রোহিঙ্গা ফেরতে সহযোগিতার আশ্বাস চীনের

প্রকাশিত: ১০:৫০ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে চীন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংয়ি এই আশ্বাস দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি’র আমন্ত্রণে ২৮ জুন থেকে ৩০ জুন তিন দিনব্যাপী চীন সফর করছেন। বৈঠককালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীন পক্ষকে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা চাইলে এ আশ্বাস দেয়া হয়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিতাড়িত রোহিঙ্গারা এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত যে, তারা তাদের ফেরার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা চায়। তারা তাদের নিজেদের মূল গ্রামে ফিরে যেতে চায় কোন আশ্রয় কেন্দ্রে নয়। তাদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেয়া আবশ্যক।’

বাংলাদেশ এসব স্থানচ্যুত মানুষের দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি ও জোরপূর্বক স্থানচ্যুত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে মিয়ানমার সরকারকে উৎসাহিত করায় চীনের সক্রিয় সহায়তা চেয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন এবং সেখানে গৃহনির্মাণ এবং অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে সেখানকার পুনর্বাসন পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তার মাধ্যমে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে তার দেশের পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

উভয় পক্ষ ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট লি জিনপিংয়ের ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সফরকালে স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অর্জিত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।

এছাড়া চীনের প্রেসিডেন্টের সফরকালে স্বাক্ষরিত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্জিত অগ্রগতিও আলোচনা করা হয়। মাহমুদ আলী এসব প্রকল্প চূড়ান্তকরণ ও দ্রুত বাস্তবায়নে তার প্রতিপক্ষের সহায়তা কামনা করেন।

বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মতো সহযোগিতার অন্যান্য বিষয় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।

উভয় পক্ষ দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ে এবং জনগন পর্যায়ে অব্যাহত আলোচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে এবং অঞ্চলের অভিন্ন উন্নয়নের জন্য এক সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কিশানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন।

চীনা নেতা কিশান বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচীতে অবদান রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো জোরদার ও গভীর করতে তার দেশের অব্যাহত সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগন জাতির পিতার স্বপ্ন হিসাবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশটিকে সোনার বাংলা করতে সঠিক পথেই রয়েছে।

কিশান বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাওয়ায় চীন আনন্দিত। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. ফজলুল করিম উপস্থিত ছিলেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ প্রেসব্রিফিং করা হয় এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে এক মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়। পরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তারা যথা শিগগির সম্ভব মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।

/এমএম

Comments