সারা দেশে পাটকল শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে

প্রকাশিত: ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০১৯

একুশ নিউজ: মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ নয় দফা দাবি আদায়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা আবার ধর্মঘট শুরু করেছেন। এর অংশ হিসেবে প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টা করে রাজপথ-রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

আজ সোমবার সকাল থেকে সারা দেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে ধর্মঘটে অংশ নেন। তাঁরা খালিশপুর ও আটরা শিল্পাঞ্চলে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন। এর ফলে খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এর আগে গত ২ থেকে ৪ এপ্রিল পাটকল শ্রমিক লীগ এবং সিবিএ-ননসিবিএ পরিষদ যৌথভাবে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ও রাজপথ-রেলপথ অবরোধ পালন করে। এরপর শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে গত ৬-৭ এপ্রিল ঢাকায় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের আলোচনা হয়। কিন্তু সেই আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবার ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেন পাটকল শ্রমিকরা।

শ্রমিক নেতারা জানান, আজ ভোরের পালায় শ্রমিকরা মিলে যোগদান না করে উৎপাদন বন্ধ রেখে নিজ নিজ মিলের সামনে সমবেত হন। পরে তাঁরা মিছিল করে খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়, দৌলতপুর ও আটরা শিল্প এলাকায়  খুলনা-যশোর মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে রাখেন। নতুন রাস্তার মোড়ে পাটকল শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক সরদার মোতাহার উদ্দিনের সভাপতিত্বে শ্রমিকদের সমাবেশ চলছে।

রেলপথ অবরোধ থাকার কারণে আজ সকাল থেকে খুলনা থেকে ঢাকামুখী চিত্রাসহ সব ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার মানিক সরকার।

অন্যদিকে, সড়ক অবরোধের কারণে খুলনা থেকে যশোর পথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়ক পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার পর এ পথে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, আজ বিকেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, এই বৈঠকটি হবে শ্রম অধিদপ্তরের সভাকক্ষে। বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানসহ বিজেএমসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা জানান, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলিম, ইস্টার্ন এবং যশোরের কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলে বর্তমানে ১৩ হাজার ২৭১ শ্রমিক কাজ করছেন। মজুরি বকেয়া থাকায় শ্রমিকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

শ্রমিকদের ঘোষিত দাবির মধ্যে রয়েছে—সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বিমার বকেয়া টাকা প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ, পাট মৌসুমে পাটক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা জোনে মোট ২৬টি পাটকল রয়েছে। তার মধ্যে চট্টগ্রাম জোনে রয়েছে আমিন জুট মিলস লিমিটেড ও ওল্ড ফিল্ডস লিমিটেড, গুল আহমেদ জুট মিলস লিমিটেড, হাফিজ জুট মিলস লিমিটেড, এমএম জুট মিলস লিমিটেড, আর আর জুট মিলস লিমিটেড, বাগদাদ-ঢাকা কার্পেট ফ্যাক্টরি লিমিটেড, কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড, ফোরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি, গালফ্রা হাবিব লিমিটেড ও মিলস ফার্নিসিং লিমিটেড অপরদিকে খুলনায় রয়েছে ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল।

বিআইজে/

Comments