নতুন উচ্চতায় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্ক

শিক্ষার্থীদের ত্যাগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রেরও উচিত বাংলাদেশের পাশে থাকা: জো বাইডেন

প্রকাশিত: ১০:৫২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪
জো বাইডেন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস, নিউ ইয়র্ক

যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ত্যাাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মার্কিন সরকারের পূর্ণ সমর্থনের কথাও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এসময় যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে তাদেরও (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত।’

বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনকে জানান।

অধ্যাপক ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, ‘দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি-সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক আর্টবুক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহার দেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশনের এক ফাঁকে নির্ধারিত সভাকক্ষে তারা বৈঠকে বসেন। এসময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

US BD

জো বাইডেন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস, নিউ ইয়র্ক

এর আগে, নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশনে যোগদানকারী বিশ্ব নেতাদের স্বাগত জানাতে সংস্থাটির মহাচিব আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন ড. ইউনূস। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর প্রতিনিধি লাউঞ্জে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজসিংহ রূপুন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কসহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন অধ্যাপক ইউনূস।

এসময় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও ভিসা দেওয়ার জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

এই সফরে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস।

জাতিসংঘ অধিবেশনের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা তুলে ধরে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করবেন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিজয়ের নতুন যাত্রায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুশাসন এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ড. ইউনূসের বক্তব্যে সেসব তুলে ধরা হবে।

এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা, সম্পদের অবৈধ পাচার রোধ, অভিবাসী অধিকার রক্ষার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের স্বাগতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে ডিনার পার্টিতে অন্যসব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতাদের সঙ্গে অংশ নেবেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কাছে ‘মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট’ মিলনায়তনে এই নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হবে।

ডিনার পার্টিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ফার্স্টলেডি জিল বাইডেন অতিথিদের স্বাগত জানাবেন। এসময় অতিথিদের সঙ্গে ফটোসেশনেও মিলিত হবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি ও প্রেসিডেন্ট।

সফর শেষ করে ২৭ সেপ্টেম্বর রাতেই নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার পথে রওনা হবেন প্রধান উপদেষ্টা। গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা।

Comments