সব কোচিং সেন্টার বেআইনি : শিক্ষামন্ত্রী 

প্রকাশিত: ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০১৮

একুশ নিউজ ডেস্ক : আগামী ২ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। আজ বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় শিক্ষা সচিবসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৭১ জন। গত বছর ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৬ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো। এবার মোট কেন্দ্র ২ হাজার ৫৪১টি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৮ হাজার ৯৪৩টি।

বাংলাদেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার ‘বেআইনি’ বলে জানালেও এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করতে পেরে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

তিনি বলেছেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সামনে রেখে আগামী ২৯ মার্চ থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া সারা দেশে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হবে।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে নাহিদ বলেন, “সব ধরনের কোচিং সেন্টারই বেআইনি। আমরা হয়ত আইন প্রয়োগ করে নিজেরা বন্ধ করতে পারি না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী (কোচিং সেন্টার) বন্ধ করে। কোনো ধরনের কোচিং সেন্টারই আইনগত অ্যালাউড না।”

কোচিং সেন্টার বন্ধ করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “হাই কোর্টের রায় আছে কোচিং সেন্টার, গাইড বই, নোট বই- এগুলো বেআইনি। কিন্তু তার পরেও আমাদের দেশে অনেক অপরাধ হচ্ছে, বেআইনি কাজ হচ্ছে। ইচ্ছে করলেই সব বন্ধ করে দেওয়া যায় না। তারপরেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের হাতে আইন প্রয়োগ করার ক্ষমতা বা শক্তি নাই, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট আছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে।”

এবারের এইচএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে ২ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত। আর ১৪ থেকে ২৩ মের মধ্যে হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।

‘আগের অভিজ্ঞতা’ কাজে লাগিয়ে এবার ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ায় এইচএসসিতে প্রশ্ন ফাঁস হবে না বলেই আশা করছেন শিক্ষামন্ত্রী।

“কিছু সঙ্কট আমরা মোকোবেলা করছি। আগের থেকে আরও বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছি, অনেক বেশি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, অনেক বেশি পদ্ধতি আমরা অ্যাপ্লাই করছি। এবং অনেক বেশি কৌশল অবলম্বন করছি। সেদিক থেকে আমরা আশা করতে পারি…।”

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ধারাবাহিকতায় এবার এসএসসিতে প্রায় সব বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষার আগের রাতে বা পরীক্ষার দিন সকালে ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে এইচএসসিতে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে লটারির মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এছাড়া এসএসসির মত এইচএসসিতেও পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষার হলে বসতে হবে। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন বা ডিজিটাল ডিভাইস বহনে নিষেধাজ্ঞাও আগের মতই বহাল থাকছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসিতে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বিবেচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

এসএসসিতে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ৫২টি মামলায় ১৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান মন্ত্রী।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সিলগালাসহ সিকিউরিটি কোডের মাধ্যমে ডাবল প্যাকেটে করে প্রশ্ন কেন্দ্রে পাঠানো হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রীয়ভাবে লটারির মাধ্যমে প্রশ্ন সেট নির্ধারণ করে সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে একাধিক প্রশ্নের সেট পৌঁছে দেয়া হবে।

নাহিদ আরও বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে এবার কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইলসহ কোনো ধরনের ডিভাইস সঙ্গে নিতে পারবে না। যদি কারও কাছে এ ধরনের ডিভাইস পাওয়া যায়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, এবার সারা দেশে ১০টি শিক্ষা বোর্ডে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় এক লাখ ২৭ হাজার ৭৭১ পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা ছয় লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ জন এবং মেয়েদের সংখ্যা ছয় লাখ ১৮ হাজার ৭২৮ জন।

তবে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় সারা দেশে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা কমে গেছে। এবার মোট দুই হাজার ৫৪১ কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের তুলনায় ৪৪টি কমেছে। এ ছাড়া বিদেশি সাতটি কেন্দ্রে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯৯ জন।

উল্লেখ্য, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আগামী ২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৩ মে পর্যন্ত।

/এসআর

Comments