বগুড়ায় শীতকালীন সবজির বাজারে ধস!

প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০১৯

বাদশা আলম, বগুড়া প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলের সবজি খ্যাত বগুড়ায় এ বছর শীতকালীন সবজির বাজারে ধস নেমেছে। প্রায় প্রতিদিনই কমছে সবজির দাম। এক্ষেত্রে বাজার থেকে পাইকাড়রা সস্তায় কিনে বেশী দামে বিক্রি করলেও উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকের ঘরে।

তবে অতি কষ্টে উৎপাদন করা এসব সবজির দাম কৃষকরা ভোগ করতে না পারলেও কয়েক হাত বদলের মাধ্যমে এই সবজি সাধারণ মানুষকে কিনতে হচ্ছে তিন গুণ দামে।

উত্তরাঞ্চলের সবজির বৃহৎ মোকামখ্যাত বগুড়ার মহাস্থান হাট ও শেরপুরের ফুলবাড়ী সবজি বাজার ঘুরে শীতকালীন সবজির বর্তমান বাজারমূল্য সম্পর্কে এমন তথ্য জানা যায়।

রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, সিলেট, টাঙ্গাইল, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ছাড়াও জেলা এবং উপজেলা শহর থেকে ব্যাপারীরা আসেন এ হাটে। কিনে নেন বছরের সব ধরনের সবজি।

এছাড়াও বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় ১২ মাসই বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন করে থাকেন কৃষকরা। তবে একটু বেশি লাভের আশায় কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষকে তুলনামূলক অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ, গাবতলী, নন্দীগ্রাম উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ করা হয়। এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলাও কমবেশি সবজি চাষ করেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গত শনিবার (৫ জানুয়ারি) বগুড়ার সবচেয়ে বড় সবজি বাজার মহাস্থান হাট ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। জমিতে চাষ করা টাটকা সবজি বিক্রি করতে এসে অনেকটা বাধ্য হয়ে সস্তায় বিক্রি করে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা।

মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা যায়, পুরো হাটের জায়গা ছাপিয়ে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের দুই পাশ ও শিবগঞ্জ উপজেলার সদরে যাওয়ার প্রবেশ পথে শুধু সবজি আর সবজি। দূর-দুরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা ছোট-বড় ট্রাক নিয়ে এসেছেন এ হাটে। আবার অনেকেই
প্রয়োজনীয় সবজি কেনার পর এখান থেকেই ট্রাক ভাড়া করে সেই সবজি নির্ধারিত গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন।

মহাস্থান হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা অভিরামপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম, চকরামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল খালেক ও জামাল উদ্দিন জানান, ফুলকপি ৫ টাকা, সিম ও বেগুন ৫ টাকা, কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এই দামে সবজি বিক্রি করে হাটে আনতে ভ্যান ভাড়া এবং জমি থেকে ফসল উঠানোর খরচ হচ্ছে না। তাছাড়া বাধা কপি প্রতি পিছ ৪ টাকা, গাজর ১০ টাকা কেজি, টমেটো ৬ টাকা, বরবটি ৫টাকা, আলু ১৭ টাকা, মুলা ৫টাকা, কাচা মরিচ ১০ টাকা এবং পিয়াজ ১৭ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি
হচ্ছে।

কৃষক তাদের সবজির ন্যায্য দাম না পেলেও খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুন বেশী দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকাড়রা সস্তায় কিনে বেশী দামে বিক্রি করে পোয়াবারোতে পরিণত হলেও কৃষকদের মাথায় হাত পড়ছে বলে সচেতনমহলেরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

খুচরা সবজি বিক্রেতারা দ্বিগুন মুল্যে সবজি বিক্রির কারণ হিসেবে বলেন, পরিবহন খরচ
ছাড়াও পাইকারী হাটে সবজি কিনতে এবং খুচরা বাজারে সবজি বিক্রি করতে দুইবার
খাজনা দিতে হয়। এছাড়াও কাচা সবজি পচনশীল হওয়ায় তাদের অনেক সবজি ঘাটতি হয়ে থাকে।

মহাস্থান সবজি হাটের ফড়িয়া ব্যাবসায়ী আমিরুল ও আব্দুল খালেক জানান, তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনলেও অতিরিক্ত খাজনা, পরিবহন খাতে অধিক ব্যয় ছাড়াও তাদের লাভ্যাংশ রাখার কারনে খুচরা বাজারে দুই থেকে তিন গুন দামে সবজি বিক্রি করতে হয়।

তারা জানান, মহাস্থান হাট থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক সবজি রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। মহাস্থান হাটের সবজির আড়ৎ মেসার্স সততা বাণিজ্যালয় এর স্বত্বাধিকারী আব্দুল বারী বলেন, এ অঞ্চলে ব্যাপক সবজি চাষ হয়ে থাকে। এখন ভরা মৌসুম একারণে প্রতিদিনই দাম কমছে। কাঁচামাল হওয়ার কারণে কৃষক অনেক সময় বাধ্য হয়েই সস্তায় সবজি বিক্রি করে থাকে।

এদিকে সোমবার সকালে বগুড়ার শেরপুরের ফুলবাড়ীর পাইকারী সবজীর বাজারে আসা কৃষক মমিনুল ইসলাম, আব্দুল মালেক ও ছফের জানান, ফুলকপি ৮ টাকা, সিম ও বেগুন ৮ টাকা, কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এই দামে সবজি বিক্রি করে হাটে আনতে ভ্যান ভাড়া এবং জমি থেকে ফসল উঠানোর খরচ হচ্ছে না। বারোদুয়াড়ী হাট ঘুরে দেখা গেছে বাধা কপি প্রতি পিছ ৪ টাকা, গাজর ১৪ টাকা কেজি, টমেটো ১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি
হচ্ছে।

এছাড়াও বরবটি ৭ টাকা, আলু ১৭ টাকা, মুলা ৬ টাকা, কাচা মরিচ ২০ টাকা এবং পিয়াজ ১৮ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় পুরো শীত মৌসুমে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এবার সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করায় মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ৩লাখ মেট্টিক টনেরও বেশী সবজির ফলন হবে।

/এসএস

Comments