‘বাংলাদেশ স্বপ্নের মত এগিয়ে যাচ্ছে’

প্রকাশিত: ৫:৪৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০১৮

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)-এর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং-এ তিনি মন্তব্য করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এনইসি চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫শ ৯৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয় ।
মন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থ বছরটি অর্থনীতির এলাকায় ইনশাল্লাহ অনেক সুখকর সংবাদ বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিয়ে আসবে। কারণ বহির্বিশ্বে ২০০৮ সাল থেকে গত নয়টি বছর যে অর্থনৈতিক মন্দাভাব ছিল, আজকে উন্নত বা উন্নয়নশীল কোন অর্থনীতিতেই সেটি আর পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সর্বত্রই অর্থনীতিতে আজ চাঙ্গা ভাব। কোথায়ও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি নেই, বেকারত্বও কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের কাছাকাছি দুইটি শক্তিশালী অর্থনীতি হলো ভারত ও চীন। ভারতে এ বছরের শুরুতে বৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৬.৫ শতাংশ। অতি সম্প্রতি তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন তাঁদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.২ ভাগ। অন্যদিকে চীনের প্রবৃদ্ধিও ভাল অবস্থানে আছে, ৬.৫ শতাংশ; এমনকি জাপানেও ঋনাত্মক প্রবৃদ্ধি আর নেই। সার্বিক বিবেচনায় আমরা প্রত্যাশা করছি আমাদের জিডিপি’তেও প্রবৃদ্ধি গত বছরের চাইতে এ বছর আরো ভালো অবস্থানে জায়গা করে নিবে। গত বছর আমাদের যে যে খাতগুলি একটু খারাপ অবস্থানে ছিল যেমন- রপ্তানী বাণিজ্য, আবাসন খাত, রেমিটেন্স এই সকল খাতগুলি এ বছরে অনেক শক্তিশালী।

মূল্য স্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে মূল্য স্ফীতিও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত, এ মুহূর্তে মাত্র ৫.৭২ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বা এডিপি’র মাধ্যমে আমরা সরকারি বিনিয়োগ করে থাকি। এই এডিপি বাস্তবায়নে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এজেন্সিগুলো আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এবং এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ এডিপি আমরা চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। এডিপি বাস্তবায়নের পরিমাণ গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৩৪,৬৭৫ কোটি টাকা, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর ছিল ৪৫,৫৩২ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থ বছরে এডিপি’র বাস্তবায়নের পরিমাণ ৬২,৩৭২ কোটি টাকা।

সঠিকভাবে বছরের বাকী ৪ মাস এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারলে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত খাতগুলোতে যথাযথ বরাদ্দ প্রদান করলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আজকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সংস্থার নিজস্ব তহবিলসহ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫শ ৯৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বরাদ্দ কমেছে।

সংশোধিত এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিলের (জিওবি) অপরিবর্তিত বরাদ্দ রয়েছে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে মূল বরাদ্দ ৫৭ হাজার কোটি টাকা থেকে কমেছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ হাজার ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়ন অনেক বাড়বে। কেননা আবহাওয়া ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, হলি আর্টিজান হামলার কারণে অনেকটা সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই বৈদেশিক সহায়তা থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বাদ দিতে হয়েছে। আগামীতে যদি কোন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত অর্থেও প্রয়োজন হয় তাহলে সেটি আমি বিবেচনা করে বরাদ্দ দেব। এই দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়েছেন। প্রকল্প যাতে ঘনঘন সংশোধন করা না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব¡ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রকল্প বাস্তায়নের মান যাতে নিশ্চিত হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে।সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, পরিবহন খাতে ৩৭ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ২২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৬ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সংশোধিত এডিপিতে অন্যান্য কয়েকটি খাতের বরাদ্দ হচ্ছে, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ১৫ হাজার ২১৩ কোটি টাকা, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১৪ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য,পুষ্টি,জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৫ হাজার ২৮৩ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রকল্প সংখ্যাও। মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৩০৮টি। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে এসে মোট প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৫৮টিতে। ফলে মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প বেড়েছে ৩৫০টি। এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অনুমোদনহীন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ২৭টি। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্তে অনুমোদন ও বরাদ্দহীন ভাবে ২৬৮টি প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পিপিপির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনাশিপ) প্রকল্প রয়েছে ৩০টি। এছাড়া ৩০০টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

#এএইচ/একুশ নিউজ

Comments