২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: ১:০৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০১৮

ডেস্ক: পেট্রোবাংলার কাছে বকেয়া ১৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকার ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায়ে গত কয়েক বছর থেকেই নানামুখী উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কার্যত ফল শূন্য।

গত পাঁচ বছর বা তারও আগের ওই বকেয়া অর্থের কোন টাকাই এখনো আদায় হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে অর্থ মন্ত্রণালয় বকেয়া ওই টাকার মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা দিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা পেট্রোবাংলার ভর্তুকি মেটাতে ব্যয় হতে পারে। ফলে চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওই অর্থ পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে

। এমন পরিস্থিতিতে সরকার সম্প্রতি গ্যাসের ওপর সব ধরনের সম্পূরক শুল্ক মওকুফ করেছে। এর ফলে চলতি অর্থবছর এ খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হবে।

এদিকে বিশাল এ বকেয়া রাজস্ব পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাতে যাচ্ছে এনবিআর। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া দেশে ফিরলে এ চিঠি পাঠানা হতে পারে। বকেয়া এ অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে বৃহত্ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) অফিস সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে।

এলটিইউ-ভ্যাটের কমিশনার মুহাম্মদ মুুবিনুল কবীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বকেয়া অর্থ পেট্রোবাংলার অনুকূলে বরাদ্দ প্রদানে অর্থ বিভাগকে এনবিআর অনুরোধ জানালে ওই রাজস্ব আদায় কার্যক্রম ফলপ্রসু হবে। ফলে তা এলটিইউ-ভ্যাট ও এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে।

এর আগে বকেয়া এ অর্থ পরিশোধে পেট্রোবাংলাকে অর্থ বরাদ্দ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়। এ অর্থ পরিশোধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রায় দেড় বছর আগে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও এখন পর্যন্ত কোন অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি।

সূত্র জানিয়েছে, ইস্যুটি নিয়ে সম্প্রতি এলটিইউ-ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাক্ষাত্ করেছেন। ওই সময় চলতি অর্থবছরে অর্থমন্ত্রণালয় তিন হাজার কোটি টাকা আর পেট্রোবাংলা এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই অর্থ আদায়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া একাধিক আলোচনায় পেট্রোবাংলার কাছ থেকে বকেয়া এ অর্থ আদায়ে তাদের চেষ্টার কথা জানিয়েছেন। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায় করতে হবে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আদায় হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। সেই বিবেচনায় গত অর্থবছরের বছরের আদায়ের ওপর বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় প্রায় ৪৩ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির (আইওসি) কাছ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ ও সরবরাহের বিপরীতে ভ্যাটসহ অন্যান্য শুল্ক-কর মিলিয়ে ৯২ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এই হিসেবে ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছরে রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। কিন্তু আলোচ্য সময়ে পেট্রোবাংলা ওই অর্থ পরিশোধ করেনি। পরবর্তীতে এনবিআরের আওতাধীন বৃহত্ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ-ভ্যাট) এক অনুসন্ধানে এ অনিয়ম ধরা পড়ে। এই অর্থ পরিশোধের জন্য তাগিদ দেয় এনবিআর। এর মধ্যেই নতুন করে বকেয়া পড়তে থাকে।

২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ৪ হাজার ৮৭ কোটি টাকা এবং ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত সময়ে আরো ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেনি। সব মিলিয়ে এনবিআরের পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।

এনবিআরের দাবি, গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করলেও পেট্রোবাংলা এ অর্থ পরিশোধ করেনি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এনবিআর, পেট্রোবাংলা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়। বেশ কয়েকটি সভাও হয়েছে।

সর্বশেষ গত বছরের মার্চে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বকেয়া ভ্যাট পরিশোধে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অর্থাত্ অর্থমন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলার অনুকূলে ভর্তুকি দেবে এবং ওই অর্থ পেট্রোবাংলা এনবিআরকে পরিশোধ করবে। ইত্তেফাক।

/আরএ

Comments