বাহী ব্যবস্থাপক অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেনের ছেলে রেজা হোসাইন জানান, দেবী শেঠীর ‘নারায়ণা হেলথ’ প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের ৪-৫ জন চিকিৎসক এ হাসপাতালের সাথে যুক্ত হবেন। তারা এখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেবেন। কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগটি দেবী শেঠীর নেতৃত্বে পরিচালিত হবে।

অত্যাধুনিক ল্যাব বিভাগ

এ হাসপাতালে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এমআরআই ও সিটি স্ক্যান মেশিন। আছে ইমেজিং বিভাগ। হাসপাতালের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় গড়ে তোলা হয়েছে আউটডোর বিভাগ। এখানে চিকিৎসকের সেবা নেওয়ার আগে রোগীদের ব্লাড প্রেসার, উচ্চতা, ওজন, রক্তের গ্রুপসহ যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত করা হবে।

তিনি আরও জানান, এ হাসপাতালে মোট ৭৫ জন চিকিৎসকসেবা দেবেন। এরমধ্যে ১০ জন থাকবেন বিদেশি চিকিৎসক। যাদের সবাইকে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

হাসপাতালটি উদ্বোধনের সময় ৩৫০ শয্যার মধ্যে চালু করা হবে ২৪০ শয্যা। আর বিভাগ চালু করা হবে ৫টি। এগুলো হলো, কার্ডিয়াক মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক, অবস্ গাইনি, হেমাটোলজি ও ডায়াবেটিক। এ হাসপাতালে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ শয্যা সংরক্ষিত থাকবে।

/আরএ/এসএস

Comments