দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ সংকটে থাকা ছোট ব্যাংকগুলো একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে: গভর্নর ekushnuews24.com ekushnuews24.com প্রকাশিত: ১১:৫৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪ ড. আহসান এইচ মনসুর দেশের ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকটে বেশি কিছু ঝূঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে গেল কয়েক মাস ধরেই। এ অবস্থায় সংকটে থাকা ছোটো ব্যাংকগুলোকে বড় এবং সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। গভর্নর বলেন, ‘তারল্য সংকটে থাকা কিছু ছোট ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগ মালিকানা এখন সরকারের অধীনে। তাই সরকারের ক্ষেত্রে একীভূত করা সহজ হবে। তবে, বাস্তবতা বুঝে আমরা কাজ করব।’ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর এসব কথা বলেন। ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ৯টি ব্যাংকের অডিট করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। আমরা ৩টি করে ব্যাংকের অডিট করবো। এ প্রক্রিয়ার শুরুতেই ইসলামী ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসব ব্যাংকের প্রতিটি ঋণ অডিট করা হবে এবং সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা হবে।’ গভর্নর জানান, দেশের বেসরকারি খাতের নয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ছোট ব্যাংক আছে; যেগুলো বেশ তারল্য সংকটে পড়েছে। এদের বেশিরভাগই শরীয়াহ ধারায় পরিচালিত। এসব ছোট ছোট ব্যাংক একীভূত হতে পারে। তবে বর্তমানে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর নিট ডিপোজিট ইতিবাচক রয়েছে বলেও জানান তিনি। সমস্যায় থাকা ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহক টাকা তুলে অন্য ব্যাংকের রাখছে জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যেসব ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হচ্ছে, তারা তারল্য সংকটে পড়ছে। আবার যাদের কাছে রাখা হচ্ছে তাদের তারল্য বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমরা গ্যারান্টার হয়ে তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কম থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা দেব। এক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংক টাকা না দিতে পারলে ওই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধ করবে। এখন পর্যন্ত এই স্কিম থেকে কাউকেই টাকা দেওয়া হয়নি। যদি এদের অবস্থা ভালো হয়ে যায়, তাহলে কাউকে দিতেও হবে না। প্রয়োজনবোধে দেবো। যার যত টাকা দরকার সেই অনুযায়ী টাকা দেওয়া হবে। তবে, এসব ব্যাংকে এখন ক্যাশ-ফ্লো ভালো রয়েছে। গত কয়েকদিনে ব্যাংকগুলোর তারল্য উদ্বৃত্ত আছে ৮১০ কোটি টাকা। আশা করি সমস্যা সমাধান হবে।’ এদিকে বাড়তে থাকা খাদ্যপণ্যের তথা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফের পলিসি রেট বা নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি সপ্তাহে এ সুদহার বাড়ানো হবে। পর্যায়ক্রমে তা আগামী মাসেও বাড়বে বলে জানিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৭৩ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া গত জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১.৬৬ শতাংশ হয়, যা ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। গেল অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি ছিল। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০২২ সালের মে মাস থেকে বেশ কয়েকবার সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পলিসি রেট বাড়াচ্ছে। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়েছে এবং ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় আটটি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ। এগুলো হলো, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল তারা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এর মধ্যে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা আটটিসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন করে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্ষদ পুনর্গঠন করা অন্য তিন ব্যাংক হলো, আইএফআইসি, ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংক। এরমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দখলে ছিল আইএফআইসি ব্যাংক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এছাড়া এক্সিম ব্যাংকের দখলে ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। গত এপ্রিলে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার নীতিমালা জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন বেশ কিছু ব্যাংক একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তও নেয়। ৫টি সরকারি ব্যাংক ও ৫টি বেসরকারি ব্যাংক একীভূত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তখন। Comments SHARES অর্থ-বাণিজ্য বিষয়: ড. আহসান এইচ মনসুরবাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরব্যাংক একীভূত করা হবেব্যাংক একীভূতকরণ