বদি নিজে আত্মসমর্পণ না করে, রয়েছেন ‘সমন্বয়কের’ ভূমিকায়!

প্রকাশিত: ৫:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯

একুশ সংবাদ: ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত কক্সবাজারের শতাধিক ইয়াবা চোরাকারবারি আত্মসমর্পণ করতে পারেন জানা গেছে।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সব কটি তালিকায় ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে চিহ্নিত টেকনাফের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি আত্মসমর্পণ করছেন না।

সরকারের তালিকাভুক্ত অন্য ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় তিনি অনেকটা ‘সমন্বয়কের’ কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে এলাকায় প্রচার ছিল সাবেক সাংসদ বদিও আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে- তিনি আত্মসমর্পণ করবেন না। ফলে আত্মসমর্পণকে ঘিরে ভীতি তৈরি হয়েছে।

এ ছাড়া আত্মসমর্পণকারীদের তিন থেকে ছয় মাস জেল খাটার পর মাফ করে দিতে পারেন এমন প্রচারও আছে এলাকায়।

কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সর্বশেষ করা ইয়াবা ব্যবসায়ীর এক হাজার ১৫১ জনের তালিকায় ৭৩ প্রভাবশালী ইয়াবাকারবারিকে (গডফাদার) চিহ্নিত করা হয়েছে।

ওই তালিকায় সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদিসহ ৩৪ সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি এবং বদির ৫ ভাই, ১ বোনসহ ২৬ জন নিকটাত্মীয়ের নাম রয়েছে।

এ ব্যাপারে আবদুর রহমান বদির দাবি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে তিনি নিরপরাধ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, ইয়াবা সিন্ডিকেট মোটা টাকা ঢেলে প্রশাসনের বিভিন্ন তালিকায় অন্যায়ভাবে আমার নাম ঢুকিয়েছিল। আমি ইয়াবা ব্যবসা করি না। যারা অপরাধী, তারাই এখন আত্মসমর্পণ করবেন।

আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনের কথা অস্বীকার করে বদি বলেন, আমি শুধু নির্বাচনের পর তাদের রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) করেছি। আমি বললাম, চোখের সামনে মানুষ মারা যাচ্ছে। স্ত্রী স্বামীহারা হচ্ছে, সন্তান বাবাকে হারাচ্ছে, সব জায়গায় ক্রন্দনের সুর। তোমরা আর কতদিন এভাবে চলবা? তোমরা আত্মসমর্পণ করার চেষ্টা করো। আমি এ কথাটুকু বলেছি। তারা স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করে ঢুকে গেছে।

ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় স্থান পাওয়া তার আত্মীয়স্বজনরা আত্মসমর্পণে রাজি হয়েছেন জানিয়ে বদি বলেন, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, ভাইবোন-ভাগ্নে যাদের নাম এসে পড়ছে, আমি বলছি- তোমরা আইনের আশ্রয় নাও। জড়িত আছে কি নেই, সেটি এখন বলব না। আদালতে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে।

এদিকে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন বলেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের কোনো একদিন আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা হতে পারে।

এতে শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করতে পারেন বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা চোরাকারবারিদের মধ্যে প্রথম দফায় ৮০ জন আত্মসমর্পণ করতে পারেন। তাদের কক্সবাজারে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় থাকা গডফাদারদের ৭৩ জনের ৬৬ জনই টেকনাফের বাসিন্দা। গত বছরের ৪ মে থেকে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়।

এর পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৪৩ দিনে ২৮৬ জন নিহত হন।

প্রসঙ্গত, দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য বদির বিরুদ্ধে ইয়াবাকারবারিদের মদদ দেয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে। ইয়াবা পাচারের ‘হোতা’ হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় নাম এসেছিল তার।

এসব কারণে সমালোচিত হওয়ায় বদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তার পরিবর্তে স্ত্রী শাহিন আকতার চৌধুরী নৌকার প্রার্থী হিসেবে কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এর আগে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হলেও আবদুর রহমান বদিকে ধরেনি পুলিশ। তখন সরকারের তালিকাভুক্ত এই ‘পৃষ্ঠপোষক’কে নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হয়। তবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের একটি মামলায় তিনি এক মাসের মতো জেল খাটেন।

/সিএইচ

Comments