ভোলার মেঘনা ও তেতুঁলিয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

প্রকাশিত: ৭:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০১৯

কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা: ভোলার জেলার সাত উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ২৫ রুটে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝুঁকিপূর্ণ নৌ-যান চলাচল করছে। প্রতিদিন এসব রুট দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা ও তেতুঁলিয়া পাড়ি দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।

এসব ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারে কারনে একের পর এক ঘটছে নৌ-দূর্ঘটনা। স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ৮ বছরে ছোট-বড় এসব রুটে নৌ-দূর্ঘটনা প্রায় দুই শতাধিক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি।

স্থানীয় সূত্রেগুলো থেকে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক নৌ-দূর্ঘটনায় ঘটে এসব রুটে। ট্রলার দূর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনায় ঘটে দুই বছর আগে। মনপুরার মেঘনায় যাত্রীবাহি ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১২ জনে প্রানহানি ঘটে। এছাড়া সারাবছর ছোট-ঘাট দূর্ঘটনায় আরো শতাধিক প্রানহানি হয় বলে বিআইডব্লিটিএ সূত্র নিশ্চিত করেন।

অন্যদিকে ভোলার তেতুঁলিয়া নদীর নাজিরপুরে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা ঘটে ২০০৯ সালে কোকো ট্রাজেডি। সেই দূর্ঘটনায় ৮৬ জনের প্রানহানি ঘটে। এসব রুটের যাত্রীদের অভিযোগ, নিয়মিত অভিযান, নৌ-যানের ফিটনেস পরীক্ষা না করা, চালকদের প্রশিক্ষণ না থাকা, জীবন রক্ষাকারি লাইফ বয়া, বৈরী আবহাওয়ায় সতর্কতা জারী না করা ও দূর্ঘটনার তদন্ত না করার ফলে কোনো নিয়ম মানছে না লঞ্চ-ট্রলার মালিকগন।

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ডেঞ্জার জোন পয়েন্ট দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার হচ্ছে নৌ-যান। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে যাত্রীদের জীবন। অভিযোগ উঠেছে, ঘাটগুলোতে সরকার দলীয় প্রভাবশালী চক্র ইজারাদার থাকায় প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ এসব নৌ-যান চললেও কোনো অভিযান নেই প্রশাসনের।

সুত্র আরো বলছে, ভোলার জলসীমার ১শ’ ৯০ কিলোমিটার এলাকাকে ডেঞ্চার জোনের আওতায় আনা হয়েছে, ওইসব পয়েন্টে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সি-সার্ভে ছাড়া সকল ধরনের নৌ-যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। কিন্তু সে নিয়ন মানাছে না প্রভাবশালীরা।

ভোলার ২৫ রুটে বিশেষ করে ভোলা-লক্ষীপুর, ইলিশা-বরিশাল, তজুমদ্দিন-মনপুরা, ধুলিয়া-ভেলুমিয়া, নাজিরপু কালাইয়া, দৌলতখান-সন্দিপ, বেতুয়া-মনপুরা, বকসি-চরমনহর, ঢালচর, পাতিলা, কুকরী-মুকরী, কচ্ছপিয়া রুটে ঝুঁকি অনেক বেশী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইঞ্জিন চালিত ফিটনেস ও অনুমোদনবিহীন অবৈধ ইঞ্জিন চালিত ছোট ট্রলারগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জেলা সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন মনপুরা ও হাতিয়াসহ অভ্যন্তরীণ চরের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌ-পথ। তাই এসব চরের সংযোগ পথেই চলছে অবৈধ ছোট ছোট ট্রলার।

ঝুঁকিপূর্ণ রুটগুলোর মধ্যে হাজিরহাট-কলাতলী, রিজিরখাল-চেয়ারম্যানের ঘাট, মনপুরা- তজুমদ্দিন,রামনেওয়াজ-কলাতলী, হাজিরহাট-মঙ্গল সিকদার, মনপুরা-ঢালচর, হাজিরহাট-চরফ্যাসন, জনতা বাজার-চরফ্যাশন, মনপুরা-সন্দিপ ও মনপুরা-চর নিজাম উল্লেখযোগ্য। এসব রুটে সুস্ক মৌসূমে শান্ত থাকলেও বর্ষা মৌসূমে অশান্ত হয়ে উঠে বেশী। এছাড়াও ডেঞ্জার জোনের আওতায় রয়েছে বেশীরভাগ রুটই।

মনপুরার রামনেওয়াজ ঘাটের যাত্রী মাষ্টার আঃ হাই, আমজাদ, আলাউদ্দিন, আঃআজিজ ও নাছির জানান, প্রয়োজনের তাগিতে আমরা জীবন বাজি রেখেই যাতায়াত করি। যে কোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা থাকে। নিরাপদ নৌ-যান চললে যাত্রীদের এমন ঝুঁকি নিতে হতো না।

হাজিরহাট এলাকার নাছিন উদ্দিন বলেন, ট্রলারগুলোর একটিরও ফিটনেস নেই, বৈরী আবাহওয়া উপেক্ষা করেই তারা উত্তাল মেঘনা নদী পার হয়। যাত্রীরা বাঁধা দিলেও জোরপূর্বক যাত্রী উঠিয়ে তারা পারাপার হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে ভোলা বিআইডব্লিটিএ’র সহকারী পরিচালক (বন্দর কর্মকর্তা) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, বেক্রসিং সনদ ব্যতিত সকল প্রকার নৌযান চলাচল সরকারী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এছারা উত্তাল মেঘনায় ট্রলার চলাচলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরেও যদি কেউ চলাচল করে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।নিরাপদ নৌযান চলাচলে ইতিমধ্যে ট্রাকফোর্স গঠন করা হয়েছে। দ্রুত এসব চলাচলকারী অনিরাপদ নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

/আরএ

Comments