জামায়াত-নেতৃত্ব পরিচালনা; হোঁচট জাতীয় ঐক্য

প্রকাশিত: ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার: আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর মাত্র চারদিনের মাথায় বড় হোঁচট খেল ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’। রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে উদ্যোক্তারা শনিবার এই ঐক্যের বার্তা দিলেও বিএনপির জোটে থাকা জামায়াতের পরোক্ষভাবে বৃহত্তর ঐক্যেও যুক্ত থাকায় প্রবল আপত্তি তুলেছে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা।

দলটির পক্ষ থেকে বিএনপিসহ বৃহত্তর ঐক্যের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি দল ও শীর্ষ নেতাদের লিখিতভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে হলে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে আসতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসায় অনুষ্ঠিত যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের বৈঠকে বিকল্পধারার পক্ষ থেকে দেয়া একটি লিখিত প্রস্তাবনায় এই শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে অধ্যাপক বি. চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কথা পরিস্কার, আমাদের বৃহত্তর এই ঐক্যে স্বাধীনতাবিরোধী কেউ থাকতে পারবে না। কেবলমাত্র স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষের সবাইকে নিয়ে এই ঐক্য হবে। এ ব্যাপারে বৈঠকে আমাদের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে।’

এছাড়াও ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’-কে যৌথ নেতৃত্বে পরিচালনা এবং সমন্বয়হীনতা কাটাতে একটি কেন্দ্রীয় লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গতকাল বিকাল চারটায় এই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাড়িতে। তবে সেখানে বি. চৌধুরীর উপস্থিত থাকতে অস্বীকৃতিসহ কয়েকটি বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়ায় শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত হয় বি. চৌধুরীর বাসায়। অসুস্থতার কথা জানিয়ে ড. কামাল বৈঠকে যাননি।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও গেছেন শুধু দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বৈঠকে বি. চৌধুরী ছাড়াও জেএসডি সভাপতি ও যুক্তফ্রন্ট নেতা আ স ম আবদুর রব এবং তার স্ত্রী মিসেস তানিয়া রব, জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও যুক্তফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, নাগরিক ঐক্যের ডা. জাহেদ উর রহমান এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন ছাড়াও গণফোরামের দুই নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বিএনপির টুকু উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দলের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক হিসেবে এখানে এসেছি। বৃহত্তর যে জাতীয় ঐক্য সেটির লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের বিষয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমি বলেছি- শনিবার আমাদের সমাবেশ আছে, সমাবেশের পর এই কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলে ভালো হবে। বিএনপির এই অনুরোধে সবাই একমত হয়েছেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বি. চৌধুরী বলেন, বিএনপির অনুরোধ অনুযায়ী তাদের সমাবেশের পর লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের বিষয়টি আসবে, তখন জামায়াতের বিষয়েও বিএনপি তাদের অবস্থান জানাবে বলেছে।’বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা জানান, বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের হাতে বিকল্পধারার পক্ষ থেকে যে লিখিত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তাতে বলা আছে, ‘বিএনপির সঙ্গে ঐক্য চায় বিকল্পধারা, তবে স্বাধীনতাবিরোধী কাউকে শরিক হিসেবে রাখলে দলটির সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না’। মাহী বি. চৌধুরীও গতকাল বৈঠকের প্রাক্কালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিকল্পধারা কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য করতে চায়-এর একটি প্রস্তাবব আমাদের দলের নেতারা তৈরি করেছেন। সেটিই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের কাছে দেয়া হচ্ছে।’

বিকল্পধারার দাবি, দলের যৌথসভায় এই প্রস্তাবনা তৈরী করা হয়েছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র সঙ্গে আমরা জাতীয় ঐক্য চাই। তবে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দলকে বা ব্যক্তিকে শরিক রাখলে বিএনপিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যাবে না। স্বাধীনতাবিরোধী দল বা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বিএনপি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মঞ্চে স্থান পেতে পারে না।

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, জাতীয় সংসদে কোনো একটি দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। সংসদে, মন্ত্রিসভায় এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ভারসাম্যের রাজনীতির ভিত্তিতেই জাতীয় ঐক্য হতে হবে। এই দাবিকে যারা অগ্রাহ্য করবে তাদের ঐক্য প্রক্রিয়ায় নেয়া যাবে না

এদিকে, সৃষ্ট মতপার্থক্যের মধ্যেই আজ বুধবার বিকাল তিনটায় রাজধানীর রমনায় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে পেশাজীবীদের মতবিনিময় সভা ডেকেছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ড. কামাল হোসেন।

/এমএম

Comments