ভৈরবে এইচআইভি-এইডস্ প্রতিরোধ ও হিজরা জনগোষ্ঠী উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা

প্রকাশিত: ১১:২০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৮

আফসার হোসেন তূর্য, ভৈরব: ভৈরবে এইচআইভি ও এইডস্ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসেবা এবং হিজরা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন বিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর এলাকায় বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টারে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ভৈরব সাব ডিআইসি আয়োজনে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ভৈরব সাব ডিআইসি ইনচার্জ মো. সিরাজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কেএনএম জাহাঙ্গীর, দৈনিক পূর্বকণ্ঠ সম্পাদক সোহেল সাশ্র, ভৈরব থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) বাহালুল আলম বাহার, সমাজসেবা কর্মকর্তা রিফাত জাহান ত্রপা।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট মো. আতাউর রহমান, আউটলেট ইনচার্জ মো. বোরহান উদ্দিন। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সঞ্চালনায় ছিলেন প্রতিষ্ঠানের পিয়ার এডুকেটর মো. দুলাল মিয়া।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, ভৈরব শহর যুবলীগ সাবেক সভাপতি শাহনেওয়াজ গাজী, ভৈরব থানা এসআই মো. হুমায়ুন কবির, লওয়ারস অ্যাডভোকেট রুবিয়া সাজ্জাদ ম্ক্তুা প্রমুখ।

এ সময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয় এ অফিস থেকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ৫৭০ জনকে সেবা প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে এমএসএম ২১২ জন, এসএসডাব্লিউ ৩১৭ জন ও হিজরা ৪১ জন।

এইচআইভি ও এইডস্ প্রতিরোধ কর্মশালার বক্তারা বলেন, এইডসের যেহেতু কোনো চিকিৎসা নেই তাই এর প্রতিরোধই হচ্ছে সর্বোত্তম প্রতিকার। অতত্রব, নিরাপদ যৌন অভ্যাস তৈরি করে, বহুগামিতা পরিহার করে, ধর্মীয় অনুশাসনে দাম্পত্য জীবনযাপন করে এবং গ্রহণ ও প্রদানকালে সতর্কতা অবলম্বন করাই এইডস থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায়।

এইচআইভি/এআইডিএস আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। মানুষ হিসাবে তার সব অধিকার নিশ্চিত করা সকলের সামাজিক কর্তব্য।

বক্তারা বলেন, শরীরে যদি যৌন-সংক্রমণজনিত কাঁচা ঘা, বা যোনিতে চিকিৎসা করা হয়নি এমন সংক্রমণ থাকে, তাহলে এইচআইভি ভাইরাস মিউকাস মেমব্রেনের মাধ্যমে রক্তে সহজেই মিশে যেতে পারে। তাই কোনো যৌন সংক্রমণ হয়ে থাকলে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

অনেকেই মনে করেন বিবাহ বহির্ভূত কিংবা যৌনকর্মীদের সঙ্গে যৌনমিলনের মাধ্যমে এবং মাদকসেবীরাই শুধুমাত্র এইচআইভি সংক্রমিত হয়। এ ধরনের কাজকে নৈতিকতা বিরোধী হিসাবে গণ্য করে কেউ কেউ এদেরকে শাস্তি দেয়ার কথা ভাবেন। এ কারণে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি অবজ্ঞা দেখানো হয়, তাকে অপবাদ দেয়া হয়, তার প্রতি বৈষম্য দেখানো হয় এবং তাকে অবহেলা করা হয়। এমনকি অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়।

যেমন: তার সঙ্গে ভালো আচরণ না করা, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা, শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ না দেয়া ইত্যাদি। ফলে, এইচআইভি/এইডস রোগী প্রয়োজনীয় মানসিক সেবা ও শুশ্রুষা থেকে বঞ্চিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অবস্থা নিয়ে ভীত থাকেন এবং রোগের কথা গোপন করেন। এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ কার্যক্রম ব্যহত হয়। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি আতঙ্কিত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।

বক্তারা বলেন, এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধের জন্যে যৌনরোগ সর্ম্পকে জানা দরকার। সাধারণত কনডম ছাড়া যৌনমিলনের মাধ্যমে যৌনরোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। এই জীবাণুগুলো সন্তান জন্ম দেয়ার সঙ্গে শরীরের যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো যুক্ত সেগুলোকে আক্রান্ত করে। এসব যৌনরোগ হলো গনোরিয়া, সিফিলিস, ক্ল্যামাইডিয়া, জেনিটাল হারপিসম এইচআইভি হত্যাদি।

যৌনরোগের সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে আক্রান্ত ব্যক্তি মারাত্মক ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। তার অনেক ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক নিয়মে যৌনরোগের চিকিৎসা করতে হবে।

স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য নারী বা পুরুষের সাথে যৌন মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলেই এইচআইভি এইডস্ থেকে বাঁচা যাবে।

/আরএ

Comments