সরকার নয় গণমাধ্যমের প্রতিপক্ষ জঙ্গি-রাজাকার ও অপরাধীচক্র: তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২:২০ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০১৮

ডেস্ক: তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, গণমাধ্যম গণতন্ত্রের পরিপূরক এবং সরকার গণমাধ্যমের নয়। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিপক্ষ হচ্ছে জঙ্গি, রাজাকার, মাফিয়া, কালোবাজারি ও অপরাধীচক্র। এদের দমনে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তথ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহবান জানান। খবর বাসস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গণমাধ্যমের সংকোচনে বিশ্বাসী নয় এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার ও গণমাধ্যমের পরিপূরক সম্পর্ক বজায় রয়েছে, যা গণমাধ্যমের বিকাশ ত্বরাণ্বিত করছে। কিন্তু মালিকপক্ষের ভূমিকা কতটা মুক্তগণমাধ্যমের সহায়ক তা বিশ্লেষণ করে সাংবাদিকদের পেশাজীবি সংগঠন থেকে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন ও মূল্যায়ন আশা করে সরকার।

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের নির্যাতনকারীর কোন দায়মুক্তির বিধান দেশে নেই এবং ভূমিদস্যু, দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক ডাকাতসহ ক্ষমতা অপব্যবহারকারী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লেখার পূর্ণ স্বাধীনতা বিদ্যমান। এসকল বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সরকারকে তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করেছে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু খন্ডিত, অসত্য বা গুজব ছড়ানো কখনো সাংবাদিকতা নয়।

হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারের ভাষ্য না নিয়ে অনেক বিদেশি সংস্থার প্রতিবেদনই একতরফা, তথ্যবিভ্রাটে ভরা ও ক্ষেত্র বিশেষে উদ্দেশ্যমূলক বলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, সামরিক শাসন সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিদের জঞ্জাল যেমন এখনো গণতন্ত্রে সক্রিয়, ঠিক তেমনি গণমাধ্যমের ভেতরও ঐ সামরিক-সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদীদের অনুচরচক্রও বর্তমান। এদের কারণেই গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম উভয়েই এখনো হুমকির মুখে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বাস করে, আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। সামরিক ও স্বৈরশাসকদের আমলে খুনী ও অপরাধীদের যে দায়মুক্তির বিধান করা হয়েছিল, শেখ হাসিনার সরকারই তা বাতিল করেছে, অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করেছে। সুতরাং এটা প্রমানিত যে, আমাদের সরকার কখনও বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে না। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও হয়েছে উন্মুক্ত আদালতে।

সাংবাদিকবৃন্দ যাতে কোনোভাবেই অনর্থক হয়রানির স্বীকার না হন, সেজন্য সিআরপিসি বা দন্ডবিধিও সংশোধন করা হয়েছে উল্লেখ করে হাসানুল হক ইনু বলেন, মানহানির মামলায় তৎক্ষণাৎ প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিধান বাতিল করা হয়েছে। এখন এ ধরনের মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিককে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে পূর্বে জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু দেশি নয়, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরাসহ বিদেশি চ্যানেলগুলোও এখানে স্বাধীনভাবে সম্প্রচারিত হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।

জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাংবাদিক সোহরাব হাসান।

এদিকে বিকেলে তথ্যমন্ত্রী প্রেস ক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এলামনাই এসোসিয়েশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: শংকা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে প্রণীত হচ্ছে না। তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লব দেশ, সমাজ তথা সমগ্র বিশ্বকে যে কাঁচের ঘরে রুপান্তর করছে, সেখানে শিশু-নারী, ব্যক্তি-সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই এ আইন।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনো মতামত দমন বা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বন্ধের জন্য নয়। এবং এ আইনের আওতায় অভিযুক্ত সাংবাদিকদের বিষয়টি আমরা তৎক্ষণাৎ নজরে এনে জামিনসহ হয়রানি থেকে রক্ষার পদক্ষেপ নিয়েছি, গণমাধ্যমে তার প্রতিফলনও ঘটেছে।

প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বক্তব্য রাখেন।

/এমএম

Comments