যবিপ্রবি

প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের সাথে মতবিনিময়, যবিপ্রবিতে অচলাবস্থা নিরসনের আশা!

প্রকাশিত: ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর জেলা প্রতিনিধি: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অচলাবস্থার নিরসন হতে যাচ্ছে।উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীসহ যশোরের সংসদ সদস্য, সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বসেন।

নিজস্ব সম্মেলন কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যা্ওয়ার নানা ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়ে রোববারের মধ্যে শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন ৮ পৃষ্টার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যের এক অংশে বলা হয়, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যবিপ্রবিকে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে নানা ভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে বাইরে থেকে উস্কানি দিয়ে ছাত্রলীগের নামে পরিবেশ অশান্ত করা হচ্ছে।তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর উপস্থিত প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্যগণ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, আইনীজীবী প্রতিনিধিগণ, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে তাদের মতামত প্রকাশ করেন।

মতবিনিময় শেষে সন্ধ্যায় ভাইস চ্যান্সেলর আনোয়ার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দেবে তা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে মিটিং-মিছিল-সমাবেশসহ সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

একই সাথে শিক্ষকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস মিললে আন্দোলনরত শিক্ষকদের রোববার থেকে ক্লাসে ফিরে যেতেও বলা হয়।

মতবিনিময়সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য, যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন,যশৈার-২ ঝিকরগাছা ও ছৌগাছা আসনের এমপি মেজর জেনারেল (অব) নাসির উদ্দিন, যশোর-৬ কেশবপুর আসনের এমপি ইসমাত আরা সাদেক, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর জেলা পরিষদের সভাপতি সাইফুজ্জামান পিকুল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন প্রমুখ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিনসহ সুধি সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নাজমুল হাসান মুঠোফোনে জানিয়েছেন , শনিবার শিক্ষক পরিষদের সভায় বসবে । সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন কিনা। তবে আশা করছি মতবিনিময় সভার সুপারিশ অনুযায়ী রোববার থেকে ক্লাসে ফিরতে পারব।

কেননা ছাত্রলীগের অসৌজ্যমূলক আচারণের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন মতবিনিময় সভায় দু:খ প্রকাশ করেছেন। ড. নাজমুল হাসান আরো বলেন, র‌্যাগিং বিরোধী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-ও কতিপয় শিক্ষাথীদের মধ্যে চলা পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে গত ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত অচলাবস্থা চলছে যবিপ্রবি শিক্ষা কার্যক্রমে। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই দ্বন্দ্বের খেসারত দিচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের শেখ হাসিনা হলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়রা আজমির এরিনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ড.ইকবাল কবির জাহিদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়কে কেন্দ্র করে কতিপয় শিক্ষক-শিক্ষাথীদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়।

এই ঘটনায় যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল ও শিক্ষক ইকবাল কবির জাহিদের মধ্যে ফোনে কথা কাটাকাটি হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষকের অভিযোগ ছিলো আনোয়ার হোসেন বিপুল মোবাইল ফোনে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। হুমকির প্রতিবাদে ১২ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা।

এদিকে,১৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বিপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন, ও শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ইকবাল কবির জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদকনাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে পাঁচশ’ কোটি ও দশ কোটি টাকার দুইটি মানহানির মামলা করেন যশোর আদালতে।

মামলায় বলা হয়বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ফুটো করে স্পাইরাল করা হয়েছে এবং ক্যালেন্ডারে দেয়া একটি ছবির ক্যাপশানে বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎবার্ষিকীকে ৪৩শ উল্লেখ করে ভুল করা হয়েছে। যা অবমাননার শামিল।

/এসএস

Comments