চমেক হাসপাতালে অবৈতনিক ৩৫০ কর্মচারীকে অব্যাহতি

প্রকাশিত: ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০১৯

ইমরান হোসাইন: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কর্মরত প্রায় সাড়ে তিনশ অবৈতনিক (স্পেশাল) কর্মচারীকে অব্যাহতি দিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে এসব কর্মচারীকে অব্যাহতি দিয়েছে। ৫ মার্চ থেকে এ আদেশ কার্যকরের কথা ছিল।

আদেশে বলা হয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর স্বল্পতার দরুণ বেশ কিছু বহিরাগত বিনা বেতনে ও বিনা অনুমতিতে রোগী পরিবহন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে রোগীদের নিকট থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ ও প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে রোগীরা হয়রানির শিকারসহ হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

সরকারি হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত ইউজার ফি ছাড়া রোগীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করা একটি অপরাধ। ইতোমধ্যে আউটসোর্সিং নীতিমালার আওতায় ২০৭ জন অফিস সহায়ক ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ প্রদান করে বিভিন্ন বিভাগে ন্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি কর্মচারী হিসেবে নিয়মিত পদায়ন আছে ৩৬০ জন। সর্বমোট ৫৬৭ জন কর্মচারী অফিস সহায়ক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিত আছে।

তাছাড়া সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে একশ জন আনসারসহ মোট ৬৬৭ জন সহায়ক কর্মচারী হাসপাতালে কর্মরত আছেন। এ  অবস্থায় বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের কাজে লাগিয়ে তদারকি করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এখন থেকে স্পেশাল হিসেবে যে সকল ব্যক্তি হাসপাতালে কাজ করেন তাদের ইতোপূর্বে যদি কোন আদেশ বা নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে, তা বাতিল বলে গণ্য হবে।

সরকারি জনবল ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত জনবলকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বহিরাগত কোন ব্যক্তিকে হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচালকের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন বিভাগে কাজ করানো যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আদেশে।

হাসপাতাল প্রশাসনের তথ্য মতে- প্রশাসনিক অনুমোদন থাকা ১৩১৩ শয্যার এই হাসপাতালে দৈনিক কম হলেও আড়াই হাজার রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু জনবল রয়েছে ৫০০ শয্যার। ৫০০ শয্যার হিসেবে হাসপাতালে সরকারি কর্মচারির (৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির) মোট পদ সংখ্যা ৬০৯টি। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মরত কর্মচারির সংখ্যা ৪৫০ জন। বাকি ১৫৯ টি পদ শূন্য ছিল।

এর মধ্যে ৩য় শ্রেণির মোট ১৩১টি পদে কর্মরত ৮১ জন। বাকি ৫০টি পদ শূন্য। আর মোট ৪৭৮ টি পদে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি রয়েছে ৩৬৯ জন। এই শ্রেণির (৪র্থ) শূন্য পদের সংখ্যা ১০৯টি। তবে সমপ্রতি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৪র্থ শ্রেণির ১০৯ জন কর্মচারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি এসব কর্মচারি হাসপাতালে যোগদানও করেছে।

অন্যদিকে, হাসপাতালে অবৈতনিক বা স্পেশাল কর্মচারির সংখ্যা কাগজে-কলমে ৩০০ জন হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা ৫ শতাধিক। কঠোর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কেউ যায়-আবার কেউ আসে। কখন কে যায়- কে আসে তার ঠিক-ঠিকানাও নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

অবৈতনিক বা স্পেশাল এই কর্মচারিদের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গরিব-অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সেবায় একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিতি এই হাসপাতালে। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রতি পদে পদে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এসব কর্মচারির বিরুদ্ধে।

তাছাড়া টাকা দিলেও রোগী ও সেবাগ্রহীতাদের সাথে দুর্ব্যবহার ও হয়রানির অভিযোগও নেহাত কম নয়। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে এ পর্যন্ত দুইবার গণশুনানির আয়োজন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের দুই দফা শুনানিতে বেশির ভাগ অভিযোগই ছিল এসব স্পেশাল বা অবৈতনিক কর্মচারির বিরদ্ধে।

এছাড়া নিজেদের উদ্যোগে চমেক হাসপাতাল প্রশাসনও কয়েক দফা গণশুনানির আয়োজন করে। এসব শুনানিতেও অধিকাংশ অভিযোগ পাওয়া যায় এই অবৈতনিক কর্মচারিদের বিরুদ্ধেই। সবমিলিয়ে সরকারি এই হাসপাতালে ‘টাকা ছাড়া কিছুই হয় না’ এমন অভিযোগের শিকড়ও গেড়েছে এসব কর্মচারির বদৌলতে। কিন্তু বেতন-ভাতা দিতে না পারায় এসব কর্মচারিদের আশানুরুপ নিয়ন্ত্রণও করতে পারছিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এর প্রেক্ষিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব অবৈতনিক বা স্পেশাল কর্মচারি আর না রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে হাসপাতাল প্রশাসন। তাদের স্থলে বেতনধারী কর্মচারি নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে অবশেষে অবৈতনিক কর্মচারিদের অব্যাহতি দিলো চমেক হাসপাতাল প্রশাসন।

/এফএফ

Comments