সিরাজগঞ্জ

বেলকুচিতে বৈশাখি শাড়ি তৈরিতে শ্রমিকদের দম ফেলার ফুরসত নেই

প্রকাশিত: ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০১৯

নাহিদ হাসান, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ: পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। দিনটিকে ঘিরে বাঙ্গালীর জীবনে উৎসাহ উদ্দিপনার জুড়ি নেই। দিনটিকে যথাযথভাবে পালন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সারাদেশ মানুষ।

দিনটিতে প্রতিটি বাঙ্গালী তাদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক শাড়ি, লুঙ্গী, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, ইত্যাদি পরিধান করে থাকে। আর এ উৎসবকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচির তাঁতীরা বাহারি ডিজাইনের বৈশাখী শাড়ী, লুঙ্গী উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছে তাঁতীরা। শ্রমিক কর্মচারীরের পাশাপাশি বাড়ির সবাই এখন ব্যস্ত এ কাজে।

পহেলা বৈশাখে সিরাজগঞ্জের শাড়ীর ব্যাপক সুনাম ও চাহিদা থাকায় শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ অন্যান্য বৈশাখী পোশাক তৈরীতে তাঁত পল্লীর পাশাপাশি প্রিন্টিং কারখানার শ্রমিকদের বিশ্রামের সুযোগ নেই। দিনরাত নতুন নতুন ডিজাইনের বিভিন্ন সাইজের শাড়ি ও লুঙ্গি সহ পোশাক প্রিন্ট করছে।

বেলকুচি উপজেলার তামাই, চন্দনগাঁতী, শেরনগর সহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২০-২৫ টি কারখানায় চলছে বৈশাখ শাড়ী তৈরীর কাজ। এছাড়া লাল পাইড় সাদা শাড়িতে বাংলার ঐতিহ্য ঢোল, ডুগি-তবলা, একতারা, দোতারা, হাতি-ঘোড়া, পলো, ইলিশ, নৌকা, ধানের শীষ, লাঙল, হাত পাখা, ঘুড়িসহ নানা ধরনের আল্পনা আঁকা হচ্ছে।  লুঙ্গি, থ্রি পিছ ও ফতুয়া প্রিন্টের কাজে এবং রং তুলির আচরে তুলে ধরা হচ্ছে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐহিত্য ও সংস্কৃতি।

তাঁত ব্যবসায়ীরা জানান , সারা বছর কাজ চললেও পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে তাদের দম ফেলানোর সুযোগ নেই। অতিরিক্ত চাহিদা অনুযায়ী ঢাকা ও গাজিপুরে কাপড় সরবরাহ করেছি। অন্য বছরের তুলনায় এবার ব্যবসা ভালো পাচ্ছি। কারন এখানকার উৎপাদিত শাড়ি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান দখল করে নিয়েছে।

শাড়িতে শোভা পাচ্ছে এসো হে বৈশাখ লেখা

প্রকারভেদে বৈশাখী শাড়ি ৩শ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ফ্যাক্টরী শাড়ী প্রিন্ট কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা কাপড়ে লাল, নীল, হলুদ রংঙের কাজ করছে, অন্যরা রোদে কাপড় শুকাচ্ছে।

কারখানার শ্রমিকদের সাথে কথা হলে বলে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মহাজনদের কাপড়ের অতিরিক্ত অর্ডার থাকায় ভোর থেকে রাত অবধি কাজ করতে হয়। পহেলা বৈশাখের দুই সপ্তাহ আগে থেকে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন রংয়ের মিক্সিার করে আল্পনা প্রিন্টিং সহ শুধু কাজ আর কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়ে। এতে একটু কষ্ট হলেও রোজগার বেশি হওয়ায় আমরা খুশি।

এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের সর্ববৃহৎ বেলকুচি সোহাগপুর ও এনায়েতপুর কাপড়ের হাট ছিল বৈশাখী শাড়ীর দখলে। চারিদিকে শুধু বৈশাখী শাড়ী আর শাড়ী। প্রিন্ট করা শাড়ীর গায়ে নানা রং বেরঙ্গের গ্রামীণ বৈচিত্রময় বিভিন্ন ধরণের চিত্র স্থান পায় এই শাড়ীতে।

এসব কাপড়ের হাটে আসা শাড়ি কিনতে আসা ব্যবসায়ী মালিকগন জানান, তিন সপ্তাহ আগেই বৈশাখী শাড়ী বিক্রি শুরু হয়েছে। সারা দেশে থেকে পাইকাররা এ হাটে শাড়ী কিনতে আসে।

এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় শতকোটি টাকার বৈশাখী শাড়ি-লুঙ্গি বিক্রি হবে বলে আশা করছি। তারা আরও জানান, বেলকুচি-এনায়েতপুরে তৈরী করা বৈশাখী শাড়ি দেশের চাহিদা পুরন করে ভারত সহ বিভিন্ন দেশের বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদেশী পাইকারী ক্রেতারা বৈশাখী শাড়ি লুঙ্গি কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

/আরএ

Comments