সবার দৃষ্টি অক্টোবরে নির্বাচনের সিডিউল ও বিএনপির সম্ভাব্য আন্দোলন নিয়ে

প্রকাশিত: ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সবার দৃষ্টি অক্টোবর মাসের দিকে।

বিদ্যমান সংবিধানের সময়রেখা এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনের সিডিউল অক্টোবরেই ঘোষণা হওয়ার কথা। বিএনপিসহ দলটির জোটসঙ্গীদের দেয়া বার্তা অনুযায়ী দাবি আদায়ে তারাও সম্ভাব্য আন্দোলনের ছক আঁকছেন এই মাসটিকে সামনে রেখেই।

যার কারণে রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র এখন আলোচনার কেন্দ্রে অক্টোবর। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সবখানে কান পাতলেই শোনা যায়, রাজনীতির মোড় বদলের মাস হবে অক্টোবর। সামগ্রিক এই জল্পনা-কল্পনার ছায়া পড়েছে প্রশাসনেও। প্রশাসনের সদরদপ্তর সচিবালয়ে এ-দপ্তর থেকে ও-দপ্তরে যাওয়া-আসা করলে গতি শ্লথ হয়ে আসার চিত্র পরিস্কার দেখা যায়।

রাজনীতির অলি-গলিতে ঢুঁ মারলে এবং অফিস-আদালত ও দোকানপাটে সাধারণ্যের আলোচনায় একটু কান দিলেই ঘুরেফিরে শোনা যায় অক্টোবরের কথা। নানা ইস্যুতে তক্কাতক্কির পরে যেই পয়েন্টে এসে কমবেশি মতৈক্য হচ্ছে সেটা হলো- কী হতে যাচ্ছে, কী ঘটছে; গত কয়েক বছরে জমা হওয়া এরকম নানা প্রশ্ন আর রাজনীতির জটিল সমীকরণের জট খুলতে শুরু করবে এই মাসে। কেউ দেখছেন এটিকে বাঁক বদলের মাস হিসেবে।

ইসির দেয়া আভাস অনুযায়ী অক্টোবরের শেষদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সিডিউল ঘোষণা করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাফ সাফ বলে দিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে, কেউ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।

আর সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ও দলটির মিত্ররা বলছে, তফসিলের আগেই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সোমবারও বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, দেশে কোনো নির্বাচনও হবে না।

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তারা দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো কোনো নেতার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, যদি আন্দোলনের পথে যায় বিএনপি তাহলে সেটি শুরু হতে পারে অক্টোবরেই।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কয়েকদিন আগে ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, বিএনপি এ পর্যন্ত কোনো আন্দোলন সফল করতে পারেনি। নয় বছরে নয় মিনিটও তারা রাস্তায় দাঁড়াতে পারেননি। নেতারা ডাক দিয়ে নিজেরা ঘরে এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখেন। নিজস্ব শক্তিতে আন্দোলন করার সাহস ও সক্ষমতা কোনাটিই তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আগামীতেও আন্দোলন করার মতো মুরদ বিএনপির নেই।

ওবায়দুল কাদের এটাও বলেন, আন্দোলনের নামে যদি আবারও মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়, দেশে নৈরাজ্য বা অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয় তাহলে তাহলে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে সেটির সমুচিত জবাব দেয়া হবে।

বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা না আসুক, সেটিকে এখন আর তেমন গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের পথনকশা অনুযায়ী ডিসেম্বরে নির্বাচনের পথেই হাটছে সরকার। অন্যদিকে, নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে বিএনপি এখনও সিদ্ধান্তহীন। বিএনপির নেতারা একবার বলছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে যাবেই, এবার আর ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেয়া হবে না’। আবার বলছেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ বা সহায়ক সরকার গঠন ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’।

দলটির নেতারা কখনও এ-ও বলছেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না’।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিএনপি নির্বাচনে যাবে কী যাবে না; নির্বাচন না আন্দোলনের পথে হাটবে বিএনপি; বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন না-কি এখানে সরকার কিছুটা নমনীয় হতে পারে; বিএনপির সাথে সরকারের আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সম্ভাবনা আছে কী নেই- এরকম মিলিয়ন ডলারের প্রশ্নের জবাব স্পষ্ট হতে শুরু করবে অক্টোবরে।

এছাড়া জোট-মহাজোটের রাজনীতির চলমান গতিপ্রবাহ কোনদিকে মোড় নেয়, কে কার বন্ধুবলয়ে যুক্ত হয়, কে বন্ধুবলয় থেকে বেরিয়ে অন্যত্র হাত মেলায় এবং জোট-রাজনীতির ভাঙ্গাগড়ার একটা পরিণত বা মোটামুটি চূড়ান্ত রূপও দেখা দিতে পারে এই মাসে।

সরকারের মন্ত্রিসভায় যারা রয়েছেন তারা আসছে অক্টোবরের ক্ষণ গুনছেন বিশেষভাবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ইঙ্গিত অনুযায়ী নির্বাচনকে সামনে রেখে অক্টোবরে মন্ত্রিসভা ছোট করে আনা হবে। সেই মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, কারা বাদ পড়ছেন- এনিয়ে মন্ত্রীদের মধ্যে ও সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ে-মন্ত্রণালয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।

এদিকে, শেখ হাসিনার সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ সময় হওয়ায় এবং এ মাস শেষেই নির্বাচনকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হওয়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে প্রশাসনেও এখন চলছে গোছগাছের পালা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, যেহেতু অক্টোবর থেকে শুরু করে পরবর্তী সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না, মন্ত্রণালয়গুলো শুধু রুটিনকাজ সম্পাদন করবে- সেজন্য নতুন করে তেমন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে প্রশাসনিক কাজকর্মে এক ধরনের ঢিলেঢালা ভাব দৃশ্যমান। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সরকারের গৃহীত মেগাপ্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নকাজে।

Comments