রাজনীতি হোক জনগণের কল্যাণে

প্রকাশিত: ৮:০২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৯

মাহমূদ হাসান

নিজ স্বার্থ রক্ষায় বর্তমান যুগের সব মানুষই সচেতন। আপন কল্যাণে সকল শ্রেণী পেশার মানুষই সতর্ক। ধর্মীয় চিন্তা-চেতনায় বর্তমান সমাজের মানুষ অসচেতন হলেও রাজনৈতিক তৎপরতা সবার মধ্যেই বিদ্যমান। ইসলামী মূল্যবোধে ডিজিটাল নাগরিকগণ বেশ উদাসীন হলেও রাজনীতির মাঠে তারা খুব সক্রিয়।

রাজনীতিতে আদর্শবানদের সংখ্যা কম থাকলেও চরিত্রহীনদের উল্লেখযোগ্য অংশ পরিলক্ষিত হয়। প্রচলিত রাজনীতিতে আদর্শবাদী কর্মীদের উপস্থিতি কম থাকায় বিভিন্ন ক্যাডার বাহিনীর জন্ম হয়েছে। মূল রাজনৈতিক দলে ইসলাম সমর্থিত আদর্শের চর্চা না থাকায় অঙ্গসংগঠনগুলো চরিত্রহীনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

অধিকাংশ দলের কেন্দ্রীয় রাজনীতিবিদগণ জনস্বার্থে রাজনীতি না করার কারণে ছাত্র রাজনীতি চাঁদাবাজির রাজনীতিতে রূপ নিয়েছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলো বিশুদ্ধ রাজনীতি চর্চা না করার কারণেই আজ রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ জিম্মি বোবা। গণতন্ত্র ও সেক্যুলারকে আদর্শ মেনে যারা এদেশে রাজনীতি করে তাদের কারণেই আজ নেতারা মিথ্যা ও পল্টিবাজি করার সুযোগ পায়।

রাজনীতিবিদগণ গনতন্ত্র চর্চার কথা বললেও তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে জনগণের সাথে প্রহাসনের নির্বাচন করছে। মিডিয়ায় গনতন্ত্রকে জনগণের মুক্তির পথ বলে যারা বক্তব্য দেয় তারাই আজ জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে বিধায় দিনদিন জনগণও তাদের থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে।

বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের কথায় জনগণ আশ্বস্ত হতে না পেরে প্রচলিত রাজনীতি থেকে আদর্শবান ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

রাজনীতির মঞ্চে গণতন্ত্রের ভাষণদানকারীরাই যে আজ রাজনৈতিক ধান্ধাবাজ ও পেঠ পূজারীর ব্যবসায়ী- সে কথা বর্তমান যুগের সচেতন জনগণের বুঝতে বাকি নেই। গনতন্ত্র ও স্যকুলার আদর্শ চর্চায় যে মানুষের মুক্তি নেই- সে বিষয়টা আজ গবেষক রাজনীতিবিদগণ বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে।

ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলসমূহ ছাড়া অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশে আব্রাহাম লিংকনের গনতন্ত্র চর্চা করে। বিশেষত আওমী লীগ ও বিএনপির পরস্পর আদর্শগত মতানৈক্য থাকলেও মৌলিকভাবে উভয় দলের নেতৃবৃন্দ সেক্যুলার ও গনতন্ত্রকে নিজেদের আদর্শ মনে করায় স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের দাবী হলো- অতীতের মতো আওমী লীগের বর্তমান আমলেও বাংলাদেশে গনতন্ত্রের বিশুদ্ধ চর্চা হচ্ছে।

আওমীলীগ অতীতে যেমন গনতন্ত্র রক্ষার জন্য এদেশে রাজনীতি করেছে বর্তমানেও তারা গনতন্ত্র রক্ষায় রাজনীতি করে। গনতন্ত্র রক্ষায় আওমী সরকার সবসময় সচেষ্ট ও সাবধান।

অপরদিকে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বক্তব্য হলো- আওমী লীগ অতীতের মতো এখনো এদেশে গনতন্ত্রের যথাযথ চর্চা করছে না। অতিতে যেমন আওমী লীগের মাধ্যমে বাংলাদেশে গনতন্ত্রের চর্চা হয়নি এখনও তেমন হচ্ছে না। বরং আওমী লীগ সবসময় গনতন্ত্র বিদ্বেষী আচরণ করে। এবং সবসময় তারা গণতন্ত্রের থিওরী বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে।

এমনকি গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে ক্ষমতাসীন দল বিগত ৩০ ই ডিসেম্বর এদেশে প্রহাসনের নির্বাচন করেছে। যদি আওমী লীগ বাস্তবিকপক্ষে গণতন্ত্রের আদর্শ লালন করত তবে তারা একাদশ সংসদ নির্বাচনে রাতের আঁধারে ব্যালট বাক্স ভোট দিয়ে ভরে রাখতো না।

গণতন্ত্রে বিশ্বাসী আওমী লীগ যদি বিগত নির্বাচনে নৌকা জিতার সামান্যতম সম্ভাবনা দেখতো তবে তারা নির্বাচনে নৌকা ডুবার ভয়ে বিএনপির শতশত নেতাকর্মীদেরকে জেলে ভড়ে রাখতো না। আওমীলীগ গণতন্ত্র বিরোধী এতকিছু করেও যদি তারা গণতন্ত্রের কান্ডারী হয় তবে বাংলার বুকে অচিরেই গণতন্ত্রের নতুন থিওরী দাঁড় করাতে হবে। নতুবা সোনার বাংলায় আগামী দিনে গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে।

রাজনৈতিক বিভিন্ন উস্যুতে বিএনপিপন্থী নেতাদের বক্তব্য সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার মন নরম করলেও বাস্তবিকপক্ষে তারাও আওমী লীগের চেয়ে কম নয়। তারাও আওমী লীগের মতো ক্ষমতার রাজনীতি করে। বিএনপিও ক্ষমতায় থাকলে আওমীলীগ চেয়ে কোনোদিকে কম করতো না।

এমনকি যদি তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো ক্ষমতার রাজনীতিতে দক্ষ ও পারদর্শী হতেন তবে কারাবন্দী নেত্রীর পরামর্শে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও ৩০ ই ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জান দিয়ে বিজয়ী হতে চেষ্টা করতো।

যদি বিএনপির বিতরগত কোনো হতাশা ও নেতৃত্বের শূন্যতা না থাকতো তবে তারাও আওমী লীগের মতো ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাঠে ক্যাডার বাহিনীর মহড়া দিতো। কিন্তু তারা তা করেনি। এবং তাদের রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতার কারণেই তারা নির্বাচনী যুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়নি। বরং তারা বরাবরের মত এবারো বিদেশীদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ক্ষমতার সিংহাসনে সমাসীন হতে চেয়েছে।

বিএনপি নেতাদের প্রত্যশা ছিলো ক্ষমতার পালাবদল যেন বিদেশী কূটনৈতিকরা করে দেয়। কিন্তু দিনশেষে আফসোস ছাড়া আর কিছুই মিলেনি তাদের। সাংবাদিক সম্মেলন ও গণমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু বিএনপির নেতারা করতে না পারায় সাধারন জনগণ দিনদিন তাদেরকে ধিক্কার দিচ্ছে।

এমনকি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচী দেখে প্রতিনিয়ত দলের সচেতন নেতা ও সমর্থকগণ হতাশায় ভোগছে বিধায় বিজ্ঞ রাজনীতিবিদগণের মতে বিএনপি যদি এভাবেই এদেশে রাজনীতি করে তবে তারা দেশীয় রাজনীতিতে একদিন জামাতের মতো নিস্ক্রীয় হয়ে যাবে। জামাতে ইসলামীর মতো বিএনপির নামেও ভবিষ্যতে তেমন কার্যক্রম পরিলক্ষিত না হতে পারে বলে বিজ্ঞজনদের ধারণা।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওমী লীগের ধর্মনিরপেক্ষতা ও বিএনপির গনতন্ত্রের বাহিরে সবচেয়ে অর্থবহ ও কল্যাণকর রাজনৈতিক আদর্শ হল ইসলামী শাসনতন্ত্র। প্রজাতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের বাহিরে এদেশের জনগণেরর জন্য সবচেয়ে উপকারী শাসনব্যবস্থা হল ইসলামী শাসনতন্ত্র। যা সম্পূর্ণ কুরাআন – হাদীস সমর্থিত। যা মূলত নবীজি সা. এর মাদিনা সনদের মূল ভিত্তি।

কিন্তু আফসোস এই যে, এদেশের জনগণ বারবার দুনিয়া লোভীদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটা নির্বাচনে চালবাজ নেতারা আমজনতাকে রাজনীতির ঘুটি বানিয়ে ক্ষমতার ধন্ধে হাজারো মানুষ পুড়েছে। আর জনগণও গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও নাস্তিক্যবাদের ধোকায় সেগুলোর পক্ষে কাজ করে নিজের আখের বরবাদ করেছে।

কুফুরি তন্ত্র-মন্ত্রকে সাধারন মানুষ দিল থেকে বিশ্বাস না করলেও বাস্তব জীবনে সেটার বিজয় দেখতে তারা ঈমানী দাবীর বিরুদ্ধাচরণ করেছে। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ নিজেদের অজ্ঞতাবশত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তবে ইদানিং এদেশের অনেক সু- নাগরিক ও সুশীল সমাজ ভোট প্রয়োগে সচেতন হচ্ছেন।

কাউকে ভোট দেওয়ার আগে চিন্তা করেন যে, কাকে কেন ভোট দিচ্ছেন। যাকে নিজের ভোট দিচ্ছেন সে সৎ, যোগ্য ও খোদাভীরু কি না। কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধে যারা বিশ্বাসী তারা তো যাকে তাকে ভোট দিতে পারে না। যে ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে জানে সে তো আর গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী হতে পারে না।

যে বুঝে ইসলাম শ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ সে তো কুফরি মতাদর্শ বিজয়ে নিজের ভোট কোন অযোগ্য প্রার্থীকে দিতে পারে না। যার ভিতরে ঈমানের নূর আছে সে তো পাপীকে ভোট দিয়ে জয়ী করতে পারে না। যে মনে করে ইসলামই একমাত্র মানুষকে শান্তি ও মুক্তি দিতে পারে সে তো কোন বেনামাজি ও দূর্ণীতিবাজকে ভোট দিয়ে সহযোগীতা করতে পারে না।

যারা মানুষ মারার রাজনীতি করে তাদেরকে কোন অমুসলিম জনদরদী ও সমাজ সেবকও ভোট দিতে পারেনা। তাই পরিশেষে শোনে রাখুন যে, বিরোধী নেতাদের ঘুম, খুন ও মামলা দিয়ে যদি রাজনৈতিক দলসমূহের ক্ষমতায় যেতে হয় তবে এমন সরকার কোন কালেই কোন দেশের জন্য কল্যাণকর নয়।

বরং মানুষের রক্তপিপাসু সরকার সবসময় জনগণকে নিয়ে ক্ষমতার রাজনীতি করবে। কখনো ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মৌলবিদেরকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করবে। আবার কখনো গণতন্ত্র রক্ষার নামে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে মরিয়া হয়ে ওঠবে।

কারণ, বাস্তবিকপক্ষে নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী প্রত্যেকটা দল যদি জনগণের শান্তি ও মুক্তির জন্যই এদেশে রাজনীতি করত তবে তো নির্বাচনের পূর্বাপর একটা মানুষ মরার কথা নয়। সব দলের নেতারা যদি জনগণের কাছে জনপ্রিয় হত তবে নির্বাচনের আগপরে জনতার ভয়ে অস্ত্রের মহড়া হওয়ার কথা ছিলো না।

ইসলামী দলসমূহ ছাড়া বাকিরা যদি স্বাধীন দেশের উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য আদর্শের রাজনীতি করত তবে মনে হয় নির্বাচনে পাশ করার জন্য টাকা দিয়ে ভোট কিনতে হতো না। নিজেদের পরাজয়ের ভয়ে রাতের আঁধারে ব্যালট বাক্স ভোট দিয়ে ভড়ে রাখার মত দুঃসাহস দেখাবার প্রয়োজন হতো না।

তাই আসুন, গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার অভিশাপ থেকে বের হয়ে জনগণের প্রকৃত শান্তি ও মুক্তির জন্য ইসলামী শাসনতন্ত্রকে নিজের জীবনের আদর্শ বানাই। এবং ইসলামের কুরাআনী থিওরী বিশ্বাস করে এদেশে বিশুদ্ধ রাজনীতি চর্চা করি।

জনগণকে ভয়হীন সুখে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ দানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করি। এবং রাজনীতির নামে ঘুম, খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করা থেকে নিজেদের হেফাজত করি।

লেখক: শিক্ষাবিদ, বিশ্লেষক ও মুফতি

Comments