‘নাগরিকত্ব হরণ কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উপেক্ষা করা চলে না’

প্রকাশিত: ৯:৪৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯

বিশ্বের একক বৃহত্তম নাগরিকত্ব হরণের ঘটনা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উপেক্ষা করা চলে না বলে দাবী করেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফ।

আজ রোববার বিকেল ৩টায় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় আমেলার ষান্মাসিক কার্যক্রম পর্যালোচনা বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ দাবী করেন।

তিনি বলেন, নিপীড়নবিরোধী দীর্ঘ নয় মাস প্রতিরোধ ও সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ বিশ্বের যে প্রান্তেই অন্যায়, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া বাংলাদেশ সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধবিষয়ক সনদ রোম স্ট্যাটিউটে স্বাক্ষরকারী দেশ।

সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে: ১. প্রত্যেকেরই নাগরিকত্বের অধিকার রয়েছে, এবং ২. কাউকেই ইচ্ছা হলেই নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা যাবে না এবং তার নাগরিকত্ব বদলানোর অধিকারও অস্বীকার করা যাবে না। আর রোম স্ট্যাটিউটে জনগোষ্ঠীর জোরপূর্বক বহিষ্কার কিংবা স্থানান্তর, আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক বিধিমালা লঙ্ঘন করে তাদের দৈহিক স্বাধীনতা গুরুতরভাবে খর্ব করা অথবা বন্দী রাখাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের একক বৃহত্তম নাগরিকত্ব হরণের ঘটনা কি কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উপেক্ষা করা চলে? যাদের নাগরিকত্ব হরণ করা হয়েছে, তাদেরকে ভারত সরকার ও স্থানীয় রাজনীতিকরা বাংলাদেশি বলেই অভিহিত করছে। হয়তো তাদেরকে এখনই বহিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে না; কিন্তু পর্যায়ক্রমে সে প্রক্রিয়া শুরু হতে যে খুব বিলম্ব হবে, এমনটি মনে করার কোনো সুযোগ নেই।

আমাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ হবে না, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা আশির দশকে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হরণ করে। মিয়ানমার সরকার দাবী করছিলো, আরাকানে বসতি স্থাপনকারী এসব নাগরিক বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী। যদিও প্রকৃত কারণ হচ্ছে এরা ধর্মীয়ভাবে মুসলমান। তাদের ভাষা আরাকানি হলেও মিয়ানমার সরকার ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধ নেতারা রোহিঙ্গাদের বাংলাভাষী বলেই অভিহিত করে থাকে।

নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার পর থেকে প্রথমে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং বর্তমানে বেসামরিক সরকার, উগ্রপন্থী বৌদ্ধধর্মীয় গোষ্ঠী ও কিছু বেসামরিক গোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। যে কারণে আশির দশক থেকে শুরু করে প্রতি দশকেই একাধিকবার করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এমন নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছে যে তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি বলেন, নিশ্চই আমাদের অনেকেরই স্মরণে আছে আসামের বঙ্গাল খেদাও আন্দোলনের কথা। কথিত অসমীয় জাতীয়তাবাদের ধুম্রজাল তুলে আশির দশকে অসম ছাত্র গণপরিষদ নামে নতুন এক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। ১৯৮৩ সালে এই আন্দোলন সহিংসতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে। তখন প্রায় দুই হাজার বাংলাভাষী মুসলমানকে হত্যা করা হয়, যেটি গুজরাটের আগে ছিল ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বৃহত্তম গণহত্যা। বোড়ো জঙ্গিগোষ্ঠীরও আক্রমণের লক্ষ্য এসব বাংলাভাষী মুসলমান।

সুতরাং এত বড় একটি মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কার মুখে এটাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে নির্লিপ্ত থাকার মানে দাঁড়াবে মিয়ানমারের মতোই আরেকটি করুণ পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করা। এ ইস্যুটি যদি বাংলাদেশ সরকার ভ্রুক্ষেপ না করে, তবে নতুন করে রোহিঙ্গা ইস্যুর মত একটি ইস্যু তৈরী হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

তাই বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেভাবে কালক্ষেপণ করেছে- তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই বিষয়টি নিয়ে ভারতের সাথে বসা উচিৎ। প্রয়োজনে বিশ্ব মোড়লদের সাথে আলোচনা করে এর একটি সুষ্ঠু সমাধানের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আমরা জোর দাবী জানাচ্ছি।

ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ মুস্তাকিম বিল্লাহর সঞ্চালনায় ষান্মাসিক কার্যক্রম পর্যালোচনা বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এম. হাছিবুল ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল করীম আকরাম, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আব্দুজ্জাহের আরেফী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ আল-আমিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল জলিল।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রিয়াদ, প্রচার ও যোগাযোগ সম্পাদক কে.এম.শরীয়াতুল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক ইউসুফ আহমাদ মানসুর, কলেজ সম্পাদক এম এম শোয়াইব, কওমি মাদরাসা সম্পাদক আলমগীর হোসাইন মাহমুদ।

আলিয়া মাদরাসা সম্পাদক সাইফ মুহাম্মাদ সালমান, স্কুল সম্পাদক শেখ ইহতেশাম বিল্লাহ আজিজী, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নূরুল বশর আজিজী, সদস্য এম এ হাসিব গোলদার, মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, এইচ এম সাখাওয়াত উল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবরাহীম হুসাইন।

Comments