যশোরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছেই, নারীর মৃত্যু

প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি: ডেঙ্গু সচেতনায় প্রচারণাসহ নানা কার্যক্রমের মধ্যেও যশোরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছেনা। বরং তা বেড়েই চলেছে। নতুন করে যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা সবাই নিজ এলাকা থেকেই এডিস মশার কামড়ের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

গত কয়েকদিনে শুধুমাত্র যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামে ১১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সেখানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে তেমন কোন কার্যক্রম নেই বলে স্থানীয়রা আতংকে রয়েছেন। এদিকে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত যশোরে আরো ৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রেবেকা খাতুন (৫৫) নামে এক নারীর মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি মণিরামপুর উপজেরার পলাশী বাজাবাড়ি এলাকার সেকেন্দার আলীর স্ত্রী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, সোমবার দুপুরে ওই নারী ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

তিনি আরো জানান, ডেঙ্গু রোগী নিয়ে তাদের ধারণার পরিবর্তন ঘটছে। স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সোচ্চার ভুমিকা পালন করছেন। ফলে ভেবেছিলেন হয়তো ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। কিন্তু প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একাধিক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় রোগীর চাপ বেড়ে গেছে কয়েকগুন। রোগী ভর্তির তুলনায় জায়গা না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিপাকে রয়েছেন।

তিনি আরো জানান, গত ২৪ ঘন্টায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা গ্রহণে সুস্থ হয়ে মঙ্গলবার ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১শ ১০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী।

তিনি আরো জানান, ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষা নিরীক্ষায় ব্যবহৃত কিট এন এস -১ রিজার্ভে আছে ২ হাজার ৯শ ৯টি। এদিকে হাসপাতালে দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১ সপ্তাহে শুধুমাত্র যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামে ১১ জন নারী পুরুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

তারা হলেন ওই গ্রামের দবির উদ্দিনের ছেলে করিম (৪০), ওসমান আলীর ছেলে রহিত (২৫), আজিজার রহমানের ছেলে মনির (৩৫), দস্তক মোড়লের ছেলে মেহের (৪৭), আজিজুল ইসলাম (১৯), ইলিয়াসের ছেলে খাইরুল ইসলাম (১৯), সাহেগব আলীর ছেলে শামসুর রহমান (৫০), আহমেদ আলীর ছেলে রিপন (২৫), তোরাব আলীর ছেলে নাহিদ হাসান (১৬), সোহরাব হোসেনের ছেলে শিপলু (২২) ও তমিজ উদ্দিনের ছেলে ইব্রাহিম (২২)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বর্তমানে চুড়ামনকাটিতে জনমনে ডেঙ্গু জ্বর আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, সেখানে কোন ডেঙ্গু প্রচারণা বা প্রতিরোধে কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ৫ নম্বর চুড়ামনকাটি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান জানান, ডেঙ্গু জ্বর রোগী সনাক্তের পর তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে শ্রমিক দিয়ে এলাকার কিছু বন বাদাড় পরিস্কার করিয়েছেন।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, যশোরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। ফলে স্বাস্থ্য বিভাগও জোরালো সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে।

যশোর জেলায় মোট ২শ ১১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১শ ১০ জন, বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৫ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩৬ সজন। আর চিকিৎসা গ্রহণে ৮শ ৭২ জন সুস্থ হয়েছেন। ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে আরো নতুন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে।

Comments