উত্তরাঞ্চলের তিন জেলায় নদী খনন প্রকল্প; পরিচালক নিয়োগ

প্রকাশিত: ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯


বাদশা আলম, বগুড়া প্রতিনিধি: দেশের উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বাঙালি, করতোয়া, ফুলজোড় ও হুরাসাগরের ২১৭ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং, পুনঃ খনন এবং তীর সংরক্ষনে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের পর গত ১০ জানুয়ারি প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে , চার বছর মেয়াদী ওই প্রকল্পনবাস্তবায়নের জন্য খুব শিগগিরই টেন্ডার আহবান করার কাজ সম্পন্নও হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের অধীনে প্রথমে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি তীর সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কংক্রিটের ব্লক (সিসি ব্লক) তৈরির কাজও দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হবে।

উওরাঞ্চলের এই নদীতে বালি আর পলি জমে নদীগুলোর তলদেশ ক্রমশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে। কোন বাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টির পানিতেই নদীগুলো ভরে যায় এবং দু’কূল উপচিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে এবং শত শত একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। খনন করা হলে বন্যার কবল থেকে ফসল যেমন রক্ষা পাবে তেমনি নদীতে পানি ধরে রাখার মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে ফসল সেচসহ মাছের উৎপাদনও বাড়বে। তাই এ প্রকল্প বাস্তবায়নের খবরে বেশ আনন্দিত হয়েছে নদীগুলোর তীরবর্তী লেকজন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে কাটাখালি ও এলাই নদীর মিলনস্থল থেকেই ‘বাঙালি’ নদীর উৎপত্তি। এরপর সেটি উত্তর থেকে দক্ষিণে বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেরপুর উপজেলার খানপুরে করতোয়া নদীতে গিয়ে মিলেছে।

সেখানে নদীটির নাম হয়েছে ‘করতোয়া’। এরপর ওই নদীটি সিরাজগঞ্জের নলকায় গিয়ে ‘ফুলজোড়’ নাম ধারণ করে শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ির দক্ষিণে হুরাসাগর নদীতে গিয়ে মিশেছে। তারপর সেই নদীর নাম হয়েছে ‘হুরাসাগর’- যেটি যমুনা নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তি স্থলে নদীটির গড় প্রশস্থতা ৯০ মিটার আর শেষ প্রান্তে সেই প্রশস্থতা বেড়ে হয়েছে ২০০ মিটার। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর বিভিন্ন অংশে ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত গভীর করা হবে।

মূলত নাব্যতা ফেরানো, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ভাঙন রোধ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে গেল বছরের মাঝামাঝি ‘বাঙালি-করতোয়া- ফুলজোড়-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং/পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়।

যাচাই-বাছাই শেষে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ প্রকল্পটি গত ৭ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর মধ্যে গাইবান্ধা সীমানায় ২৪ কিলোমিটার, বগুড়া সীমানায় ৯৯ কিলোমিটার এবং সিরাজগঞ্জে বাকি ৯৪ কিলোমিটার অংশ ড্রেজিং অথবা পুনঃ খনন করা হবে।

এর পাশাপাশি ভাঙ্গন প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত বগুড়া ৩২টি পয়েন্টে ১৯ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং সিরাজগঞ্জের ২২টি পয়েন্টে আরও ১৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার অংশে তীর সংরক্ষণ (সিসি ব্লক ফেলে মুড়িয়ে দেওয়া) করা হবে।

বাঙালি নদী তীরবর্তী বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি চেয়ারম্যান আব্দুল
ওয়াহাব জানান, নদী খনন এবং তীর সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করায় সন্তোষ
প্রকাশ করে বলেন, এক কালের খরস্রোতা বাঙালি নদী এখন মরা খালে পরিণত
হয়েছে। যদি নদীটি খনন করা হয় তাহলে এর নাব্যতা যেমন ফিরে আসবে
তেমনি শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি দিয়ে কৃষক ফসলের সেচও দিতে পারবে।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) বগুড়া’র নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, প্রকল্পের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন টেন্ডারের মাধ্যমে শুধু কাজটা শুরু করা বাকি। ধারণা করা হচ্ছে চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।

তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নদীটি এই অঞ্চলের আরও অন্তত ৫টি নদীর পানি বাঙালি, করতোয়া, ফুলজোড় ও হুরাসাগর ধারণ করতে পারবে। এর ফলে একদিকে যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে তেমনি শুস্ক মৌসুমে নদীতে পানি ধরে রাখাও সম্ভব হবে।

ফলে মাছের উৎপাদন বাড়বে এবং এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করাও সহজ হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

/আইকে

Comments