রায়পুরে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে লাখ টাকা দালালের পকেটে!

প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৮

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পল্লী বিদ্যুতের মিটার সংযোগ ও লাইন নির্মাণের নামে গ্রামবাসীর কাছ থেকে মিটার প্রতি ১০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে দালালচক্রের প্রধান মোঃ ছিদ্দিক প্রধানিয়ার বিরুদ্ধে।

উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন থেকে এসব টাকা হাতিয়ে নেয় । দালাল চক্রকে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে পল্লী বিদ্যুতের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের লোকজন।

এ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রায়পুর জোনালে লিখিত অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে সত্যতা পেয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে আইগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন উপজেলা পল্লী বিদ্যুত সমিতি।

‘মিটার প্রতি ১০ হাজার টাকা দাও, সংযোগ নাও। নতুবা অন্ধকারে থাকো’ এমন বক্তব্য দালালদের। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ চরবংশীর চর লক্ষী, চর কাচিয়া, শেখপাড়া, মোল্লারহাট, হাজীমারা স্লুইচগেইট, ঝাউডগী, ক্যাম্পেরহাট, আবাবিল ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দালালচক্রের প্রধান মোঃ ছিদ্দিক প্রধানিয়া। তার হয়ে খলিফা বাজার থেকে মাঝি বাড়ি হয়ে হাজীমারা পর্যন্ত প্রায় ২৫০ গ্রাহকের টাকা তোলেন একই এলাকার রতন খলিফা।

কাসিম গাইনের বাড়ি থেকে হাজীমারা পর্যন্ত জালাল মেস্তরী, আবুল সরদার বাড়ি থেকে গনি সরদার বাড়ি পর্যন্ত ৫নং ওয়ার্ড শাহজালাল মাঝি, মোল্লারহাট থেকে হাজীমারা মোশারফ ডাক্তার বাড়ি থেকে কাসিম গাইনের বাড়ি পর্যন্ত মিকার করিম ও আলাল, খালের উত্তর পাড় থেকে হাজীমার পর্যন্ত হোসেন হাওলাদার ও মোসলেম, ৯নং ওয়ার্ডে ৬৮৫ গ্রাহক থেকে ওই ওয়ার্ডের মেম্বার ফারুক শেখের ছেলে রকি শেখ, মিয়ারহাট এলাকায় ছিদ্দিক মাষ্টার গ্রাহকদের কাছ থেকে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ ও লাইন নির্মাণের কথা বলে টাকা উত্তোলন করেন।

তারা মিটার সংযোগ, লাইন নির্মাণ ও ওয়ারিং বাবদ গ্রাহক প্রতি ১০-১১ হাজার টাকা আদায় করছে।

ওই এলাকার সোয়াব আলী সরদার জানান, তিনি একটি মিটারের সংযোগের জন্য সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়েছেন। একইভাবে ইমাম হোসেন সরদার ২টি মিটারে জন্য ১১ হাজার, সিরাজ ঢালী ৬হাজার ৫শ’, ফারুক সরদার ৮হাজার, সফেতন নেছা ১০ হাজার, সুফিয়া খাতুন ১০ হাজার, শাহনাজ ১১ হাজার, নুরু হক সরদার ১০ হাজার, সাবিয়া খাতুন ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন

এছাড়াও শামছুল হক সরদার, ইয়াজল সরদার, ছায়েদল সরদার ও আরিফ সরদার ৪টি মিটারের জন্য শাহজালাল মাঝিকে ২৯ হাজার টাকা দিলেও এখনো তাদের মিটার বা সংযোগ মেলেনি বলে তাদের অভিযোগ।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, দালালদের নির্দেশনা ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারের লোকজন লাইন নির্মাণ বা মিটার সংযোগ দেয় না।

বিদ্যুৎ সংযোগের কথা বলতে গেলেই পল্লী বিদ্যুতের ও ঠিকাদারের লোকজন দালালদের কাছে টাকা জমা দেওয়ার কথা বলে।

একটি মিটারের সার্ভিস তার লাগাতে গেলে পল্লী বিদ্যুতের লোকজনকে ২শ’ টাকা হারে ও মিটার লাগাতে গেলে ৫শ’ টাকা হারে উৎকোচ দিতে হয় বলে গ্রাহকদের অভিযোগ।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোঃ ছিদ্দিক প্রধানিয়া বলেন, গ্রামবাসী যদি দালাল হিসেবে আমার নাম বলে থাকে তবে পারলে পত্রিকায় আমার নাম লিখে দেন। এখানে আমার কিছুই বলার নেই।

টাকা আদায় প্রসঙ্গে শাহজালাল মাজি বলেন, আমি ওয়ারিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজের মজুরী বাবদ গ্রাহক প্রতি ৪ হাজার টাকা নিয়েছি।

এখান থেকে ছিদ্দিক মাষ্টারসহ অনেকেই টাকা নিয়েছেন। অহেতুক আমাকে জড়িত করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রায়পুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শেখ মনোয়ার মোরশেদ বলেন, বিদ্যুতের নামে গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে ছিদ্দিক মাষ্টারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান।

/আরএ

Comments