যশোরে ‘ছেলেধরা’ নিয়ে রোহিঙ্গা আতংক

প্রকাশিত: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১১, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি: রোহিঙ্গা সন্দেহে জনগণ চার নারী পুরুষকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। গতকাল শুক্রবার যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় থেকে তাদের আটক করে কোতয়ালি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

এদিকে যশোরে এখন সর্বত্র ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক স্থান থেকে রোহিঙ্গা আটক হওয়ায় তাদের কথা না বুঝতে পেরে ছেলে ধরা মনে করে আটকে রেখে পুলিশে দেয়া হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে যশোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন সংবাদ শোনা গেছে।

তবে  ‘ছেলেধরা’ বিষয়টি নিছক গুজব বলে দাবি করছে পুলিশ। অনেকে বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গাদের দেখতে পাচ্ছে, আবার মস্তিষ্ক বিকৃত লোকজনও ঘুরছে জায়গায় জায়গায়। এসব লোকজনের কথা এলোমেলো হওয়ায় ছেলে ধরা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

শুক্রবার কোতয়ালি থানা পুলিশ চারটি স্থান থেকে চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে নিয়েছে। যশোরে সদরের চাঁচড়া ফাঁড়ি পুলিশ এদিন সকালে পুলেরহাট বাজার থেকে এক নারীকে আটক করে থানায় নিয়েছে। তিনি নিজেকে রোজেনা ও জহনা নাম বলছেন। বাড়ি পাবনার সাথিয়ায়। স্বামী বা পিতার নাম বলছে এককে সময় একেক রকম।

এসআই লিটন লেবতলা এলাকা থেকে মুক্তার উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়েছেন। এলাকার লোকজন রোহিঙ্গা সন্দেহে ধরে রেখে পুলিশকে সংবাদ দেয়। তিনি নিজেকে কিশোরগঞ্জের কমিরগঞ্জের লোক বলে পরিচয় দিচ্ছিন। কথাগুলো সঠিকভাবে বুঝা যাচ্ছে না। পিতার নাম লেবু মিয়া বলছেন।

এএসআই বিপ্লব হোসেন সঞ্জিত নামে এক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে আসেন। তিনি তার বাড়ি ইন্ডিয়ায় বলে জানাচ্ছেন। তার পুরো কথা এলোমেলো। কোতয়ালি থানা পুলিশ আরো একজন নারীকে থানায় নিয়ে যান। তিনি একজন রোহিঙ্গা। পুলিশ ওই নারীকে রোহিঙ্গা হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানিয়েছেন, চারজনের মধ্যে একজনকে রোহিঙ্গা বলে মনে হচ্ছে। বাকিরা বাংলাদেশি। একেক জনের বাড়ির একেক স্থানে। এদের সকলেই মস্তিষ্ক বিকৃত বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

লোকজন আটক করে পুলিশে সংবাদ দিলে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসছে। আর ছেলে ধরা হিসাবে যা বলা হচ্ছে তা নিছক গুজব। কারোর কোন ছেলে বা মেয়ে শিশু হারিয়ে গেছে বা হারাচ্ছে বা কেউ ধরে নিয়ে যাচ্ছে এমন কোন অভিযোগ হালে পায়নি। ফলে একটা গুজবে ছড়িয়েছে।

এরা আগে মণিরামপুর, রাজগঞ্জ, শার্শা, ঝিকরছারা বাকড়া এলাকায় ছেলে ধরা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেক স্থান থেকে নারী পুরুষকে আটক করে পুলিশে দেয়া হচ্ছে। এরা প্রকৃত পক্ষে কেমন তা বিচার বিবেচনা করা যাচ্ছে না।

বেনাপোলে ছেলে ধরা সন্দেহে ফুল (৬৫) নামে এক রোহিঙ্গা নারীসহ দুই শিশু উদ্ধার করেছে স্থানীয় জনগন। শুক্রবার সকাল ১০ টারদিকে বেনাপোল মাছ বাজারের পিছন থেকে তাকে আটক করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, বেনাপোল মাছ বাজারের পিছনে নাছিরের বাড়ির ভাড়াটিয়া প্রদ্বীপ দাসের ছেলে কুমার (৫) ও আলেক হোসেনের ছেলে মুনছুর (৪) নামে দুই শিশুকে নিয়ে রোহিঙ্গা এক নারী মিষ্টি দিয়ে তাদের ভুলিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনগনের কাছে আটক হয়।

রোহিঙ্গা ওই নারীর কাছে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি চুপ করে থাকেন। পরে তাকে থাপ্পড় মারলে তিনি তার নাম ফুল এবং মিয়ানমারে বলে জানান। পরে বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই আব্দুল লতিফ সেখানে গিয়ে ওই নারীকে আটক করে থানায় নেন।

এরা আগে গত সপ্তাহে ঝিকরগাছায় ছেলে ধারা সেন্দেহে দুই নারী পুরুষকে মারপিট করা হয়। মণিরামপুরের ২০টি গ্রামের এখন ছেলে ধরা আতঙ্গ বিরাজ করছে। অপরিচিত লোকজন বেশি ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে বলে গ্রামবাসি বলছেন।

অনেক গ্রামে মসজিদের মাইকে সকলকে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে। অনেক গ্রাম গ্রামবাসি উদ্যোগি হয়ে মাইকিং করছে। মণিরামপুরের খেদাপাড়া এলাকার একটি মসজিদে মাইকিং করে মুসল্লিদের ছেলে ধরা থেকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। ঝাপা গ্রামের লোকজন রাত জেগে পাহারাও দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এসব বিষয়ে কথা হয় যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আনছার উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেছেন, ছেলে ধরা আতঙ্ক স্রেফ গুজব। এই ধরনের কোন ঘটনা যশোরে ঘটেনি। কোন শিশুকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে রোহিঙ্গা নিয়ে একটা সমস্য আছে।

তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গারা একটি স্থানে থাকতে চাচ্ছে না বলে আমার মনে হয়। তারা মুক্তভাবে কাজ করতে চাইছে। যে কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে তারা। যেখানে সেখানে তারা অবস্থান নিচেছ। তাদের কথাবর্তা কিছুই বুঝতে পারছে না সাধারণ মানুষ। যে কারণে সন্দেহের বসত তাদের ‘ছেলে ধরা’ বলা হচ্ছে।

তিনি উদাহারণ টেনে বলেন, তিনদিন আগে ঝিকরগাছায় যে নারীকে মারপিট করা হলো তিনি একজন নারী শ্রমিক। তার মস্তিষ্কে সমস্যা থাকতে পারে। তিনি একটি বাড়ির সামনে দাড়িয়ে ছিলেন। ওই এলাকার লোকজন ছেলেধরা সন্দেহে তাকে মারপিটে রক্তাক্ত জখম করে। এটা অন্যায়।

কোন কিছুর আগেপরে না বুঝে সাধারণ মানুষ একটি নিরীহ নারী বা পুরুষকে রক্তাক্ত জখম করবে এটা ঠিক না। কারোর সন্দেহ হলে তিনি নিকটস্থ পুলিশ ক্যাম্প, ফাঁড়ি, তদন্তকেন্দ্র বা থানায় সংবাদ দিতে পারেন।

তিনি আরো বলেছেন, ছেলে ধরা আতঙ্ক ষ্রেফ গুজব। এটার কোন সত্যতা নেই। কোন মানুষের কোন ধরনের সন্দেহ হলে তিনি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করবেন। দয়া করে কাউকে অন্যায় ভাবে আঘাত করবেন না।

এসকে/

Comments