খুলনায় পল্লী বিদ্যুতের ‘আলোর ফেরিওয়ালা’; ১০ মিনিটেই বিদ্যুৎ সংযোগ

প্রকাশিত: ১:২৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০১৯

শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা প্রতিনিধি: খুলনায় পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে ছুটতে হচ্ছে না গ্রাহককে। যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে নতুন সংযোগ দিতে ছুটছেন সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

মানুষের দ্বারে দ্বারে বিদ্যুতের ফেরিওয়ালা পৌঁছে যাচ্ছে। সঙ্গে থাকছে ভ্যানগাড়িতে মিটার, বিদ্যুতের তার, মইসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। নির্ধারিত ফি নিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিটে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কোনো হয়রানি নেই, দিতে হচ্ছে না কোনো বাড়তি অর্থ। ফলে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে ধর্নাও দিতে হচ্ছে না।

টাকা জমা দেওয়ার জন্য আর দাঁড়াতে হচ্ছে না লাইনে। পল্লী বিদ্যুতের এই ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’।  

খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার শহীদুজ্জামান জানান, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। গ্রাহকরা ভালো সাড়া দিচ্ছে। তাদের চাহিদার অনুযায়ী এই কার্যক্রম চলবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। 

সেনেরবাজার জোনাল অফিসের দায়িত্বরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী জুলফিকার জানান, গ্রাহকদের সুবিধার্থে আমরা সব সময় সেবা প্রদান করে আসছি।

সম্প্রতি আলোর ফেরিওয়ালা কার্যক্রম শুরু করেছি। এই কার্যক্রমে গ্রাহকরা খুবই খুশি। একই সাথে স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে গ্রাহকরা।

গ্রাহকদের কাছ থেকে সর্বমোট ৯৬৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে জামানত বাবদ ৮০০ টাকা, আবেদনসহ ভ্যাট বাবদ ১১৫ টাকা এবং সদস্য ফি বাবদ ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এতে দরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছে। 

সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (সদস্য সেবা) প্রকৌশলী মোঃ সাঈদ হোসেন জানান, খুলনায় গত ৬ জানুয়ারি আলোর ফেরিওয়ালার মাধ্যমে গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেয়া শুরু হয়। 

এ কার্যক্রমে আলোর ফেরিওয়ালা ভ্যানে মিটার, তার ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নতুন সংযোগ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকের বাড়ির সামনে পৌঁছে যায়।

উঠানে দাঁড়িয়ে আবেদন ফরম গ্রহণ এবং নির্ধারিত ফি নিয়ে মিটার বসিয়ে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়ায় ৫ মিনিটেই হয়ে যাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগছে।

ফলে গ্রাহকদের অফিস পর্যন্ত আসার প্রয়োজন হচ্ছে না। উল্টো পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি যেয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ না পৌঁছানো পর্যন্ত গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি আলোর ফেরিওয়ালা কার্যক্রম চলবে।

তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চারটি জোনাল অফিসের আওতায় ৮টি উপজেলায় বুধবার পর্যন্ত খুলনায় ৯৩ জন গ্রাহককে এই সেবা প্রদান করা হয়েছে।

এর মধ্যে সদর দফতরের আওতাধীন ৩১, পাইকগাছা জোনাল অফিসের আওতায় ২৫, ডুমুরিয়া জোনাল অফিসের আওতায় ২২ ও সেনেরবাজার জোনাল অফিসের আওতায় ১৫ জন গ্রাহককে আলোর ফেরিওয়ালা কার্যক্রমের সেবা দেয়া হয়েছে। 

খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সূত্রে জানা যায়, সমিতির আওতায় জেলার ৮টি উপজেলায় কার্যক্রম চলছে।

এর মধ্যে ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা ও তেরখাদা ৬টি উপজেলা (সম্পূর্ণ) এবং রূপসা ও দিঘলিয়ার উপজেলার (আংশিক) ৫৯টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় রয়েছে।

সদর দপ্তরসহ চারটি জোনাল অফিসের আওতায় বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন রয়েছে ৫ হাজার ৭১ কিলোমিটার। বর্তমানে জেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ৬২ হাজার ৮১১ জন। এরপরও বেশসংখ্যক মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই।

জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ৮৬৬টি গ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে ৮৪১টি গ্রামের গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। 

বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের তেঁতুলতলা এলাকার বাসিন্দা মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়িতে এসেই বিদ্যুৎ লাইন দিয়েছেন। ফলে অফিসে ছুটতে হয়নি। একই সাথে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে না। 

জলমা ইউনিয়নের জামাল ফকিরের ভাই মোঃ কামাল হোসেন জানান, পল্লী বিদ্যুতের লোকেরা ভ্যান নিয়ে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে যায়। কোন ঝামেলা ছাড়াই বাড়িতে থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ।

/এসএস

Comments