স্বামীর শোকে পৃথিবী ছাড়লেন পাইলট আবিদের স্ত্রী

প্রকাশিত: ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০১৮

একুশনিউজ : নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ইউএস-বাংলার পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন আফসানা মারা যান।

রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালের যুগ্ম পরিচালক প্রফেসর ড. মো. বদরুল আলম মণ্ডল বলেন, ‘আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় আফসানা খানমকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।’

স্বামী পাইলট আবিদ সুলতানের মৃত্যুর খবরে গত ১৮ মার্চ স্ট্রোক করেন আফসানা খানম। এরপর থেকেই হাসপাতালটির আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে গত তিন দিন তিনি লাইফসাপোর্টে ছিলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার আফসানা ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ বলে শোনা যাচ্ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা বলেছিলেন- তা এখনও সম্পূর্ণভাবে বলা যাবে না। তবে তার পরিস্থিতি অবনতির দিকে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার মতো অবস্থায়ও নেই।

এর আগে, গত সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের পর তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সে সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার অবস্থা যেকোনো সময় আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। উন্নতির সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ওইদিন বিকেলে আগারগাঁওয়ের নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান উজ্জ্বল কুমার মল্লিক সাংবাদিকদের কাছে আফসানা খানমের শারীরিক অবস্থার সবশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, অতিরিক্ত টেনশনের কারণে আফসানা খানমের রক্তনালী ও ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে ছিল না।

গত রবিবার রাজধানীর উত্তরার বাসায় স্ট্রোক করার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে আগারগাঁওয়ের নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়

এদিন অধ্যাপক বদরুল আলম বলেন, আজকের পরিস্থিতি ও গত কয়েক দিনের তুলনায় খারাপের দিকে। বিশেষ করে ওনার কিডনি ফাংশন কিছুটা কমে আসছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য প্যারামিটারও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চিকিৎসা চালিয়ে যাব, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ভেন্টিলেশন সাপোর্ট নিতে পারেন।

তিনি বলেন, কিডনির যে আউটপুট বলি আমরা, সেটি ক্রমান্বয়ে কমছে। ওনার অবস্থা অবনতির দিকে। কিন্তু ভেন্টিলেশন উইথড্র করা বা সব সাপোর্ট উইথড্র করার মতো নয়। আগামীকালও চিকিৎসকরা যারা জড়িত, তা দেখবেন। আফসানার চিকিৎসায় গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের পরিচালক অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ বলেছেন, আফসানার ডায়াবেটিস ছিল। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত ছিলেন।

আফসানা খানমের অবস্থা সংকটাপন্ন এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে তাঁর মাথার খুলি আলাদা করে রাখা হয়েছে—গত মঙ্গলবারই এমন তথ্য দিয়েছিল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। তখন থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে প্রি-কোমায় ছিলেন। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ সকালে তিনি না-ফেরার দেশে চলে গেলেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ অবতরণের সময় কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস২১১ ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ক্রুসহ ৫১ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর বিমানটির প্রধান পাইলট আবিদ আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পর দিন সকালে কাঠমান্ডুর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।মা আফসানা খানমকে হাসপাতালে রেখেই আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বাবার লাশ আনতে গিয়েছিল এই দম্পতির একমাত্র ছেলে তানজিদ সুলতান মাহি।

আবিদের এমন করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি স্ত্রী আফসানা। স্বামীকে হারিয়ে কখনও বাকরুদ্ধ কখনও অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন- তার স্বামী মারা যাননি, সবাই মিথ্যা কথা বলছেন, আবিদ ফিরে আসবে, আবিদ তাকে সঙ্গে না নিয়ে একা চলে যেতে পারে না- এমন প্রলাপ বকতেন তিনি। স্বামীর শোকে মনস্তাত্ত্বিক চাপে রোববার নিজ বাসায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। এর পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।

এর পর গুরুতর অবস্থায় আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আফসানাকে।

/এসআর

Comments