বিশ্বব্যাপী ইসলামফোবিয়া; কারণ-পরিসংখ্যান ও আমাদের করণীয়

প্রকাশিত: ৬:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৯

প্রকৌশলি কামরুল হাছান
ইতালি থেকে

গত পরশু নিউজিল্যান্ডে হামলায় প্রমাণিত হয়েছে কিভাবে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্রূপাত্মক শব্দ ও ঘৃণা শারীরিক আক্রমণের দিকে পরিচালিত করছে। কিভাবে ইসলামোফবিয়া কিছু মানুষকে বিক্রিত ও মানব হত্যার মত ঘৃণ্য মতাদর্শে দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যদি আমরা ক্রাইস্টচার্চের মসজিদের আক্রমণকারীর ভিডিওটি দেখি তাহলে দেখবো কতটা ঠাণ্ডামাথায় ভিডিও গেমসের মতো গুলি করে নিরাপরাধ, নিরীহ মুসল্লিদের হত্যা করেছে-যখন তারা মানব জাতির স্রস্টার ইবাদতে রত। কত কাপুরুষিত, নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলা ! কিন্তু তাকে কখনো আপনারা খ্রিস্টান সন্ত্রাসী বলতে শুনবেন না ।

আপনারা কখনো কি শুনেছেন মিডিয়াকে খ্রিস্টান, হিন্দু, বুদ্ধিস্ট কিংবা নাস্তিক সন্ত্রাসী বলতে?

  • -যখন আমেরিকায় একজন নাস্তিক মুসলিম ছাত্র ছাত্রীকে হত্যা করে
    -যখন বৌদ্ধরা মায়ানমারে গনহত্যা চালায়
    – যখন হিন্দুরা কাশ্মিরে মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন করে
    – যখন আমেরিকা ইস্লামিক ইতিহাস সমৃদ্ধ ইরাককে মিথ্যা অজুহাতে ধ্বংস করে দেয়
    – যখন ইয়াহুদিরা ফিলিস্তিনে নির্বিচারে মুসলিমদের গণহত্যা চালায়

বরং আমরা দেখেছি ২০১১ সালে অসলোতে যখন বোমা হামলায় নিরাপরাধ প্রায় ৫০ অধিক লোক নিহত হয় তখন সকল মিডিয়া ঘটনা উদ্ঘাতনের পূর্বেই ইসলামিক সন্ত্রাসী বলে চালিয়ে দিয়েছিলো, কিন্তু যখন সু-স্পষ্ট হয়েছে ব্রেবিক নামক এক ক্যাথলিক সন্ত্রাসী এই কাজ করেছে তখন তাকে মানসিক রোগী বলে চালিয়ে দিয়েছিলো।

বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে একটি গোপন খেলা চলছে। দেখবেন, যখনই কোনো খারাপ মুসলিম কোনো কুকর্ম করে তখন তার সাথে ধর্ম অর্থাৎ ইসলাম শব্দ জুড়ে দিয়ে নিন্দা করা হয়। যেন বিশ্ব সম্প্রদায় সকল মুসলিমকে এক কাতারে নিয়ে আসে।

ক্রাইস্টার্চে হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্ট দ্যা গ্রেট রিপ্লেসম্যান্ট তত্ব দ্বারা উজ্জীবিত। সে তার ফেসবুক গ্রুপে ৭৪ পেইজের একটি ম্যানুফেষ্ট প্রকাশ করেছে । এটি হলো, ডানপন্থী ষড়যন্ত্র তত্ত, যা বলে যে- সাদা ফরাসি ও ইউরোপিয়ান লোকজন সিস্টেম্যাটিকলি প্রতিস্থাপিত/বদলি হয়ে যাচ্ছে অ-ইউরোপিয়ান লোকজন যেমন: এশিয়ান, তুর্কি, উত্তর আফ্রিকা, আরবী …কর্তৃক।

এই তত্ত্বটি সর্বপ্রথম দেখা যায় ১৯৭৩ জীন রাসপাইলের লে কাম্প দেস সাইনটস নামক নোবেলে যেখানে তৃতীয় বিশ্বের অভিবাসীদের স্রোতে পশ্চিমা সংস্কৃতির পতনের চিত্র অঙ্কন করেন । পরবর্তীতে ২০০৫ সালে সুইস ইসরায়েলি লেখক বাত ইয়ে’ওর কর্তৃক উদ্ভাবিত ইউরোআরব তত্ত্ব রেনাউড কামুসকে ‘দ্যা গ্রেট রেপ্লেসম্যান্ট’ বইটি রচনার জন্য ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।

বেরেন্ট তারান্ট তার ম্যানুফেষ্টতে এন্জেলা মার্কেল-এরদোগান ও লন্ডনের চেয়ারম্যান সাদিক খানের মৃত্যু চান। ট্যারেন্ট তার ম্যানুফেষ্টতে দুইজন ব্যাক্তিদ্বারা প্রভাবিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। ১. ট্রাম্প সমর্থক ক্যান্ডেস ওয়েন্স ২. ব্রিটেনের ফ্যাসিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ওসওয়াল্ড মসলে।

ট্যারান্ট ইউরোপকে সকল আগ্রাসী অভিবাসী (যারা কিনা লিগেল অভিবাসী ) বিশেষত মুসলিমদের থেকে ইউরোপকে মুক্ত করতে চায়। কারণ হিসেবে সে বলেছে:

  • সেতাঙ্গ ইউরোপিয়ানদের জন্মহার কমে যাচ্ছে এবং পরস্পর বন্ধন খুবই দূর্বল 
  •  অভিবাসীদের জন্মদানক্ষমতা ও জন্মহার খুব উচ্চ, তাদের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সামাজিক বিশ্বাস ও সুস্থ সংস্কৃতি, ধর্মীয় বন্ধন সুদৃঢ়।

তার আশঙ্কা, এইভাবে চলতে থাকলে ইউরোপিয়ানরা সিসটেম্যাটিক্যালি নিঃশেষ হয়ে যাবে, অথবা সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে। আর সংখ্যালঘু রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সম্প্রদায় নানা বৈষম্যের শিকার হয় ।

মজার ব্যাপার হলো , ট্যারান্ট একজন অস্ট্রেলিয়ান। যে কিনা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে নিউজিল্যান্ডে। এই উভয়দেশ ছিলো ব্রিটিশ উপনিবেশের অধিন । এই উভয়ের সাথে ইউরোপের এথনিক কিংবা সংস্কৃতিক সম্পর্ক ছিলো না ২৫০ বছর আগে ব্রিটিশ আগমনের পূর্বে ।

মুসলিমদের উপর সন্ত্রাসী আক্রমণসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এতে সন্ত্রাসীভাবে সংযুক্ত লোকসমূহ বর্ণবাদী, জাতীয়তাবাদী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী বাম ও ডান চরমপন্থা দ্বারা উজ্জীবিত। যাতে ইসলামোফোবিয়া আগুনে তেল ঢেলে দেওয়ার মতো কাজ করেছে। বর্তমানে ইউরোপসহ বিভিন্ন অমুসলিম দেশ সমূহে অভিবাসী ও ইসলাম বিরোধী প্রচারণারত দল সমূহ জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসছে ।

নিম্নের পরিসংখ্যানই বলে দিবে কিভাবে ইউরোপের দেশসমূহে ইসলামোফোবিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে:

ডেনমার্ক:২০১৬ সালে ডেনমার্কে ৫৬ ইসলামপন্থী ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিলো। রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৬ সালে সংঘটিত সব ঘৃণা অপরাধের ২০% ভাগ লক্ষ্যবস্তু মুসলমানদের উপর- যখন মুসলিমরা ৫ ভাগ ঐ দেশের জনসংখ্যা। অথচ এই মুসলিমরা হলো সবচেয়ে লক্ষ্যবস্তু সংখ্যালঘু ।
বেলজিয়াম: ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী হামলার পরের মাসে ৩৬ ইসলামোফোবি ঘটনা রেকর্ড হয়েছে (উত্স: সিসিআইবি)।
অস্ট্রিয়া: ২৫৬ ইসলামফোবিক ঘটনানথিভুক্ত ছিল।
(উত্স: (Source: EIR Report, Antidiscrimination Office Styria, ZARA, and Initiative for a Discrimination-Free Education [IDB]).।

ফ্রান্স: ১২১ ইসলামপন্থী ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। Source: Observatory of Islamophobia. ১৯ টি মুসলিম উপাসনালয় সরকার কর্তৃক বন্ধ ছিলো, ৭৪৯ জনকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে;৪৫০০ পুলিশ রেইড পরিছালিত হয়েছে, এবং সরকারি নজরদারির অধীনে ব্যক্তিদের তালিকা ২৫০০০ পৌঁছেছেন, সন্ত্রাসবাদে ১৭৩৯৩ ব্যক্তি নথিভুক্ত হয়েছিলপ্রতিরোধের ডাটাবেস (FSPRT।

জার্মানি: মসজিদে ১০০ টি হামলা ঘটেছে। Source: DITIB and German State. জার্মান মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে ৯০৪ টি হামলা সংঘটিত হয়েছিলো, ৬০ ভাগ মুসলমানশিক্ষা কর্মী বৈষম্য অনুভূব করে। (Source: Karim Fereidooni), শরণার্থীদের উপর ১৯০৬ ফৌজদারি হামলা ছিল (প্রতিদিন ৫.২ আক্রমণ), উদ্বাস্তু আশ্রয়স্থল বিরুদ্ধে ১৮৬ আক্রমণ ছিল(প্রতিদিন ০.৪ আক্রমণ), ১৩২ সন্ত্রাসী কাজ এবং শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছে শরণার্থী সহায়তা কর্মীরা (প্রতিদিন ০.৪ আক্রমণ)। (উত্স: জার্মান রাষ্ট্র)।

মাল্টা: ৭% মুসলমান শারীরিক সহিংসতা ভোগ করেছে, ২৫ % মুসলমানরা হয়রানি ভোগ করেছে

নরওয়ে: ২০১৭ সালে, ১৪ % মুসলমান হয়রানির শিকার হয়েছে।

নেদারল্যান্ডস: ২০১৬ সালে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ৩৬৪ বৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে ।

(Source: Verwey Jonker Institute and Anne Frank Foundation)

পোল্যান্ড: ২০১৭ সালে, সকল বিদ্ধেষমুলক অপরাধগুলোর ২০ ভাগ সংগঠিত হয়েছিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে। (Source: National Prosecutor’s Office), ২০১৭ এর জানুয়ারী এবং অক্টোবর মধ্যে, ৬৬৪ ঘৃণামুলক আক্রমণের ঘটনা সংগঠিত হয়। (উত্স: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), ঐ ঘটনাসমূহের মধ্যে শুধুমাত্র ১৯৩ (২৯ %) টির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিলো। (Source: Ministry of Interior)

যুক্তরাজ্য: মে মাসে ম্যানচেস্টারের সন্ত্রাসী হামলার পর Islamophobic সম্পর্কিত অপরাধ পাঁচগুণ বৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে ঐ অঞ্চলে। (Source: Greater Manchester Police), বৃহত্তর লন্ডনে মুসলমানদের লক্ষ্য করে ঘৃণাযুক্ত অপরাধ ক২০১৭ সালে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১২০৪ থেকে বেড়ে ১৬৭৪ হয়েছে , যা ৪০% বৃদ্ধির সমান। (উত্স: স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড), মার্চ এবং জুলাই ২০১৭ এর মধ্যে, মসজিদ আক্রমণের সংখ্যা গত বছরের ৪৭ থেকে ১১০ এর উপরে উঠেছে। (Source: Tell MAMA UK), ২০১৬ সালে ইসলামফোবিক হামলার বিরুদ্ধে ১২৩২ টি মামলা হয়েছিলো, (Source: Tell MAMA UK), এই ঘটনার বিশ শতক মুসলিম শারীরিক আক্রমণের শিকার ; ৫৬ % শিকার নারী, যখনদুই তৃতীয়াংশ অপরাধী পুরুষ ছিলো।

সুইডেন: ২০১৬ সালে ইসলামফোবিক উদ্দেশ্য নিয়ে ৪৩৯ টি ঘৃণামূলক অপরাধ রেকর্ড করা হয়েছিল।(উত্স: সুইডিশ ক্রাইম সার্ভে-এনটিইউ)

স্পেন: ২০১৭ সালে ৫৪৬ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে (Source: Plataforma Ciudadana contra la Islamofobia)

ইসলামোফবিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের করনীয়

১। সকল দেশের মুসলিমদের, মানবিক সংস্থা, সত্যবাদী অমুসলিমদের সংগঠিত সঙ্ঘবদ্ধ নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ জানানো। অমুসলিম দেশে বসবাসরত সকল অভিবাসী মুসলিমদের উচিৎ ইসলামোফবিয়ার বিরুদ্ধে অমুসলিম কাজের কলিগ, প্রতিবেশিদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। অদ্ভুদ কোনো আচরণ পরিলক্ষিত হলে সাথে সাথে অথরিটি, মুসলিম সংগঠন, মানবতাবাদী সংগঠন ও ব্যাক্তিবর্গকে অবহিত করা। ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরা- প্রজ্ঞা, সুন্দর উপস্থাপনা ও উত্তম পন্থায় বিতর্কের মাধমে এবং উত্তম আদর্শ প্রদর্শনের মাধ্যমে।

২। মুসলিম বিশ্বে ক্ষমতাসীন সকল শাসকদের উচিৎ কুফফারদের সেবাদাসের ভুমিকায় না থেকে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেওয়া এবং বুদ্ধিভিত্তিকভাবে ইসলামোফবিয়া অপনোধনে কার্যকর ভুমিকা নেওয়া ।

৩। অন্যথায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উচিৎ সেবাদাসী এইসব শাসকদেরকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিষ্ঠাবান মুসলিম অথবা দলকে ক্ষমতায় আনা। তাহলেই একমাত্র ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত দীর্ঘ অপপ্রচার ও অন্যায় যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান হবে। মুসলিমদের সম্মান ও মর্যাদা ফিরে আসবে, এবং সাথে সাথে বিশ্বমানবতা মুক্তি পাবে।

৪। মুসলিম বিশ্বে ইসলামি দলসমূহের উচিৎ সঙ্কীর্ণতা ও খুঁটিনাটি মতভেদের ফলে সৃষ্ট দেয়াল ভেঙ্গে এবং অতিরঞ্জণ বর্জন করে সমগ্র মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার কার্যকর সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করা। পরিবর্তনশীল বিশ্বের যাবতীয় চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ বিশ্ব নিয়ে ব্যাপক গবেষণার জন্য দলের অভ্যন্তরে গবেষণা পত্র আহবান করা ।

বিশ্বের সকল ইসলামি দলসমূহ একে অন্যের সাথে তথ্যের আদান প্রদান এবং মজবুত সম্পর্ক সৃষ্টি করে। ইসলামোফবিয়া ও অন্যায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একসাথে সংগঠিত প্রতিবাদ জানানো, সেবাদাসমুলক শাসকদের ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য করা , অথবা এদের মুখোশ জনগণের সামনে উন্মোচন করে জনবিচ্ছিন্ন করা।

৫। মুসলিম দেশের মিডিয়াসমুহের উচিৎ আরো প্রযুক্তিগত, বুদ্ধিভিত্তিক, অর্থনৈতিক ও প্রশিক্ষিত লোকবল দ্বারা সমৃদ্ধি হয়ে জায়োনিস্টদের তৈরিক্রিত আন্তর্জাতিক মিডিয়া নীতিমালা বর্জন করা । এবং ঐক্যবদ্ধভাবে নিজস্ব নীতিমালা তৈরি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজস্ব ইমপ্যাক্ট বিস্তৃতি করা । আন্তর্জাতিক খবরের ক্ষেত্রে তাদের ব্যাবহত শব্দকে হুবহু কপি পোস্ট না করে সুস্থ বিবেকের আলোকে সঠিক শব্দ প্রয়োগ করা ।

৬। তার পূর্ব পর্যন্ত সত্যিকার মুসলিমদের ‘কম সভ্য’ প্রমাণের আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ট্র্যাপে পা না দিয়ে সত্যঘটনা নির্ভয়ে প্রকাশ করা

/আরএ

Comments