আইন ছাড়া অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধন নয় নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:২০ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০১৮ অনলাইন ডেস্ক : দেশের অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর নিবন্ধন দিতে প্রায় তিন বছর আগে আবেদন আহ্বান করে সরকার। নিবন্ধন পেতে দুই হাজারেরও বেশি অনলাইন গণমাধ্যম আবেদন করে। কিন্তু এ পর্যায়ে এসে কোনো ধরনের আইন ছাড়া অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর নিবন্ধন দিতে রাজি নয় তথ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, আবেদন আহ্বানের পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য অধিদফতরে দুই হাজার ১০৮টি অনলাইন গণমাধ্যমের আবেদন জমা পড়েছে। গত বছর চূড়ান্ত হওয়া অনলাইন নীতিমালায় এসব গণমাধ্যম নিবন্ধনে সম্প্রচার কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে সম্প্রচার কমিশন গঠনের ‘জাতীয় সম্প্রচার কমিশন আইন’- এর কোনো খবর নেই। কেউ জানেনও না, কবে নাগাদ এ সম্প্রচার কমিশন হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রচার কমিশন আইন ছাড়া আপাতত অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর নিবন্ধন দেয়ার কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই সরকারের। আইনটি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে, তবে তা খুবই ধীরগতিতে। তাই নিবন্ধন দেয়ার কাজটি এখন বলতে গেলে অনেকটাই স্থবির। অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এখনও দেরি আছে। আমরা প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করছি। সম্প্রচার আইন হবে, সম্প্রচার কমিশন হবে। এর সঙ্গে মিলিয়েই আমরা পদক্ষেপ নেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা আবেদন করেছেন তাদের নিবন্ধন দেয়ার কোনো প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। আমরা পিআইডির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছি। যাচাই-বাছাই চলছে, সময় লাগবে।’ ‘আনুষ্ঠানিক আইন ছাড়া তো আমি নিবন্ধন দেব না। তারা এখন কাজ করছে, করুক। অনলাইন গণমাধ্যমের নীতিমালা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী নিবন্ধনের কোনো বিধি তৈরি হয়নি। প্রাক-নিবন্ধনের কাজ চলছে। তথ্যপুঞ্জি জোগাড় হচ্ছে। প্রাক-নিবন্ধন শেষ করেই নিবন্ধনে যাব’- বলেন জাসদ সভাপতি ইনু। তাহলে সম্প্রচার কমিশন গঠিত হওয়ার আগে সরকার নিবন্ধন দেবে না- এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি যদি ওটার বিলম্ব হয় তবে আগেই আমরা (তথ্য মন্ত্রণালয়) দিতে পারি। তবে সেই কাজ আমরা শুরু করিনি।’ ‘যখন নিবন্ধন দেয়া হবে, অনলাইন গণমাধ্যমগুলো কী কী সুবিধা পেতে পারে তখনই সেগুলো নির্ধারিত হবে’ বলেও জানান হাসানুল হক ইনু। ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, ২০১৪’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। নীতিমালার গেজেট জারি করা হয় ৬ আগস্ট। নীতিমালায় একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়। একই সঙ্গে এতে সম্প্রচার আইন প্রণয়নের দিকনির্দেশনা রয়েছে। পরে ২০১৭ সালের ১৯ জুন ‘জাতীয় অনলাইন নীতিমালা, ২০১৭’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ৫ জুলাই নীতিমালার গেজেট জারি করা হয়। নীতিমালায় বলা হয়, ‘সকল অনলাইন গণমাধ্যমকে সম্প্রচার কমিশনের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণ করে অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধিত করবে।’ নীতিমালায় আরও বলা হয়, ‘বিদ্যমান অনলাইন গণমাধ্যমগুলো শর্তপূরণ সাপেক্ষে নিবন্ধিত হবে। সকল অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, আর্থিক সঙ্গতি, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বাস্তবায়নসহ একক নাম-সংক্রান্ত বিধিবিধান মেনে নিবন্ধিত হতে হবে। সরকার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নিবন্ধন দিতে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করবে। এতে নিবন্ধন প্রদান পদ্ধতি, যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, বাতিল ও অগ্রায়নের বিধান বর্ণিত থাকবে।’ কিন্তু ২০১৬ সালে সম্প্রচার কমিশন গঠনের বিধান রেখে জাতীয় সম্প্রচার কমিশন আইনের খসড়া হলেও খসড়াটি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তির পর এটি আর এগোয়নি। তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ক্রমবিকাশমান অনলাইন গণমাধ্যম ও এর ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সরকারের ধারণা স্পষ্ট নয়। তাই শৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। এত অনলাইনের ব্যবস্থাপনা বা নিবন্ধন দেয়ার মতো সামর্থ্য তথ্য মন্ত্রণালয় বা তথ্য অধিদফতরের নেই। এছাড়া কোনো আইনগত ভিত্তি ছাড়া এসব অনলাইনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেবে না তথ্য মন্ত্রণালয়। আইন ছাড়া নিবন্ধন দিলে ভবিষ্যতে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই তথ্য মন্ত্রণালয় খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে। তথ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করে বলেন, অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধনের বিষয়ে এখন কোনো কাজ করছে না অধিদফতর। সবকিছুই এখন মন্ত্রণালয়ের আওতায়। কারণ তথ্য অধিদফতরের কার্যপরিধিতে অনলাইন গণমাধ্যমে নিবন্ধন দেয়ার বিষয়টি পড়ে না। এছাড়া অনলাইনের এত আবেদন, দেখভালের মতো জনবলও তথ্য অধিদফতরের নেই। জানা গেছে, তথ্য অধিদফতরে জমা হওয়া আবেদনগুলো তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয় হয়। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে সেগুলো যাচাইয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর এক তথ্য বিবরণীতে তথ্য অধিদফতর জানায়, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত ও অপসাংবাদিকতা রোধে অনলাইন পত্রিকাগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। এ জন্য নির্ধারিত নিবন্ধন ফরম ও প্রত্যয়নপত্র বা হলফনামা পূরণ করে তথ্য অধিদফতরে জমা দিতে হবে। নিবন্ধন-সংক্রান্ত আবেদন জমা দেয়ার পর এগুলো যাচাই-বাছাই ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সন্তোষজনক রিপোর্ট পাওয়ার পর তথ্য অধিদফতর চিঠির মাধ্যমে নিবন্ধনের বিষয়ে আবেদনকারীদের জানিয়ে দেবে। চলমান সব অনলাইন পত্রিকাগুলোকে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। এরপর সময় আরও কয়েক দফা বাড়ানো হয়। তথ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ১১৬টি অনলাইন গণমাধ্যমকে ২৫১টি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। দেশে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের মোট সংখ্যা তিন হাজার ১৪৭ জন। #এএইচ Comments SHARES জাতীয় বিষয়: