বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষায় দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন বিলি!

প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০১৮

এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় কেন্দ্র সচিব টঙ্গী পাইলট হাইস্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন ও সহকারী কেন্দ্র সচিব এম এ ফারুককে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁদের পদে পার্শ্ববর্তী টঙ্গী সরকারি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালকে কেন্দ্র সচিব ও একজন সহকারী অধ্যাপককে সহকারী কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি তদন্ত করতে গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানায়, সোমবার ছিল এইচএসসির বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা। রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এদিন নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হলে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ভুলবশত বাংলা প্রথমপত্রের পরিবর্তে দ্বিতীয়পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নপত্র বিতরণ করে। পরীক্ষার্থীরা এ প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শকদের বিষয়টি অবহিত করে। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে সব পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ওই প্রশ্নপত্রগুলো ফেরত নেয়।

পরে নির্ধারিত বাংলা প্রথমপত্রের বিষয়ের প্রশ্নপত্র টঙ্গী মডেল থানা থেকে এনে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়। নির্ধারিত প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে বিতরণ করতে প্রায় এক ঘণ্টা দেরি হওয়ায় পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীরা হট্টগোল শুরু করে। প্রশ্নপত্র বিতরণ করতে বিলম্ব হওয়ার সময়টুকু পুষিয়ে নিতে দুপুর ১টার পরিবর্তে ২টা পর্যন্ত পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় টঙ্গীতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী জানান, বাংলা প্রথমপত্রের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন পেয়ে সময় মতো পরীক্ষা শেষ হয়। পরে সৃজনশীল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর দেখি বাংলা প্রথমপত্রের পরিবর্তে দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়েছে। বিষয়টি পরে কক্ষে দায়িত্বপালনরত শিক্ষককে জানান তাঁরা।
এদিকে রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা বেলা ১টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষার্থীরা কেউ পরীক্ষার হল থেকে বাইরে বের না হওয়ায় কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমান অভিভাবকদের মধ্যে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মুখ না খোলায় আশেপাশের অন্য কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ এলাকায় বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে পরীক্ষার হলের ভেতরে কী হচ্ছে তা জানতে কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে বেলা ২টার দিকে পরীক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে এলে দেরী হওয়ার কারণ জানতে পারেন অভিভাবকসহ অন্যরা।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. দিদারে আলম মাকসুদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ট্রেজারি থেকে প্রশ্ন থানায় নেওয়ার আগে শটিং করার বাংলা দ্বিতীয়পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নের প্যাকেটের গায়ে ভুল করে প্রথমপত্র লেখা হয়েছিল। পরীক্ষার দিন ওই প্যাকেট খুলে বিতরণ করতে গিয়ে তা ধরা পড়ে। পরে তা থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের ট্রাংক থেকে আবার তা পরিবর্তন করে আনা হয়। এতে ওই পরীক্ষা শুরু করতে ৫৫ মিনিট বিলম্ব হয়েছে। পরে পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করায় দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার কারণে কেন্দ্র সচিব টঙ্গী পাইলট হাইস্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন ও সহকারী কেন্দ্র সচিব এম এ ফারুককে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের স্থানে পার্শ্ববর্তী টঙ্গী সরকারি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালকে কেন্দ্র সচিব ও একজন সহকারী অধ্যাপককে সহকারী কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেবেকা সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্যের মধ্যে একজন হলেন- জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং অপরজন হলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড অফিসকেও অবগত করা হয়েছে।

Comments