বগুড়ার ধুনটে বাঙ্গালী নদী থেকে ক্ষমতাসীন নেতার ছত্রছায়ায় অবাধে বালু উত্তোলনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৫:৫১ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০১৯

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বেড়েরবাড়ি এলাকায় বাঙ্গালী নদীর সরকারি নথিভুক্ত বালুমহাল গত বছর ইজারা দেওয়া না হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে নদী থেকে থামছে না অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এতে কৃষিজমি নদীতে বিলীনসহ বেড়েরবাড়ি ব্রীজটি ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু তোলায় তীর ভাঙছে। এতে তাদের কৃষিজমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী। এ কারণে প্রকাশ্যে এত দিন তাঁরা কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সোনাহাটা বাগবাড়ি পাকা সড়কের নিমগাছি বেড়েরবাড়ি বাঙ্গালী নদীর ওপর ২৮৬ মিটার দীর্ঘ সেতু রয়েছে। সেতুটি ধুনট উপজেলাকে গাবতলীকে সংযুক্ত করেছে। ২০১২ সালের জুলাইয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। সেতুর দুই পাশে ৬ একর আয়তনের সরকারি বালুমহাল রয়েছে। বালুমহালটি এর আগে ইজারা দেওয়া হতো।

সবশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটি এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয় প্রায় ৫ লাখ টাকায়। ওই বালু মহাল নিয়ে হাইকোর্টে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ কারণে গত বছর থেকে এটি আর ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বালু তোলা অব্যাহত রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মহাল থেকে নিমগাছি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী এর নেতৃত্বে তার ভাই বিনজার রহমান ওরফে বাটুল ও রায়হানসহ স্থানীয় ১৩ জন বাসিন্দা মিলে বালু তুলছেন। প্রতিদিন এই মহাল থেকে অন্তত ৬০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হয়। এই হিসাবে বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার বালু বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত রবিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বেড়েরবাডী এলাকার বাঙ্গালী নদীর উপর সেতুর দুই পাশেই কৃষিজমি ও সরকারি বালুমহাল। উত্তর পাশে রয়েছে চারটি খননযন্ত্র। শুকনো মৌসুম হওয়ায় নদীতে স্রোত কম। এ কারণে বালু রাখা হচ্ছে নদীতেই। এতে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কোনোমতে, পানি প্রবাহিত হচ্ছে নদীর একাংশ দিয়ে।

মহাল দেখাশোনা করছেন কয়েকজন শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে অন্তত ৫০ ট্রাক বালু উপজেলার ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

এ বিষয়ে বেড়েরবাড়ি গ্রামের অন্তত ১৫ জন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, বালু তোলার কারণে তাঁদের কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। এর আগে গ্রামবাসী মিলে উপজেলায় বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।এভাবে কৃষিজমি ধ্বংস করে বালু তোলার বিষয়ে বাধা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, নদীর চর থেকে বালু তুলে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা। এর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত। এ কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। অথচ বালুদস্যুদের কারণে নদীর দুই পাশের আবাদি জমি ও সেতু হুমকির মুখে পড়েছে।

এ ব্যাপারে বালু ব্যবসায়ী নিমগাছি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী বলেন, এই মহাল সরকারের কাছ থেকে এর আগে ইজারা নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সরকার সময়মতো মহালটি বুঝে দিতে পারেনি। তাই আমরা বালু তুলছি।

আরেক ব্যবসায়ী বিনজার রহমান বলেন, বালু তোলার কারণে কোনো কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে না। এ কারণে সেতুর সমস্যাও হচ্ছে না। সেতুর অনেক দূর থেকে বালু তোলা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা বলেন, হাইকোর্টের একটি জটিলতার কারণে গত বছর থেকে এই মহাল আর ইজারা দেওয়া হচ্ছে না। বালু তোলার কারণে সেতুও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে শুনেছি। এই কারণে সেখানে ঘন ঘন অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসনও অভিযান চালালেও অভিযানের আগেই তারা এলাকা থেকে পালিয়ে যান।

/আরএ

Comments