রূপককে হত্যায় তিন বন্ধুর স্বীকারোক্তি, এজাহারভুক্ত আরো দুই আসামি গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ১২:১৯ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০১৯

ভৈরব প্রতিনিধি: ভৈরবে সহপাঠীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আরো দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

১ মে শনিবার সকালে র‌্যাব সদস্যরা শাহ সুফিয়ান (৩১) ও ইয়ারফাত পাটোয়ারী (২৩) নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক আমজাদ শেখ জানান, রূপক হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা নূরে আলম বিপ্লব বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের নামে একটি মামলা করেছেন শুক্রবার।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার শাহ সুফিয়ান হত্যাকাণ্ডে জড়িত রূপকের সহপাঠী রবিউল আওয়াল রাব্বির চাচা। শাহ সুফিয়ান একজন চাল ব্যবসায়ী এবং ইয়ারফাত পাটোয়ারী আরেক আসামি আরাফাত পাটোয়ারী পিয়ালের বড় ভাই। সে এবার নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে অনার্স ২য় বর্ষে ফাস্ট ক্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। শনিবার ভোরে শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়ার নিজ নিজ বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার রূপকের তিন সহপাঠী রেজাউল কবির খাঁ, রবিউল আওয়াল রাব্বি ও আরাফাত পাটোয়ারী পিয়ালকে শনিবার কিশোরগঞ্জের বিচারিক হাকিম আশিকুর রহমানের আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

তারা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে আদালতকে জানায়, মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তারা রূপককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।

এদিকে রূপক হত্যার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে ভৈরববাজার টিনপট্টি এলাকার ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল করে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কঠোর বিচার দাবি করেন।

শুক্রবার দুপুরে ফারদিন আলম রূপক (১৬) নামের এক শিক্ষার্থীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার ভিআইপি প্লাজা সংলগ্ন আইডিয়েল স্কুলের পেছনে আবু বক্কর মিয়ার ছয়তলা বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। বিল্ডিংয়ের মালিক আবু বক্কর মিয়া রূপকের সহপাঠী ও বন্ধু রবিউল আওয়াল রাব্বির (১৭) দাদা।

লাশ উদ্ধারের পরপর নিহত রূপকের সহপাঠী মৃত কামাল মিয়ার ছেলে রবিউল আওয়াল রাব্বি (১৭), একই এলাকার শাহাজাহান পাটোয়ারীর ছেলে মো. আরাফাত পাটোয়ারী (১৬) ও ভৈরব রাণীর বাজার এলাকার ফার্মেসি ব্যবসায়ী ওবায়দুল কবির খাঁর ছেলে রেজাউল কবির খাঁ (১৬) নামে তার তিন সহপাঠীকে আটক করে পুলিশ।

ফারদিন আলম রূপক (১৬) ভৈরব বাজারের টিনপট্টি এলাকার আল্টাটেক সিমেন্টের ডিলার ব্যবসায়ী নূরে আলম বিপ্লবের বড় ছেলে। রূপক সদ্যঘোষিত এসএসসি পরীক্ষায় স্থানীয় কেবি পাইলট সরকারি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে পাস করে। রূপকদের পিতৃভূমি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার গৌরীপুর পূর্বপাড়া গ্রামে। তারা বর্তমানে ভৈরব বাজারের টিনপট্টি এলাকায় হাজি ফুল মিয়ার বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলার ফ্লাটে ভাড়া থাকেন।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রূপক বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাবির নামাজ পড়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি। পরে রাতভর খোঁজাখুঁজি করে রাতেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা বিপ্লব। সকালে সাধারণ ডায়েরির বরাতে স্থানীয় র‌্যাব ক্যাম্পকেও জানান বিষয়টি।

এদিকে রূপককে ছাদে হত্যার পর লাশ বস্তবন্দি করে ওই তিন সহপাঠী রাতে এক সঙ্গে ঘুমায় রাব্বিদের বাসায়। রাতে ছাদে আসা যাওয়া এবং দিনের বেলা তাদের আচরণে ভিন্নতা দেখতে পান রাব্বির পরিবারের লোকজন। এ সময় তিনজনকে একসাথে জেরা করলে তারা রূপককে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে ছাদে রেখে দেওয়ার কথা জানায়। তারা তখন এদেরকে আটক রেখে তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশসহ রূপকের পরিবারকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বস্তাবন্দি থেকে গলাকাটা লাশ উদ্ধার করলে সেটি রূপকের বলে শনাক্ত করেন পরিবারের লোকজন।

আটককৃতরা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে আরাফাত পাটোয়ারী পিয়াল তার বন্ধু রূপককে মোবাইলে জরুরি কথা আছে বলে রাব্বিদের বিল্ডিংয়ে আসতে বলে। এর আগে তারা তিন বন্ধু সিদ্ধান্ত নেয় রূপককে ডেকে এনে আটক করে তার বাবার কাছে মুক্তিপণের টাকা চাইবে।

এদিকে রূপক বন্ধুর ফোন পেয়ে দ্রুত ওই বিল্ডিংয়ে গেলে তিন বন্ধু মিলে তাকে জাপটে ধরলে সে বাঁচার জন্য চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তার গলায় রশি দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তিন বন্ধু রূপকের গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে। এরপর রাতেই তিনজন মিলে বস্তায় রূপকের লাশ ভরে ছাদে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

এমএম/

Comments