কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৪:০৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮

জাতীয় সংসদে বক্তব্যরত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার :   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘সরকার চায় দেশ এগিয়ে যাক, উন্নত হোক। দেশকে নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলুক, সেটি আমরা চাই না। কেউ দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে যুক্ত কিংবা অপরাধী যেই হোক, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপি নেত্রী কারাগারে যাবেন, সেটি আগেই তারা টের পেয়েছিল কি না জানি না। রায় হওয়ার আগেই রাতারাতি বিএনপি তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা পরিবর্তন করেছে। এই ধারায় দুর্নীতিগ্রস্ত কিংবা সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি নেতা হতে পারতেন না। রাতারাতি গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিএনপি দুর্নীতিকেই মেনে নিল, দুর্নীতিগ্রস্তকে নেতা হিসেবে মেনে নিল। যে দল দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে নেয়, অর্থাৎ দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্তকে নেতা হিসেবে মেনে নেয়, সেই দল দেশকে কী দিতে পারে?’

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আদালত রায় দিয়েছেন। এখানে সরকারের তো কোনো হাত নেই। বিচারক রায় দিলেন কেন, সেজন্য অনেক বিএনপি নেতাও হুমকি দেন। তবে কি অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে বাংলাদেশ? এটা তো আমরা হতে দিতে পারি না।’

দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার জনগণ ভোগ করবে। তার সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। নিজেদের লোককেও ছাড় দেওয়া হয় না। এমনকি মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে, যেকোনো সময় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আদালত থেকেও ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমরা আইন মানি, কখনো নিজেদের দোষকেও ঢাকার চেষ্টা করি না।’

তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে যে ধরনের মামলা দিয়েছে, সেই একই ধরনের মামলা আমার বিরুদ্ধেও দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়ে সব কাগজপত্র পরীক্ষা করেছে, এতটুকু ফাঁক পাওয়া যায় কি না। শত চেষ্টা করেও ট্রাস্টের এতটুকু অনিয়ম তারা পায়নি। তবে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে ১৬ থেকে ১৭শ’ শিক্ষার্থীকে যে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়, সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই সময় অনেক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। টাকার অভাবে ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় আহতদের সহযোগিতা দেওয়া যায়নি। এতে তাদেরও অসহনীয় কষ্ট করতে হয়েছে।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে আসা টাকা খালেদা জিয়াসহ তার ছেলে ও অন্যদের আত্মসাৎ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, ‘এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল ২৭ বছর আগে। কিন্তু সেই এতিমদের টাকা কোথায়? তখনকার দিনে ২ কোটি টাকার অনেক মূল্য ছিল। ওই সময় দুই কোটি টাকা দিয়ে ধানমন্ডিতে সাত/আটটি ফ্লাট কেনা যেত। সেই টাকার লোভ বিএনপি নেত্রী সামলাতে পারেননি। এতিমের হাতে একটি টাকাও তুলে দেননি, পুরো টাকাই মেরে খেয়েছেন।’

খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওযার পর তার ছেলে তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী জেলে যাওয়ার পর যাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো সেও দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ফেরারি আসামি। বিএনপির নেতৃত্বে কি একজনও ছিল না যে তাকে দায়িত্ব দিতে পারত? বিএনপির অধিকাংশ নেতার নামেই দুর্নীতির মামলা রয়েছে। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রয়েছে, কেউ কেউ সাজাপ্রাপ্ত। খালেদা জিয়া জানেন, যাদের দায়িত্ব দেবেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির মামলা রয়েছে। বিএনপির সবাই তো দুর্নীতিগ্রস্ত, সবার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। যদি তাই না হয়ে থাকে তাহলে বিএনপি নেত্রী দলে একজনকেও খুঁজে পেলেন না যাকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন। সবকিছু জেনেই বিএনপি নেত্রী যদি দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমানের হাতে দায়িত্ব দিয়ে থাকে তাহলে কোনো কিছু বলার নেই।’

তিনি বলেন, ‘যে রাজনৈতিক দল দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজকে গ্রহণ করে, সেই দল কীভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারে? এরা হত্যা-দুর্নীতি-লুণ্ঠন-অর্থপাচার এসবই করতে পারে, জনগণের কল্যাণ করতে পারে না।’

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একজন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি আছেন, তিনি এখন বড় বড় কথা বলেন। সংসদে একটি গাধার গল্প বলেছিলাম। এতে তিনি নাকি মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাদের মতো শিক্ষিত লোকদের গাধা বলা হয়েছে। আমি তো একটা গল্প বলেছিলাম মাত্র। এখন কেউ যদি নিজেকে গাধা বলে মনে করেন সেখানে আমার তো কিছু করার নেই।’

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর টাকায় ইত্তেফাক গঠন হয়েছিল। এটা আওয়ামী লীগেরও সম্পদ। অথচ সেই ইত্তেফাকের টাকায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে ওই ব্যক্তিটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। সেই ব্যক্তির মুখে এখন গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়, গণতন্ত্রের সংজ্ঞা শুনতে হয়- এটা দুর্ভাগ্যজনক। এই ব্যক্তিটি তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে অনেকবার এসেছিলেন উপদেষ্টা হতে, তিনি করনেনি। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো। মামলা মোকাবিলার জন্য জোর করে বিদেশ থেকে ফিরে আসি। তখন আমাকে ওই ব্যক্তিটি ফোন করে বলেছিলেন, দেশে ফেরার দরকার নেই। আমি বলেছিলাম, কেন আসবেন না। আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, মামলা মোকাবিলা করব।’

Comments