টঙ্গীতে ইজতেমায় হামলার প্রতিবাদে আলেমদের সংবাদ সম্মেলন; ৬দফা দাবি

প্রকাশিত: ৫:১৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০১৮

আহমাদ সাঈদ, একুশ প্রতিবেদক: টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ওলামায়ে কেরাম।

রোববার পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে তাবলিগের শুরা ও ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে ৬দফা দাবি পেশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তাবলিগের অন্যতম মুরুব্বি মাওলানা মুফতি আমানুল হক।

সম্পূর্ণ লিখিত বক্তব্য:-

প্রিয় সাংবাদিক ভায়েরা!

আপনারা অবগত আছেন যে, গতকাল টঙ্গী ইজতেমা মাঠে তাবলীগী সাথী ও মাদরাসার ছাত্রদের ওপর অত্যন্ত নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।

আপনারা জানেন, আগামী ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি’১৮ ইজতেমার ১ম পর্ব অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ইজতেমাকে কামিয়াব করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয়।

এ কাজ বিভিন্ন কারণে বিলম্ব হয়েছে। ফলে তাবলীগের সাথী ও ঢাকার বিভিন্ন মাদরাসার ছাত্ররা তিনদিনের জামায়াত করে মাঠের কাজে নিয়োজিত ছিল।

এমতাবস্থায় নিজামুদ্দীনের মাও. সাদপন্থী বাংলাদেশের ওয়াসিফুল ইসলাম ও নাসিমগং এর অনুসারীরা নিরস্ত্র-নিরীহ তাবলীগের সাথী ও মাদরাসার ছাত্র, ওলামায়ে কেরামের উপর লাঠি-ছোটা ও ধারালো অস্ত্র, ইট-পাটকেল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, এ অবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নীরব ও রহস্যজনক। পুলিশ দাঁড়িয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। শুধু তাই নয় বরং গেইট ভেঙ্গে তাদেরকে ভেতরে প্রবেশ করতে সহায়তা করেছে।

কিন্তু ইতিপূর্বে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছিল আপনারা ভেতরে অবস্থান করেন, আমরা আছি। বাহির থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্রে দেখা গেলো ভিন্ন। সরকার জোড় স্থগিত করেছে, তাহলে প্রশ্ন হলো- সারাদেশ থেকে এসব হাজার হাজার সাদপন্থী টঙ্গীতে একত্রিত হলো কীভাবে? এ প্রশ্নের জবাব জাতি জানতে চায়।

হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করে যাকেই সামনে পেয়েছে তার উপরই তারা হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শত শত ছাত্র ও সাথীকে রক্তাক্ত করেছে।

এ হামলায় নিহত হয়েছে মুন্সিগঞ্জের ইসমাইল মন্ডল ও আহত হয়েছে প্রায় পাঁচশতাধিক; যারা টঙ্গীর আশপাশের হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

প্রকাশ থাকে যে, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বেশ কিছু মাদরাসার শিশু ছাত্রদের চিত্র দেখানো হয়েছে। তারা টঙ্গী মাঠের ভেতরে অবস্থিত মাদরাসার ছাত্র।

তারা সার্বক্ষণিক সেখানে থেকে পড়াশোনা করে। বাহির থেকে কেউ প্রবেশ করেনি। হামলাকারীরা সেখানের মাদরাসা ভবন মুরুব্বীদের আসবাবপত্র ভেঙ্গে তছনছ করে অগ্নিসংযোগ করে।

প্রিয় সাংবাদিক ভায়েরা!
আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ প্রায় শতাব্দী কাল যাবৎ অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিলো।

তিন হযরত তথা হযরতজী ইলিয়াস রহ. (১৯২৪-১৯৪৫) হযরতজী ইউসুফ রহ. (১৯৪৫-১৯৬৫) হরতজী এনামুল হাসান (১৯৬৫-১৯৯৫) পর্যন্ত এ কাজে কোন মতবিরোধ ছিলো না।

তাদের ইন্তেকালের পর একক আমীর নিয়োগের ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেয়। তখন সকলের ঐক্যমতে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় এ কাজে একক কোন আমীর আসবে না; বরং শুরা ও তাৎক্ষণিক ফয়সালার মাধ্যমে সকল কাজ সম্পাদিত হবে।

উল্লেখ্য যে, তৃতীয় হজরতজী দশজনের তালিকা প্রস্তুত করে যান। সে মতে ১৯৯৫ থেকে প্রায় ২০ বছর শুরারভিত্তিতে এ কাজ পরিচালিত হয়ে আসছিলো।

হঠাৎ করে মাওলানা সা’দ সাহেব নিজেকে আমীর বলে দাবী করেন। অথচ কোনো পরামর্শ সভাতে তাকে আমীর নিযুক্ত করা হয়নি।

অধিকন্তু তিনি বিভিন্ন সময় কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী এমন কিছু বক্তব্য প্রদান করছেন। যার উপর উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম দেওবন্দসহ সারা বিশ্বের হকপন্থী আলেম সমাজ আপত্তি করে আসছেন।

কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় তিনি সকল ওলামায়ে কেরামের মতামতকে উপেক্ষা করে নিজ অবস্থান থেকে ইসলাম বিরোধী বক্তব্য অব্যাহত রাখেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাওয়াত ও তাবলীগের এ সুন্দর কাজের মাঝে মতবিরোধ দেখা দেয়।

এমতাবস্থায় হকপন্থী সকল ওলামায়ে কেরাম সিদ্ধান্ত নেন মাওলানা সা’দ তার শরীয়ত বিরোধী বক্তব্য প্রত্যাহার ও দারুল উলূম দেওবন্দের আস্থা অর্জন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের ক্ষেত্রে তার কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না।

এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে দাওয়াত তাবলীগের সাথীদের মাঝে বিভক্তি ঘটে। সিংহভাগ সাথী ওলামাদের সাথে একাত্ততা ঘোষণা করে শুরাভিত্তিক দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অপরদিকে ক্ষুদ্র একটি; যার সংখ্যা অতি নগন্ন।

বাংলাদেশে ওয়াসিফুল ইসলাম ও সাহাবুদ্দিন নাসিমের নেতৃত্বে মাওলানা সা’দ সাহেবের অনুসারণে তৎপর হয়ে উঠে এবং তারা ওলামায়ে কেরাম ও আলেমদের সাথী তাবলীগের সাথে বিভিন্ন জায়গায় মারমুখী আচরণ করতে থাকে।

তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল টঙ্গী ময়দানে নির্মমভাবে হামলা; যা নজির বিহীন তা-ব চালায়। তার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এ হামলাতে গোটা আলেম সমাজ তথা সারা মুসলিম উম্মাহ হতবাক ও চরমভাবে মর্মাহত।

আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা কিছু দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

দাবীসমূহ
১. এ হামলার নির্দেশদাতা ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন নাসিমগংসহ হামলার সাথে জড়িত সকলকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
২. আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. টঙ্গী ময়দান এতদিন যেভাবে শুরাভিক্তিক পরিচালিত তাবলীগের সাথী ও ওলামায়ে কেরামের অধীনে ছিলো তাদের কাছেই হস্তান্তর করতে হবে।
৪. অতিসত্তর কাকরাইলের সকল কার্যকলাপ হতে ওয়াসিফ ও নাসিমগংকে বহিষ্কার করতে হবে।
৫. সারাদেশে ওলামায়ে কেরাম ও শুরাভিত্তিক পরিচালিত তাবলীগের সাথীদের ওপর হামলা-মামলা বন্ধ করে পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. টঙ্গীর আগামী এজস্তেমা যথাসময় পূর্ব ঘোষিত (১৮, ১৯, ২০) অনুষ্ঠানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কর্মসূচী
১. আগামীকাল সারা দেশে জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান।
২. বাকী কর্মসূচী পরবর্তীতে জানানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে যারা উপস্থিত ছিলেন
 আল্লামা আশরাফ আলী, সিনিয়র সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল
আরাবিয়া
 আল্লামা আবদুল কুদ্দুস, মহাসচিব, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া
 মাওলানা যোবায়ের আহমাদ (কাকরাইল)
 মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী, সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া

 মাওলানা নূর ইসলাম, সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া
 মাওলানা মাহফুজুল হক, যুগ্ম মহাসচিব, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া
 মাওলানা আবদুল বার (কাকরাইলের মুরব্বি)
 মুফতি জহির ইবনে মুসলিম, মুহাদ্দিস
 মুফতি আমানুল হক, তাবলিগের অন্যতম মুরব্বি
 মাওলানা বাহা উদ্দিন যাকারিয়া, মুহতামিম, আরজাবাদ মাদরাসা, মিরপুর
 মুফতি শফিকুল ইসলাম, মুহতামিম, জামিয়াতু ইব্রাহিম, সাইনবোর্ড,
চিটাগাং রোড
 মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, মুহতামিম, মাদারাসা হামিউস সুন্নাহ,
গুলশান
 মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী প্রমুখ।

/আরএ

Comments