জঘন্যতম ও ঘৃণিত বড় ‘তিন’ গোনাহ

প্রকাশিত: ১:১৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০১৯

মুহাম্মদ বিন নূর
আলেম ও লেখক

মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি বর্ণিত আদেশ-নিষেধের পরিপন্থি করা হলো গোনারে কাজ। যেখানে মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ আছে সেসব বিষয়েই মূলত আল্লাহ তাআলা মানুষকে আদেশ করেছেন। আর যেসব বিষয়ে দুনিয়া ও আখিরাতে মানুষের অকল্যাণ নিহিত সেসব বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে।

গোনাহের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছোট বড় তারতম্য রয়েছ। কিছু গোনাহের ব্যাপারে রয়েছে কঠোর ধমক ও সতর্কতা। রাসুল সা. এর পক্ষ থেকেও এসেছে এমন নির্দেশনা। কিছু গোনাহকে স্বয়ং রাসুল্লাহ স. বড় গোনাহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

একবার হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জানতে চাইলেন যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সবচেয়ে বড় গোনাহ কী? অতঃপর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদিসটি বর্ণনা করেন-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে বড় গোনাহ কোনটি? তিনি বললেন

কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতপর তিনি বললেন, তারপর কোনটি? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনতোমার সঙ্গে খাবে, ভয়ে সন্তানকে হত্যা করা। তিনি আবার বললেন, তারপর কোনটি? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনতোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে জিনা (ব্যভিচার) করা।

তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার সত্যতা ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন– ‘আর যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহকে ডাকে না। (বুখারি)

প্রথম কথা হলো গোনাহ তো গোনাহ-ই। ছোট-বড় বলে কোনো তারতম্যের সুযোগ নেই। ছোট গোনাহের জন্যও যদি কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর রহমত সরে যায় তবে উপায় নেই। দোযখের অগ্নিকুণ্ডে জ্বলতে হবে। আর দোযখ বা জাহান্নামের সর্ব নিম্ন শাস্তিও যদি কপালে থাকের তাও সহ্য করার মতো শক্তি কোনো প্রাণীর নেই। সুতরাং ছোট গোনাহ বলে কোনো গোনাহকে অবহেলা করার সুযোগ নেই।

তারপরও যেসব গোনাহের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে সেসব মোটেও করা যাবে না। অন্যান্য গোনাহ থেকেও বেঁচে থাকার সাধ্যমতো চেষ্টা করতে হবে। এরমধ্যে আলোচ্য হাদীসে রাসুল সা. স্বং কয়েকেটি গোনাহের কথা বলেছেন যেগুলো বড় গোনাহ। সিরিয়াল ক্রমের প্রথমেই শিরকের কথা এসেছে। শিরক হলো আল্লাহ তাআলার ক্ষমতা বা গুণের সাথে অন্য কারো সাদৃশ্য বা কাউকে সমকক্ষ সাব্যস্ত করা।

শিরকের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিশ্চয়েই আল্লাহ তাআলা শিরকের গোনাহ তাওবা ছাড়া ক্ষমা করবে না। অন্যান্য গোনাহ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। অর্থাত এমন অনেক গোনাহ আছে যা অন্যান্য ভালো কোনো  আমলের উসিলায় আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিতে পারেন কিন্তু শিরকের গোনাহ তাওবা ছাড়া মৃত্যুবরণ করলে আর রক্ষা নেই।

দ্বিতীয়ত, হত্যা করা। একজন মানুষ হত্যা করাকে রব্বে কারীম গোটা দুনিয়ার সকল মানুষকে হত্যা করার সাথে শামিল করেছেন। মানুষ হত্যা করা কত বড় অন্যায় তা মানুষের প্রতিক্রিয়াতেই সহজে অনুমেয়। হত্যার শাস্তিও হত্যা। অর্থাত প্রাণের বদলে প্রাণ। এটাই আল্লাহর আইন। যে পাপের জন্য দুনিয়াতেই প্রাথমিক ক্ষমা নেই আল্লাহর পক্ষ থেকে। বরং প্রাণ দিয়ে তার শাস্তি শুরু মৃত্যুর পরে সেই পাপের শাস্তি কী হতে পারে তা কল্পনাতীত। অথচ আজকাল চারিদিকে শুধু হত্যা আর লাশের সমাহার।

ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশ্য ও গুপ্ত হত্যা চলছেই সেই সাথে সামাজিক-রাষ্ট্রীয়ভাবেও সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ডও ঘটছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। আলোচ্য হাদীসে রিজিকের ভয়ে সন্তান হত্যা করার কথাও বলা হয়েছে। এটা কল্পনাতীত বর্বতা হলেও বর্তমান সমাজে এর আধুনিক মোড়কে রমরমা বানিজ্য চলছে। প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়ে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এটা প্রমোট করা হয়।

অধিক সন্তান দূর্ভিক্ষ, দূর্দশা অভাবের কারণ বুঝিয়ে মানুষকে আজকাল ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই সন্তান হত্যা করায় উদ্বুদ্ধ করা হয়। মায়ের উদরে সন্তান আসতে না দেয়াটাও তো জন্মের আগে হত্যার শামিল! কারো আবার গর্ভে সন্তান আসার পর নানান অযুহাতে গর্ভপাতের মতো ঘৃণ্যকর্মও ঘটে।

তৃতীয়ত, প্রতিবেশির স্ত্রীর সাথে যিনা করা। এটি যে সামাজিক বিশৃঙ্খলার নিকৃষ্টতম উদাহরণ তা আকল সম্পন্ন সব মানুষই জানে। কিন্তু তারপরও এসব ঘটে। এটা এমন একটি গোনাহ যার কারণে ব্যক্তি নিজেও লজ্জিত হয়। অনেক হত্যা করা বড় পাপ। মারপিট করা তার পূর্ব প্রস্তুতি। কিন্তু ওসব করেও অনেক পুরুষ নিজের অপরাধ অপরাধ না ভেবে নিজেকে বীর ঘোষণাও করে। কেউ কেউ তাকে সমর্থনও করে।

এরমানে সেটা বৈধ তা নয়। (এর আলোচনা উপরে হয়েছে)। কিন্তু সেই তুলনায় যিনা ব্যভিচার এমন একটি লজ্জাকর গোনাহ যা গোনাহকারী ব্যক্তিকেও লজ্জিত এবং নিঃসঙ্গ করে দেয়। যিনাকারীকে আপনজনরাও ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে দেয়। এটি সামাজিকভাকেও একটি চরম ঘৃণিত এবং লাঞ্চিত হওয়ার মতো গোনাহ। আর সেটা যদি হয় পরস্ত্রীর সাথে তবে তো ওই নারীর স্বামীর আক্রোশও জমা হয় যিনাকারী নারী ও পুরুষের প্রতি।

সামাজিক ঘৃণ্যতা বিবেচনা করলেও রাসুলে আকরাম সা. এর বড় গোনাহের সিরিয়াল বর্ণনায় এটা চরম নিকৃষ্টতম গোনাহ।

প্রিয় রব্বে কারীম, মহান আল্লাহতা আলালা আমাদেরকে এসব মারাত্মক, জঘন্যতম এবং ঘৃণিত গোনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার তাওফিক দিন।

/এসএস

Comments